ঢাকা , বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এবারের অস্কারে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেল যে সিনেমাগুলো অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন এড শেরন দর্শকদের ওপর মেজাজ হারালেন সোনু নিগম বরুণের হাতে কি হয়েছে? ছবি দেখে চিন্তিত ভক্তরা আইসিইউতে শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় সুস্থ হয়েই গানের মঞ্চে সাবিনা ইয়াসমিন ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ পাবে ফাহিমের নতুন গান ভক্তদের জন্য কষ্টের গান গাইবেন আসিফ ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি, যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ১২ ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি, যুবলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ১২ নিখোঁজের ৫৪ ঘণ্টা পর কামরাঙ্গীরচর থেকে উদ্ধার অন্তর খুবই দুঃখজনক মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করা হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্তির সুপারিশ ৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনআইডি তথ্য ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছে ইসি ম্যাটস শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচন নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর উপর : প্রেস সচিব বেনজীরকে ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারির আদেশ ১০ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পুনরায় ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু অপরিবর্তিত আছে বেসরকারি ঋণ ও নীতি সুদহার মুদ্রানীতি ঘোষণা
* টেন্ডার বাণিজ্যের গডফাদার ড. হাছান মাহমুদ ও মনিরুলের বেলজিয়ামে গোপন বৈঠক

বিটিভির যন্ত্রপাতি মেরামতে হাজার কোটি টাকা লোপাট

  • আপলোড সময় : ২৭-১০-২০২৪ ০৫:২৪:৪৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-১০-২০২৪ ০৫:২৪:৪৮ অপরাহ্ন
বিটিভির যন্ত্রপাতি মেরামতে হাজার কোটি টাকা লোপাট
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং বিটিভির সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চ:দা:) মো. মনিরুল ইসলাম। সকল নিয়ম-কানুন ভেঙ্গে টেন্ডারের অধিকাংশ কাজ দেয়া হয় নির্ধারিত ৪টি প্রতিষ্ঠানকে। এরমধ্যে মন্ত্রীর আপন ভাই রাসেল মাহমুদ এর সম্পৃক্ততায় বেলজিয়াম ভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘স্টুডিওটেক’কে অধিকাংশ কাজই সুকৌশলে প্রদান করা হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন দুর্নীতির গডফাদার এই মনিরুল। সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পলাতক অবস্থায় বেলজিয়ামে আছে জেনে ট্রেনিং-এর অজুহাতে মনিরুল একটি টিম নিয়ে সুকৌশলে বেলজিয়াম গেছেন। সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চ:দা:) মো. মনিরুল ইসলাম বেলজিয়ামে অবস্থানরত সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, তার ভাই রাসেল মাহমুদ এবং স্টুডিওটেকের প্রতিনিধির সাথে ঐড়ঃবষ ওহফরমড় ইৎঁংংবষং এ গত ১৬ অক্টোবর ব্রাসেলস সময় সন্ধ্যা ৭ (বাংলাদেশ সময় আনুমানিক রাত ১১:৩০) গোপনে বৈঠক করেন। এ সময় মনিরুল ইসলাম চলমান প্রকল্পের দেনা পাওনা, পরিশোধের কৌশল, স্থান এবং আগামী টেন্ডার ও প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সার্বিক নির্দেশনা গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সব কাজ বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে ভাগ করা থাকলেও সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চ:দা:) মো. মনিরুল ইসলাম সকল টেন্ডার কাজের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করেন। তিনি এখনও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে আলোচনা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করেন। কম দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ না দিয়ে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে কয়েক কোটি টাকা বেশি দরদাতাকে কাজ দেন। যদি কোনো কারণে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া সম্ভব না হয় তবে পারসেন্টেন্সের মাধ্যমে ক্যাশ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করেন। মনিরুল অতি ধ্রুত হওয়ায় তার প্রেতাত্মা ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার (চ:দা:) মোঃ মান্নাফ হোসেন এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান ক্যাশ সংগ্রহ করে থাকেন।
সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘ ১৩ বছর থেকে বিটিভির নিজস্ব প্রধান প্রকৌশলী না থাকায় বারবার বেতার থেকে প্রেষণে প্রধান প্রকৌশলী নিয়ে আসা হয়। তারা নামে মাত্র প্রধান প্রকৌশলীর পদে থাকেন কারণ যোগদানের পরপরই মনিরুল একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীকে বশীভূত করেন। এরপরও মনিরুলের মতো সব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে না পারলে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মনিরুল বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ করান এবং মন্ত্রী দিয়ে প্রেসারে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে বিটিভিতে প্রধান প্রকৌশলী মনিরুলদের কাছে অনেক অসহায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৬টি পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ১৩৯১ কোটি টাকা অনুমোদিত হয় যার প্রস্তাবিত মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৭-ডিসেম্বর ২০২৩। প্রকল্পটির অনুমোদনের প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়েছে সেপ্টেম্বর ২০১৭। প্রকল্পটি চীনের সাহায্যপুষ্ট ছিলো। