ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইউজিসির বিপুল আমদানিতেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল মুক্তিযোদ্ধা তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে অনিয়ম এ সরকারও কুমিল্লা থেকে খুনের ইতিহাস শুরু করেছে-শামসুজ্জামান দুদু যুব সমাজ দেশে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-জিএম কাদের ট্রাম্পের শুল্কনীতির অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে পাচার অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ২৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ বছরেও ফেরেনি রিজার্ভ চুরির অর্থ কারাগার থেকে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয় ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি না-মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ

দুই-তিনটি সবজি কিনলেই ৫০০ টাকা শেষ

  • আপলোড সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:৪২:৩৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:৪২:৩৭ পূর্বাহ্ন
দুই-তিনটি সবজি কিনলেই ৫০০ টাকা শেষ
বর্তমান সময়ে বাজারের মূল্যবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মুখোমুখি, তখন তাদের ক্রয়ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রা যথেষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও, মুরগির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একই সঙ্গে সবজি ও মাংসের দামও ভোক্তার মধ্যে চাপ সৃাষ্ট করেছে।
রাজধানীর বাজারে ডিমের দাম কমে ১৫০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে, যা আগে ১৮০ টাকায় উঠেছিল। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফিরেছে। তবে বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়ে ২০৫ থেকে ২১৫ টাকায় এবং সোনালি মুরগির দাম কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের উদ্যোগের মধ্যে ডিমের শুল্কছাড়, আমদানির অনুমতি এবং নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রির কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নিয়মিত অভিযান এবং ডিমের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমে আসছে। তবে, পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে।
মুরগির বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, হুট করেই সরবরাহ কমিয়ে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে পাইকাররা।
তিনি আরও জানান, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে গেছে, যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। গত এক মাসে মুরগির দাম বাড়ানোর জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২১০ টাকায় আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এ ছাড়া, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা, কক মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি আগের মতো বাড়তি দামে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার মুরগি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম একটু বেশি যাচ্ছে, পাশাপাশি অন্য সব ধরনের মুরগির দামই কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে। মূলত পাইকারি বাজারে আমাদের কেনা দাম বেশি পড়ছে যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আসলে কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে প্রচুর পরিমাণে মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, এর ফলে দাম বেড়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানকার মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিমের পাশাপাশি সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সেই নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্যের পাশাপাশি কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজধানীর মহাখালী বাজারের আরেক ক্রেতা গার্মেন্টস কর্মী মনছুর আলী বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণের পর থেকেই আরও দাম বেড়েছে। স্বল্প ইনকামের লোক আমরা যে কারণে এমনিতে বাজারে আসলে দিশেহারা হয়ে যায়। মাংস কেনা বলতে আমরা স্বল্প আয়ের মানুষরা শুধু বুঝি ব্রয়লার মুরগি, কারণ অন্যগুলো কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। সেই ব্রয়লারের দামও এখন বেশি চলছে। তাহলে আমরা কোনটা কিনব?
অন্যদিকে বাজারে গরুর মাংস আগের মতো বাড়তি দামে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংস বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জানান, পাইকারি বাজারে মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মালিবাগের একটি বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। বাড়তি দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশি মুরগি, গরু, খাসির মাংস তো অতিরিক্ত দামের কারণে খেতে পারি না। খাওয়ার মধ্যে কোনোভাবে কিনি ব্রয়লার আবার কোনো কোনো সময় সোনালি মুরগি। কিন্তু বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে করে ব্রয়লার মুরগিও কেনা এখন দায় হয়ে গেছে। ২১০ টাকা কেজি ব্রয়লার! আর সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা। সরকার গতমাসে ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিলো, কিন্তু এরপর থেকে একটি দিনের জন্যও ব্রয়লার নির্ধারিত দামে বিক্রি হয়নি। সংশ্লিষ্টদের যদি বাজারে মনিটরিং না থাকে তাহলে শুধু দাম নির্ধারণের ঘোষণা দিয়ে কি লাভ?
খোরশেদ আলম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সরকারের দাম নির্ধারণের পরে বাজারে কেনার সামর্থ্য নেই।
সপ্তাহজুড়ে তেজ ছড়ানো কাঁচামরিচের বাজারও নামতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। যদিও এখনো কিছু কিছু খুচরা দোকানি এখনো প্রতি একপোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা হাঁকছেন। তারা ১০০ গ্রাম বিক্রি করছেন ৪০ টাকায়।
এ দিকে পাশাপাশি সবজির বাজারেও পরিস্থিতি কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে। তবে, এখনও অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে রয়ে গেছে।
বাজারে শুধু কমদামের সবজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এরপর রয়েছে পটোল, যার দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। এছাড়া ঢ্যাঁড়শ ৮০-৯০, বরবটি ১০০-১২০, গোল বেগুন ১৩০-১৪০, লম্বা বেগুন ১০০-১২০, টমেটো ১৮০-১৯০, ধুন্দল, ঝিঙ্গে ও চিচিঙ্গা ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কচুরমুখীর কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়াও বাজারে করলার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
বাজারে শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ৪৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ছোট আকারের বাঁধাকপি ৮০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা ও মুলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা। ধনে পাতার কেজি ৬০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৮০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৮০ টাকা। বাজারে মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে তেজ ছড়ানো কাঁচামরিচের বাজারও নামতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। যদিও এখনো কিছু কিছু খুচরা দোকানি এখনো প্রতি একপোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা হাঁকছেন। তারা ১০০ গ্রাম বিক্রি করছেন ৪০ টাকায়।
এদিকে চলতি সপ্তাহে তেল ও চিনিতেও শুল্কছাড় দিয়েছে নতুন সরকার। কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, শুল্ক কমানোর খবরে পাইকাররা তেল ও চিনির দরে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে। তবে ভোক্তারা শুল্কছাড়ের সুফল পেতে কিছু দিন সময় লাগবে। চিনির দর নতুন করে বাড়েনি। বরং এক সপ্তাহে পাইকারিতে বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকার মতো কমেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে এসব পণ্যের খুচরা দাম কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাজার করতে আসা শরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, দুই-তিনটা সবজি কিনলেই ৫০০ টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে অন্যান্য বাজার কীভাবে করব। এ বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি তদারকি করা প্রয়োজন। প্রায় মাসখানেক যাবই দেখছি বাজার চড়া, অথচ নতুন সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী কিছুই আমরা দেখছি না।
এনামুল হাসান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনতেই ৮০ টাকা লাগছে। আর অন্যান্য সবজি কেনার মতো উপায় নেই। সব সবজিই মোটামুটি ১০০ টাকার আশপাশে দাম। বাজারে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে।
বাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, মাসখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা রয়েছে।
সাদ্দাম হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে কাঁচামরিচসহ কিছু সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। কাঁচামরিচের দাম এখন ২৬০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে। দুদিন আগেও এর দাম ছিল ৪০০ টাকা। তবে অন্যান্য সবজির দাম চড়া। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। অধিকাংশ সবজিতো ওইদিক থেকেই আসে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় সব সবজির দামই চড়া। তাই কাস্টমার বেশি সবজি নেয় না। দাম কম থাকলে আমাদের বিক্রিও ভালো হয়। তবে আশা করছি মাসখানেকের মধ্যেই শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর হয়ে যাবে, সেই সঙ্গে দামও ঠিক হয়ে যাবে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানের বাজার পরিস্থিতির কারণে তাদেরও বিক্রি কমছে এবং ক্রেতাদের পক্ষে বেশি সবজি কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স