ঢাকা , মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা হাজারো পরিবার শুল্ক চাপে ব্যবসা-বাণিজ্য হঠাৎ অস্থির শিক্ষাঙ্গন বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান ফেব্রুয়ারির নির্বাচনই বিএনপির সামনে এখন চ্যালেঞ্জ-মির্জা ফখরুল পুরুষশূন্য জোবরা গ্রাম, চবি ক্যাম্পাসে উৎকণ্ঠা অর্ধশত শিক্ষার্থীর মাথায় অস্ত্রের কোপ অনেকের থেঁতলে গেছে হাত-পা নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই -আসিফ নজরুল আরও ৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা নীতিমালা সংশোধন ভোট কক্ষের সংখ্যা কমছে নির্বাচনে তিন বাহিনীকে কাজে লাগানো হবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন কৌশল নতুন চ্যালেঞ্জে নির্বাচন কমিশন ২১৩০ কোটি টাকায় আলেকজান্ডারকে দলে ভেড়ালো লিভারপুল ফাইনাল হেরে কর্মকর্তার মুখে থুতু দিলেন সুয়ারেজ! ভায়োকানোর বিপক্ষে হোঁচট খেলো বার্সা মাঠে ডিম পাড়লো পাখি, এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো স্টেডিয়াম পুরুষদের থেকেও বেশি প্রাইজমানি ঘোষণা নারী বিশ্বকাপে! পোরশায় ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালিও পরিছন্নতা অভিযান অনুষ্ঠিত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসছে উন্ডিজ বিপিএলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পেল ‘আইএমজি’

সংরক্ষিত বনের বালু কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, হুমকির মুখে সবুজবেষ্টনী

  • আপলোড সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:২১:৫৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:২১:৫৬ পূর্বাহ্ন
সংরক্ষিত বনের বালু কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, হুমকির মুখে সবুজবেষ্টনী
উপকূলীয় এলাকাকে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন বেড়িবাঁধের। সেই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজে যদি উজাড় করা হয় বনভূমি তাহলে উপকার কীসে? এমনটাই প্রশ্ন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূলবাসীর। ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বেড়িবাঁধের পাকা সড়ক। যার ফলে সমতলে তৈরি হচ্ছে বড় বড় দিঘি। উজাড় হচ্ছে সবুজবেষ্টনী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পায়নি স্থানীয়রা। উল্টো সাব-ঠিকাদার মামলা-হামলার হুমকি দিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ড্রেজার মেশিন দিয়ে বনের ভেতর থেকে বালু উত্তোলন করে বড় বড় দিঘি তৈরি করা হয়েছে। আমরা বাধা দিলে ঠিকাদার চাঁদাবাজি মামলার হুমকি দিচ্ছেন।’ জানা গেছে, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত লাগোয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ওপর পাকা সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। কুয়াকাটায় আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওয়েডিং অ্যান্ড এস্টেনথিং প্রজেক্টের আওতায় কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের দুই দিকে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধের ওপর ১৬ ফুট প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এ কাজের ঠিকাদার ‘ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রথম পর্যায়ে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে গঙ্গামতি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে বালু ভরাটের কাজ শুরু করা হয়। এ বালু ভরাট কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় কবির হোসেন নামের স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ীকে। সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ কাজে লোকাল বালু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে সড়কে ব্যবহারের কথা রয়েছে। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে সংরক্ষিত বন উজাড় করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ব্যবহার হচ্ছে সড়কে। এতে বনের সরল জমিসহ শত শত গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। ফলে বনের মধ্যে বড় বড় দিঘির সৃষ্টি হয়েছে। বন কর্মকর্তারা বাধা দিলে শুনছে না প্রভাবশালী ঠিকাদার। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ভূমি প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণকাজের জন্য একটি প্রভাবশালী চক্র গঙ্গামতি ও মম্বিপাড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে। বালুখেকো প্রভাবশালীদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আইনি সহযোগিতা চেয়েও তারা পাচ্ছেন না। এই বন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’ স্থানীয়রা জানান, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সংরক্ষিত বন সমুদ্র উপকূলের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। বন না থাকলে বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের করাল গ্রাসে চলে যেত গ্রামের পর গ্রাম। সেই বনভূমি ধ্বংস করে প্রভাবশালী মহলটি কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য করছে। উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না কেউ। অভিযোগ রয়েছে, খোদ উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের পরোক্ষ সহযোগিতায় বনভূমির পাশাপাশি পর্যটন এলাকার কৃষিজমি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলন চলছে। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম জানান, তিনি খবর পেয়ে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বালু উত্তোলন চলমান থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিশ্চুপ। নানা অজুহাতে তৎপর হচ্ছেন না প্রশাসনের কর্তারা। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল ফকির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসক, ভূমি কর্মকর্তাসহ বন বিভাগকে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যেখানে সরকারি অর্থ দিয়ে কাজ হচ্ছে, সেখানে যদি সরকারি জমি থেকেই বালু উত্তোলন করা হয়, তাহলে এটা সাগরচুরি। আমার দাবি, যাতে এই ঠিকাদারকে কোনো প্রকার টাকা না দেওয়া হয়। যে সকল জায়গাগুলো থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে সেসব ভরাট করে দেওয়া হোক। নতুবা অচিরেই এই বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়বে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘বেড়িবাঁধে কাজের শুরু থেকে বন ও বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন আবার বালু দিচ্ছে তা-ও একই স্টাইলে। প্রশাসনকে জানানোর পরেও যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, আমাদের কী করার আছে? কর্মকর্তারা আসে যায়, দু-একদিন পর আবারও কাজ চলতে থাকে।’ স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মুন্সি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রশাসন যদি সঠিকভাবে কাজ করতো কখনোই বনের এবং বেড়িবাঁধের পাশ থেকে বালু উত্তোলন সম্ভব হতো না। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ মূলত ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। বেড়িবাঁধের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিলো। বেড়িবাঁধের পাশে যে দিঘিগুলো তৈরি করা হয়েছে তা একসময় ভরাট হবে ওই একই বালু মাটি দিয়ে। তাহলে উপকার হলো কি?’ তবে বালু উত্তোলন চলাকালীন স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মচারীদের মাঠপর্যায়ে তদারকি করতে দেখা গেলেও এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান (সাদেক) কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার কোথা থেকে বালু আনলো তা মনিটরিং করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা দেখি লেয়ার বাই লেয়ার কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। সরকারি নিয়মের বাইরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। যদিও উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ একটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। সেখান থেকে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।’
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স