ঢাকা , রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি করে জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশা বিএনপি’র বরযাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নারী নিহত, আহত ৪০ নিয়ম ভেঙে আগের রূপে গোলাপি বাস বিদেশ থেকে টনকে টন চাল আসলেও প্রভাব নেই দামে জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন- প্রেস সচিব শিগগিরই সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক-আলী রিয়াজ সরকারের দ্বিতীয় পর্বেও সংঘাতের আশঙ্কা ড. ইউনূসের শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে- প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীতে ফের বেপরোয়া কিশোর গ্যাং পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্মত হলেও মূল্যছাড় দেবে না আদানি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে শুরু প্রাধান্য পাচ্ছে যে বিষয়গুলো অপারেশন ডেভিল হান্টে ষষ্ঠ দিনে গ্রেফতার ৫০৯ বিপুলসংখ্যক কারখানা বন্ধে দিশেহারা হাজার হাজার শ্রমিক পোশাক রপ্তানির বিপুল টাকা বিদেশেই থেকে যাচ্ছে আশুলিয়ায় ১২শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার আটক ৩ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড রামগঞ্জে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা সরিষার বাম্পার ফলন কৃষক খুশি গাজি কালুর জীবন ও দর্শন নিয়ে শোকমেলা অনুষ্ঠিত গাজীপুরে চার সাংবাদিকের ওপর হামলা, আটক এক
সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করলেও আইনের ফাঁকে বেরিয়ে আসছে

সক্রিয় পাচারকারী চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

  • আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৪ ১২:৩১:০৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৪ ১২:৩১:০৪ পূর্বাহ্ন
সক্রিয় পাচারকারী চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা
রাজধানীসহ সারাদেশে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষকে বিদেশে চাকরি দিয়ে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। মাঝে মধ্যেই র‌্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। এছাড়াও বিজিবির হাতেও এই চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হচ্ছে। আইনের ফাঁকফোকরে এইসব অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে এসে পূর্বের পেশায় ফিরে যাচ্ছে। এই মানবপাচারকারী চক্রের গডফাররা বাংলাদেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে চক্রটিকে।
জানা গেছে, সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা, কম্বোডিয়ায়, মাল্টা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে  মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরি দিয়ে পাঠানোর কথা বলে শত শত যুবককের কাজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিছু কিছু যুবককে প্রথমে নেয়া হয় ভারত। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন কারোরই হয়নি ভিসা। পরে ফিরে আসেন বাড়িতে। এইভাবে বহু লোক প্রতারিত হয়েছে। পরে পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোন কিছুই হয়নি।
সম্প্রতি বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার সহযোগী মাহমুদ করিম (৩৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি ভুয়া কোর্সের ৬৫টি সনদ, ৩০০টি ভুয়া মেডিকেল সনদ, ২২৫টি ভুয়া কোভিড টিকা সনদ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও জাল ভিসা, জাল কাগজপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার, স্ক্যানার ও প্রিন্টার জব্দ করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্যে ১০ সিন্ডিকেটের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন তিনি। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বানিজ্যের জন্য বানিয়ে নিয়েছিলেন নিজের মেডিকেল সেন্টার ওয়েলকাম মেডিকেল। প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর নাম মাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এই সিজনে আবার পরিচয় লুকিয়ে কমপক্ষে দুইটি লাইসেন্স রয়েছে একশ’ এক রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায়। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তার এজেন্সি। সাথে আছে নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার ওয়েলকাম মেডিকেল। ৩১শে মে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর  তিনিসহ আরো কয়েকজন মিলে আবার চেষ্টা করছেন মালয়েশিয়ায় ভিন্ন ফর্মুলায় লোক পাঠানোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠনে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ক্ষমতাশীল একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর কিছু নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের কয়েক জনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়। জানা যায়, একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে মোটা অংকের অর্থ স্পন্সর করার সুত্রে দাওয়াত পান ফখরুল ও তার অনুসারীরা।  