* ডিএসইএক্স সূচকটি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়
* পুঁজির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিএসইসি
* পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব লাখো বিনিয়োগকারীরা
* ৩০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়
* পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে ফের রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন একদল বিনিয়োগকারী। বিক্ষোভ থেকে তারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন। দরপতন ঠেকাতে তার ব্যর্থতাকে দায়ী করেন বিক্ষোভকারীরা।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন লাখো বিনিয়োগকারী। অথচ পুঁজির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিএসইসি। তারা বলেন, বিনিয়োগকারীরা রাজপথে থাকতে চান না। কিন্তু সরকার এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থা পতন ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। গতকাল সোমবার সূচকটি প্রায় দেড় শ পয়েন্ট কমে ৫ হাজারের মাইলফলকের নিচে নেমে এসেছিল। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। এদিকে পুঁজিবাজারে বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য একটি ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। গত রোববার (২০ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছর মেয়াদে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ সংঘটিত হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের জন্য আজ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই এসব কোম্পানির আসল চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যদিকে এই বাজারে লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির, জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
এদিকে দেশের পুঁজিবাজারে লাগাতার পতনের কারণ অনুসন্ধানে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি। এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে লাগাতার পতন হচ্ছে। যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পতনের বিষয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। এজন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে যারা রয়েছেন- বিএসইসির এডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মদ সামসুর রহমান, বিএসইসির ডেপুটি ডিরেক্টর মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
কমিশন যেসব বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে-
১) ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পিছনে কারণগুলো চিহ্নিত করা।
২) বাজারে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।
৩) অন্য কোন আনুষঙ্গিক বিষয় চিহ্নিত করা।
৪) বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।
তদন্ত কর্মকর্তারা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলেও জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

পুঁজিবাজারে টানা দরপতন বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