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সেই মো. মনিরুল ইসলাম। সাবেক মন্ত্রী হাসান মাহমুদ এবং পিডি মনিরুলের ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধা ও লেনদেন নিয়ে  চীনাদের সাথে ঝামেলা বাধে ফলে প্রকল্পটি বিভিন্ন অজুহাতে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায় মনিরুল। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৬টি বিভাগীয় শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি চর্চায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারতো।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য গত ২৩/০৫/২০১৮ তারিখে ১ম পর্যায়ে ১১৮.৫০ কোটি টাকা একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এই বরাদ্ধে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের পুরাতন যন্ত্রপাতির পরিবর্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গঈজ, ঈঅজ, ওহমবংঃ জড়ড়স, গঅগ,  অঁঃড়সধঃবফ ঠরফবড় ঝবৎাবৎ ঝুংঃবস, ঘখঊ, নিউজ স্টুডিও আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল অনুষ্ঠান নিমার্ণের জন্য ৩টি স্টুডিওতে যন্ত্রপাতি, লাইটিং যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সংস্থাপন করার কথা। কিন্তু দরপত্র অনুযায়ী মালামাল ক্রয় না করে দেশীয় পণ্যের মিক্স করা হয় এবং লোকাল ইনস্টলেশন করায় অল্প সময়ে অনেক যন্ত্রপাতির মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়ে। এই কাজের ঠিকাদার মন্ত্রীর আপন ভাই রাসেল মাহমুদ এর সম্পৃক্ততায় বেলজিয়াম ভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টুডিওটেক। বিষয়টি নিয়ে সাবেক মন্ত্রী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মধ্যে তোড়পাড় শুরু হয়। টেন্ডার অনুযায়ী কয়েকটি যন্ত্রপাতি গোপনে সংস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয় তাদের মধ্যে। ফলে যমুনা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩১ কোটি টাকা নতুন করে পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাদের ভাগ্য খুলে যায়! বিটিভি ভাংচূরের অজুহাতে তারা অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে বলে চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের দেশব্যাপী ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার প্রবর্তন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পেরও দুরবস্থা। ১ম পর্যায়ে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে জুলাই, ২০১৮ হতে জুন, ২০২৩ জাতীয় রোডম্যাপ এবং আইটিইউ এর নির্দেশিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং পদ্ধতিতে সম্প্রচার করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দশর্কদের চাহিদা অনুযায়ী অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্প্রচারের গুণগত মান বৃদ্ধি করা, ডিজিটাল সম্প্রচার প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন করা, বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নির্ধারণ করা থাকলেও তা না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সমুদয় অর্থ উত্তোলন করা হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে দুদক তা আমলে নেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল আইটেম এউ-৭ প্যাকেজের আওতায় ৩টি লটে বিভক্ত করে ডিজিটাল ট্রান্সমিটার, এন্টেনা, জেনারেটর, এভিআর, ইউপিএস ক্রয়ের জন্য গত ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখ দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী যন্ত্রপাতিগুলো ক্রয় করা হয়নি। এছাড়াও বিটিভি ঢাকা কেন্দ্র ও অন্যান্য উপকেন্দ্রে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মাণ, ১৬টি কেন্দ্র/উপকেন্দ্রের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রাংশ সংস্থাপনের কাজ, ঢাকা কেন্দ্রের টি-এক্স ভবনের ইন্টিরিওর ডেকোরেশন ইত্যাদি কাজেও অনেক দুর্নীতি করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করছে।
দুদক জানায়, বিটিভি সাব-স্টেশন নির্মাণের কাজ না করেই বিল উত্তোলনের মাধ্যমে টাকা লুটপাটের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ওই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও মিলেছে। এমনকি কোয়ালিটি পাওয়ার টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে ওই কাজ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগও রয়েছে। ফলে কমিশন থেকে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা নথিপত্র তলব করা হয়েছে। বিটিভির যন্ত্রপাতি ক্রয় ও মেরামতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযান।
বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বিটিভির সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চ: দা:) মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রকৌশল শাখার একটি চক্র আছে যারা নীরবে কোটি কোটি টাকার মালিক বুনেছেন। তবে টেন্ডার বাণিজ্য এবং ভুয়া বিল ভাউচারের বিষয় ওপেন সিক্রেট। রহস্যজনক কারণে বিটিভি, মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এখানে নীরব। তাই সকলের দাবি অন্তত এই সময়ে বিটিভির বরাদ্ধকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করে বিটিভি তার সুনাম ফিরে আনুক।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স