ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

মহাসংকটে জাতীয় পার্টি

  • আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৪ ০৪:৫০:৩৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৪ ০৪:৫০:৩৬ অপরাহ্ন
মহাসংকটে জাতীয় পার্টি
* হাসনাত-সারজিসের পোস্ট ‘যেই পথে গেছে আপা, সেই পথে যাবে জাপা’
* জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজনের পদত্যাগ
* যে কারণে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি জাপা
* ববি হাজ্জাজ বললেন জাতীয় পার্টি গণহত্যার আসামি


জাতীয় পার্টির (জাপা) দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। জাপার নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালাতে না হলেও রাজনীতিতে দলটির গুরুত্ব কমে গেছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে জাপার। যার সর্বশেষ ফলাফল গত বৃহস্পতিবার জাপার সঙ্গে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি হামলার পর দলটির অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা। ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে জাপা কী পরিবর্তিত পরিস্থিতির রাজনীতিতে টিকে থাকবে নাকি হারিয়ে যাবে। এরইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফি। একে একে আরও নেতাদের পদত্যাগের গুঞ্জন চাউর হচ্ছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
যে কারণে কঠিন পরিক্ষার মুখোমুখি জাপা: রাজনীতিতে মহাসংকটের পড়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে তৃণমূলের মানুষের কাছে পরিচিত জাতীয় পাটি এখন সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। বিশেষ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের মিত্র দল জাতীয় পাটি বিপদের মধ্যে দিন কাটছে। চলমান সময়ে রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরে অপকর্ম করে আসা জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার রোষানলে পড়েছে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। জাপার নেতাকর্মীদের দ্বারা ছাত্রদের মারধরের অভিযোগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে গত শনিবার পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় জাপা। এর বিপরীতে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে পাল্টা হুসিয়ারি দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যায়িত করে জাতীয় পার্টিকে গত শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে না দেয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তিনি বলেন, আমরা বার বার আলটিমেটাম দিচ্ছি যেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করা হয়। তারা বিভিন্ন রূপে ফেরার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতি বর্তমান সরকারের অবস্থান কী আমরা তা জানতে চাই।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টার পদত্যাগ: ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফি। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরের দর্শনা এলাকায় তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় শাফিউল ইসলাম শাফি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিপ্লব বাস্তবায়ন করতে গেলে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে থাকা সম্ভব নয়। তাই ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে জাপার সকল পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করছি। এ সময় বিগত সময়ের সকল ভুল শুধরে পরিশুদ্ধ রাজনীতিতে জাতীয় পার্টিকে আসার পরামর্শ দেন তিনি। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শাফিউল ইসলাম শাফি দীর্ঘদিন ধরে রংপুর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাজ্জাদ রশিদ। গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। একই সঙ্গে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার জাতীয় যুব সংহতি এবং জাতীয় ছাত্র সমাজের চার শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। তবে সাজ্জাদ রশিদ পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ছিলাম। একইসঙ্গে তৃণমূলকে গোছাতে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। দলের দিকে না তাকিয়ে পতিত সরকারের বৈষম্যমূলক নানা আচরণের বিরুদ্ধে সর্বদা নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছি। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দলীয় পক্ষপাতমূলক ও বৈষম্যমূলক কার্যক্রম, পরস্পরবিরোধী ও অসঙ্গতিপূর্ণ রাজনৈতিক নীতিহীন সিদ্ধান্তের কারণে আমি ক্ষুব্ধ। তাই তাদের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এবং চাঁদপুর জেলা সহসভাপতিসহ সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে আমার সঙ্গে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার জাতীয় যুব সংহতি এবং জাতীয় ছাত্র সমাজের চার শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন। মুঠোফোনে স্ব স্ব ইউনিট প্রধানরা সেটি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নুকে একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্যে পাওয়া যায়নি।
ববি হাজ্জাজ বললেন জাতীয় পার্টি গণহত্যার আসামি: শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সরাসরি ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের হুকুম দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি গণহত্যার আসামি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আমি নিজে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের ফোন করে আমাদের সঙ্গে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা উল্টো আমাদের সবক দিয়েছিল হাসিনার গোলামি করার জন্য। এদের নেতারা পুলিশ, র?্যাব, বিজিবিকে উৎসাহিত করেছিল গুলি করে আন্দোলন দমনের জন্য। গতকাল শনিবার মালিবাগ মোড়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম আয়োজিত জাতীয় পার্টির সমাবেশ ঘোষণার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জানা গেছে, ১/১১ পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার। মূলত ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ক্রমেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে জাপার। এ সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরত্ব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দাবি আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাপার এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও মনে করেন গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ যতটা গণতন্ত্রকে নষ্ট করেছে জাপার দায় তার কোনো অংশেই কম নয়। