জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) স্থবিরতায় কয়েক লাখ চাকরিপ্রার্থী চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। অভ্যুত্থানের কারণে স্থগিত হওয়া বিসিএসসহ অন্য চাকরির নিয়োগ ও পদোন্নতি পরীক্ষাগুলো এখনো শুরু করতে পারেনি কমিশন। তাছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা, চাকরিরতদের বিভাগীয় পদোন্নতির পরীক্ষাগুলোও স্থগিত করে রেখেছে পিএসসি। এমনকি গত ১৪ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রথম অর্ধবার্ষিকী বিভাগীয় পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (দশম গ্রেড)’ পদের ব্যবহারিক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। তাতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রশাসনে চাকরিরত বিভিন্ন ক্যাডারের কয়েক হাজার কর্মকর্তা। স্থগিত এসব নিয়োগ ও পদোন্নতির পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচিও পিএসসি এখনো ঘোষণা করতে পারেনি। অনেক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলও আটকে গেছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরের প্রায় এক হাজার পদে দীর্ঘদিন আগে পরীক্ষা শেষ হলেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। নার্সিং-মিডওয়াইফারি নিয়োগের পরীক্ষার ফলও আটকে আছে। ফলে চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আন্দোলনের জেরে পিএসসি গত ১৮ জুলাই থেকে বিসিএসসহ নিয়োগ পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষা চলাকালীন ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা স্থগিত করা হয়। এরপর ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। তাছাড়া ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেও খাতা মূল্যায়নসহ অন্য কাজগুলো থমকে আছে। আবার ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি যথাসময়ে প্রকাশ করা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। পিএসসি থেকে ৩০ নভেম্বরেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আশ্বাস দেয়া হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছু বলছে না। আবার বিজ্ঞপ্তি দেরিতে হলে বয়সের ছাড় মিলবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সূত্র জানায়, বিগত ৫ আগস্টের পর পিএসসি থেকে যতগুলো পত্র জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের প্রত্যুত্তর মেলেনি। এমনকি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ ও তাদের দাবি-দাওয়া বিষয়ে জানানো হলেও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ার পুরোটাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে করতে হচ্ছে। যে কারণে মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমন অবস্থায় পিএসসি নিয়ে এখনো আলোচনা বা করণীয় ঠিক করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। এজন্য স্বাভাবিক যোগাযোগে কিছুটা ভাটা পড়েছে। দ্রুত সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়। সূত্র আরো জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় নিয়োগপ্রত্যাশীরা পিএসসি সংস্কারের দাবি তুলেছে। পিএসসি পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ সব সদস্যের পদত্যাগের দাবি ওঠেছে। ধরেই নেয়া হয়েছিল বিগত সরকার পতনের পর সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সরিয়ে দেয়া হবে। তবে সেক্ষেত্র পিএসসি সদস্যরা পদত্যাগ না করে সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। বর্তমানে অনেকে নিয়মিত অফিসও করছেন না। পরিস্থিতি জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে পিএসসি চেয়ারম্যান পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানা যায়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পিএসসিতে থাকতে চাননি চেয়ারম্যান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তবে পদত্যাগ বিষয়ে পিএসসি সদস্যদের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একটি পক্ষ শিক্ষকদের। যারা মনে করছেন, পিএসসির যেসব আমলা সদস্য রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বেশি। সে কারণে পদত্যাগ করানো বা সরিয়ে দেয়ার চিন্তা করা হলে তাদের সবার আগে করানো প্রয়োজন। ওই পক্ষের দাবি, শিক্ষকরা আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পেলেও তারা দুর্নীতি করেননি। সে কারণে শিক্ষকদের মেয়াদ শেষ করতে দেয়া উচিত। নয়তো ধাপে ধাপে সরানো উচিত। অন্যদিকে আমলা সদস্যরা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলে একসঙ্গে পদত্যাগ করতে রাজি। এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন জানান, পটপরিবর্তনের কারণে বেশ কিছুদিন পিএসসি কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা ছিল। যে কারণে অনেক কাজ জমে গেছে। এখন কার্যক্রমে গতি আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এক মাসের মধ্যে শুরু করা যাবে। আর ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়ন চলছে। যদি দ্বিতীয় পরীক্ষকের মূল্যায়নে ২০ শতাংশের বেশি ব্যবধান হয়, তাহলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো। আশা করা যায় এটিতেও খুব বেশি সময় লাগবে না। তবে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য মডারেশন লাগবে। পরীক্ষার কেন্দ্র ঠিক করা লাগবে। প্রেসের সঙ্গে বসতে হবে। সবমিলিয়ে দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে। আর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে পিএসসি প্রস্তুত আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। যদি মন্ত্রণালয় থেকে ঠিক সময়ে চাহিদাপত্র পাওয়া যায়, তাহলে আগামী ৩০ নভেম্বরেই ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। অন্য নিয়োগ ও পদোন্নতির পরীক্ষাগুলোও দ্রুত নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্দোলনের ফলে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তার কারণে প্রার্থীরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে সেজন্য পিএসসি দ্রুতই ওসব পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
পিএসসির স্থবিরতায় কয়েক লাখ চাকরিপ্রার্থী চরম হতাশা
- আপলোড সময় : ১১-১০-২০২৪ ০২:১১:০১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-১০-২০২৪ ০২:১১:০১ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