ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইউজিসির বিপুল আমদানিতেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল মুক্তিযোদ্ধা তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে অনিয়ম এ সরকারও কুমিল্লা থেকে খুনের ইতিহাস শুরু করেছে-শামসুজ্জামান দুদু যুব সমাজ দেশে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-জিএম কাদের ট্রাম্পের শুল্কনীতির অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে পাচার অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ২৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ বছরেও ফেরেনি রিজার্ভ চুরির অর্থ কারাগার থেকে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয় ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি না-মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ

বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ জামায়াত

  • আপলোড সময় : ০৯-১০-২০২৪ ০১:১১:১৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-১০-২০২৪ ০১:১১:১৫ পূর্বাহ্ন
বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ জামায়াত
* আগামী নির্বাচনে ৩শ’ সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা
* ইসলামী দলগুলো নিয়ে শক্তিশালী জোট গড়ার পরিকল্পনা
* অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় জামায়াত

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ-বিহীন নির্বাচনী  মাঠে সামনের দিনগুলোতে নতুন হিসেব-নিকেশ আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুটো শক্তি বিএনপি এবং তাদের এক সময়কার রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোন রাজনৈতিক দল না হলেও রাজনীতির মাঠে তাদের প্রভাব অন্যদের চেয়ে কম নয়।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রাজপথে একসাথে আন্দোলন করলেও আগামী নির্বাচনে মুখোমুখি হতে পারে দল দুটি। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে তাদের একসময়ের মিত্র জামায়াত। আগামী নির্বাচন বিএনপি এককভাবে নাকি আন্দোলনের সাথীদের নিয়ে একসাথে করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩শ’ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মানবিক কাজের মাধ্যমে সারাদেশে দল গোছানো শুরু করেছে তারা। এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী বিরোধী ইসলামী দলগুলো নিয়েও একটি জোট গড়ারও পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। সর্বশেষ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত জেলা জামায়েতের রুকন সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩শ আসনেই প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়াও ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর এক সাথে চললেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি-জামায়াতের বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্যে আসে। দল দুটির নেতারা একে অপরকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখছেন। বিএনপি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাইলেও জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বচন নিয়ে চাপ না দেয়ার কথা বলছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বাধাঁর সম্ভাবনা নেই। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় এবং ভোট পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতির বদল না হলে আগামি নির্বাচন হতে পারে ‘বিএনপি বনাম জামায়াত’। তবে বিএনপির বিপক্ষে এককভাবে পেরে ওঠা সম্ভব নঅ। তাই আওয়ামী লীগ বিরোধী সব দলকে নিয়ে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী একটি নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন সামনে রেখে নানা ছক কষছে জামায়াতে ইসলামী। ধর্মভিত্তিক দল ছাড়াও বিএনপির সঙ্গে একসময় যুগপৎ আন্দোলন করা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে পাশে রাখতে চাচ্ছে। এসব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে নির্বাচনী জোটে রূপান্তরের পরিকল্পনা জামায়াতের। এরই মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করা দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে সরকার গঠন করতে পারলে ছোট-বড় সব দলকে ক্ষমতার অংশীদার করার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই রাজনীতির মাঠ গোচাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এলক্ষ্যে সারা দেশে মাঠে সরব হয়েছে তারা। তাদের মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সে জন্য এখন থেকে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি।
জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ভেতরে এমন প্রচারণা আছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করলে ৪৫ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না। জামায়াতের ভোট ১০ থেকে ১২ শতাংশ। বাকি ভোটও আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের নয়। বিপুল সংখ্যক ভোটার ভাসমান। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী যদি সমমনা ইসলামী দলগুলো নিয়ে নির্বাচনী মোর্চা গড়তে পারে সেক্ষেত্রে বৃহত্তর নির্বাচনী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। বিএনপিবিরোধী ভোট জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের বাক্সেই পড়বে। 
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা এবং ১২ দলীয় জোটকেও নিজেদের পক্ষে টানতে চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়াও  চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকেও জোটে টানার চেষ্টা চলছে। তবে দলটির নায়েবে আমির এবং চরমোনাইর পীরের ছোটভাই সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম জামায়াতের সঙ্গে জোটে রাজি নন বলে জানা গেছে। যদিও ইসলামী দলের নেতারা বলছেন, জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারবে না। নির্বাচন এলে বিএনপি যখন ছোট দলগুলোকে ডাকবে তখন তারা সেই ডাক উপেক্ষা করে জামায়াতের সঙ্গে থাকবে না। যারা বিএনপির ডাক পাবে না, তারাই হয়তো জামায়াতের জোটে যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন,জামায়াত আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু ছিল। একসাথে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এখন যেহেতু মাঠে আওয়ামী লীগ নেই, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত নতুন উদ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামীতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিই বলে দেবে, জামায়াতের ইসলামীর সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে।
এদিকে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শত্রু-মিত্রের চর্চা নতুন কোন বিষয় নয়। রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনীতির মাঠে একটা সময় যারা পরস্পরের মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল পরবর্তীতে তারাই শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বর সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান বন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এরপর তার ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হয়েছিল। সে অভ্যুত্থানের রূপকার ছিল জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহের ও জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। তখন জাসদ ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তি। কিন্তু রাজনীতির পথ পরিক্রমায় জাসদ আওয়ামী লীগের মিত্র হয়েছে এবং বিএনপির শত্রু হয়েছে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা দৃশ্যত মনে হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক চিন্তাধারার সাথে তারা একমত হতে পারছেন না। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে নির্বাচন। বিএনপি মনে করে ‘অতিদ্রুত’ কিংবা ‘যৌক্তিক সময়ের’ নির্বাচন দাবি করছে। তবে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কোন তাড়াহুড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নির্বাচনের জন্য আরও সময় দিতে চায় জামায়াত। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে বিএনপির সতর্ক অবস্থান। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের দিক থেকে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা হয় কি না সেদিকেও দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। এ বিষয়টিও নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো চিন্তা এখনি তাদের নেই। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জামায়াতে ইসলামী কি বিএনপির জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে? মোটেই না। এখানে ছাত্র-জনতার যে বিপ্লব হয়েছে তার যে অন্তর্নিহিত স্পিরিট, সেটা যদি আমরা উপলব্ধি করি তাহলে এখানে কিন্তু কোন দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধের সুযোগ আমি দেখছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা মিশে গিয়েছিল। তারা বলেছে, সাধারণ ছাত্র হিসেবে আন্দোলন করেছে। কিন্তু সাধারণ ছাত্র বলতে তো কিছু নেই। ছাত্র যারা রয়েছে তাদের কোনও মতামত থাকতে পারে। কাজেই এটাও কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই।
উল্লেখ্য, এককভাবে নির্বাচন করে জামায়াতে ইসলামী ১৯৯১ সালে ১২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ১৯৯৬ সালের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানোর কারণে বিএনপির সঙ্গে জোট করে অংশ নিয়েছিল পরের দুটি নির্বাচনে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স