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচন ও অনৈতিক কাজের বৈধতা দিয়েছে জাপা। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর সহানুভূতি হারিয়েছে জাপা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শুরুতে সেনাবাহিনী ও পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপে ডাক পাওয়া জাপার জন্য গুডলাক ছিল। কিন্তু দলটির নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে তারা রাজনীতি থেকে ছিটকে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা জাপাকে ডাকেননি। জবাবে দলটি দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে রংপুরে অবাঞ্চিত করে। জাপার এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ছিল। তারা এও বলছেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। জাপার এখন কোনোভাবেই দ্বন্দ্বে জড়ানো উচিত হবে না। এই পরিস্থিতিতে দলটির উচিৎ সরকার ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির পথ খুঁজে বের করা। রংপুরে জুলাই আগস্টের গণআন্দোলনে জাপার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সেটা কাজে লাগাতে হবে। না হলে জাপা চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এরপর যদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা অন্য কারও সঙ্গে জাপার মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় তাহলে দলটির নেতাকর্মীরা মামলার বেড়াজালে পড়বেন এবং রংপুর ছাড়া আর কোথাও রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। এরআগে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পাটি অফিসে হামলার ঘটনা অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রজনতার নাম দিয়ে একদল লোক এ হামলা চালিয়েছে। নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতা হামলায় অংশ নেন বলেও জি এম কাদের তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তার ধারণা, ২ নভেম্বর কাকরাইলে জাপা যে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল তার রেশ ধরে এ ঘটনা ঘটানো হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের কোনো অপকর্মের দোসর নয়। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে ২৪ সালের নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে যে বয়ান দিচ্ছিলেন সেটাই তুলে ধরেন। তাদের জোর করে ব্ল্যাকমেল করে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে জাপার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২ নভেম্বর জাপা চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ পার্টি নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা। তাদের এমন ঘোষণায় কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হয় কিনা তা নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। যদিও রাতে তারা সেই কর্মসূচি স্থগিত করে। তবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের নেতাদের নামে মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২ নভেম্বর ঢাকায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে গত শুক্রবার জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, গত শনিবার অনুষ্ঠেয় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ স্থগিত করেছে জাতীয় পার্টি। এর আগে রাজধানীর পাইওনিয়ার রোড ও কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। তবে জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি জানান, পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নং ভবন, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করায় জাতীয় পার্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হবে। তবে জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করব। এতে যদি বাধা আসে তবে আমরা তা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করব। কর্মসূচি পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও রাতে তিনি জানান, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কর্মসূচি থেকে ফিরে এসেছি।
যেই পথে গেছে আপা, সেই পথে যাবে জাপা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এবার শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে জাতীয় পার্টিও (জাপা) সেভাবে পালাবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। গত শুক্রবার রাতে প্রায় একই সময়ে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তারা এমন মন্তব্য করেন। হাসনাত ও সারজিস জাপাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘যেই পথে গেছে আপা, সেই পথে যাবে জাপা। নোট: কেয়ামতের সময়ের তওবা কবুল হয় না। কয়েকদিন ধরেই প্রায় মুখোমুখি অবস্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও জাতীয় পার্টি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই জাতীয় পার্টির সমালোচনা করে আসছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টির কারণেই আওয়ামী লীগ ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে পেরেছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন তারা। সম্প্রতি এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের রংপুরে যাওয়ার খবরে লাঠি মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ অবস্থার মধ্যে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার অভিযোগে ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, দেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক সময় জাতীয় পার্টিকে নিজেদের সাথে ভেড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে-এমন চিত্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছিল বহু বছর ধরেই। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর ক্ষমতায় থেকে দলটি গঠন করেছিলেন। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হলেও জেলে থেকেই এরশাদ দলটির প্রত্যাবর্তনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এরশাদ নিজেও ৫টি আসনে জয়লাভ করেন এবং তার দল ৩৫টি আসন পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এবং দুর্নীতির দায়ে জেল খেটেও জেনারেল এরশাদ প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতা এবং ভোটের রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর এবার রাজনীতিতে টিকে থাকা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় পাটিতে।
 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স