শুধু তাই নয়, দেখা করেছিলেন স্বয়ং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় দেশে ফিরে এখন নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে শুরু করেছে নানা অপতৎপরতা। ফখরুলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিযোগ যে তিনি  বিভিন্ন টকশো, সোসাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তার বক্তব্য গুলো তার অনুসারীরা মালয়েশিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ায় সম্ভাব্য নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশী শ্রমিক বিমুখ হচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়া ও নানা সংকটের জন্য দায়ী বায়রার এই নেতা। তার হাত ধরেইন সর্বনাশ নেমে এসেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে। বায়রার একজন সদস্য জানান, মালয়েশিয়ার জনশক্তি রফতানীতে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচাইতে লাভবান ফকরুল ইসলাম। তিনি সবসময় সিন্ডিকেটে ছিলেন। তার আছে নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার। আছে একাধিক সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি। বেনামে একশ’ এক রিক্রুটিং এজেন্সিরও দুটি তার। তার মেডিকেল সেন্টারের নামে ওয়েলকাম ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টার। তার রিক্রুটিং এজেন্সির নাম হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট  সেন্টার (আরেল ৪৫২)। সাধারণ বায়রা সদস্যরা বলেন,  একশ’ এক সিন্ডিকেট ভুক্ত তার বেনামী প্রতিষ্ঠান ত্রিবেনি ইন্টারন্যাশনাল ও সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল। যার নেপথ্য মালিক ফখরুল ইসলামের। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করছেন। অন্য যারা ব্যবসা করেন তাদের লাইসেন্স একটা অথচ উনার লাইসেন্স ২ টা। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা হয়তো মূল একশ এক এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ছিলেন। কেউ কেউ শুধু মেডিকেল সেন্টারে ছিলেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি সব জায়গায় আছেন। তিনি প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের মেডিকেল চেকআপ করিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়া থেকে ডিমান্ড (চাহিদাপত্র) সংগ্রহ করে বিভিন্ন এজেন্সিকে সরবরাহ করেছেন। তারা ডিমান্ড সংগ্রহ করার শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।  তিনি ও তার সহযোগী সিন্ডিকেটের কারণে মালশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো শুধু একটা টিকেট কেটে শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে। অথচ তারা আইনের আওতায় আসছে না। মন্ত্রণালয়ের নজরে আসছে না। একদিকে তারা বলছে, ৬ লাখ টাকা করে শ্রমিক গিয়েছে আবার বলতেছে তারা দেড় লাখ টাকা একশ’ এক রিক্রুটিং এজেন্সিভুক্তদের দিয়েছে। অনুমোদিত এজেন্সিগুলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এলোকেশন, জব, ডিমান্ড লেটার, সত্যায়ণ, ভিসা করানো, বিটিএমইএর ক্লিয়ারেন্স, নিয়োগানুমতি ও বর্হিগমনসহ যাবতীয় আনুসঙ্গি কাজ সম্পাদন করেছে। আর সহযোগী এজেন্সিরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার একটি টিকেট করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে নিয়েছে। এসব তথ্য গোপন রেখে এই চক্রটিই আবার বড় বড় কথা বলছে। অপর এজন ব্যবসায়ী জানান, বায়রার যুগ্মমহাসচিবসহ ওইসব নেতাদের আগে জবাবহিতার আওতায় আনা জরুরী। যেহেতু ওরা বেশি টাকা নিয়েছে এবং কাজটা এনেছে তাহলে টাকা তারাই পাচার করেছে। সহযোগী রিক্রুটিং হিসেবে তারা কাজ কিনেছে। ওয়ার্কারদের অর্থও তারা দিয়েছে। সাপ্লাই চেইন ও মার্কেটিং চেইন তাদের। বেশি অর্থ নেয়ার জন্য তারাই দায়ী। অর্থপাচারের জন্যও তারা দায়ী। অথচ জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে এক তরফা তারা নানামুখী অপপ্রচার করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২২মাসে  ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ শ্রমিক মালশিয়ায় গিয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের জন্য গত  ৩বছরে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে দেশের রেমিট্যান্স আরোহন বৃদ্ধি পাবে এবং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতেও আমাদের শ্রমিকরা গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু এই অসাধু চক্রের কারণে শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়ে আছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স