ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

গ্রেফতার আতঙ্কে তৃণমূল আওয়ামী লীগ

  • আপলোড সময় : ০৮-১০-২০২৪ ০২:২৪:১৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-১০-২০২৪ ০২:২৪:১৯ অপরাহ্ন
গ্রেফতার আতঙ্কে তৃণমূল আওয়ামী লীগ
ঢাকায় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পল্লবী থানা যুবলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মিলন গ্রেপ্তার। জয়পুরহাটের সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০ জন, বগুড়ায় আটক হন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সাত নেতাকর্মী। সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পাশাপাশি এভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, গুলি, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায়। গত দু-তিন দিনে তৃণমূলের অন্তত ১০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন যৌথ বাহিনী ও পুলিশের হাতে। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
হঠাৎ তৃণমূলে গ্রেপ্তার অভিযান বেড়ে যাওয়ার পেছনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটি কারণ বলে জানা গেছে। পুলিশের উচ্চ পযায় থেকে বাহিনীর সব স্তরে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে পূজামণ্ডপ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর কোনো ধরনের নাশকতার সুযোগ তৈরি না হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। আত্মগোপন কিংবা দেশ ছেড়ে পালানোর সময় আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আটক হচ্ছেন। তবে বেশির ভাগই এখনো আত্মগোপনে কিংবা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, মাঝে মাঝে যাদের দেখা মেলে সংবাদমাধ্যমে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা, গুলি করে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সারাদেশে শত শত মামলা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় জেলা-উপজেলা, সিটি, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। উত্তরায় ছাত্র আন্দোলন দমাতে হামলা চালিয়ে হত্যার অভিযোগে শুক্রবার দুপুরে উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী রবিনকে। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বেশ কজন আটক হন পুলিশের হাতে।
তৃণমূলে যেসব নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে: জানা গেছে, সর্বশেষ ৬ অক্টোবর হাজারীবাগ থানাধীন নিজ বাসায় থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি শাকিল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ধানমন্ডি থানা পুলিশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের ডিসি তালেবুর রহমান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ইমন হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতাকে ৫ অক্টোবর রাতে পল্লবী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ৬ অক্টোবর তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে তাদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন-পল্লবী থানার ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর হোসেন জনি। সুনামগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মামলার আওয়ামী লীগের ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের মধ্যে সিআর পরোয়ানাভুক্ত ২ জন, সাজা পরোয়ানাভুক্ত ২ জন, আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুতবিচার) আইনে-৮ জন (সদর-৬, বিশ্বম্ভরপুর-২), বিশেষ ক্ষমতা আইনে-৩ জনসহ মোট ১৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশ। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন। একইদিন আলমডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায়  এক ছাত্রের দায়েরকৃত মামলায় রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিনসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দু’জন হলেন উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও কালিদাসপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াদুদ মুন্সি। গত ৫ অক্টোবর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হত্যা ও হত্যাচেষ্টায় মোট চারটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীসহ দেড় হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার উত্তর দাড়িয়াপুর এলাকার মৃত জমশের আলীর ছেলে ইব্রাহিম খলিল, আটাবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও পশ্চিম খোলাপাড়া এলাকার মৃত মবেদ আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী,একই ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  গোসাত্রা এলাকার হাতেম আলীর ছেলে শাহরিয়ার সুজন, সূত্রাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানসূত্রাপুর এলাকার মৃত বিল্লাল উদ্দিনের ছেলে জলিল হোসাইন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উত্তর হিজলতলী এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাক হোসেন এবং একই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মোস্তাকের ছেলে সম্রাট হোসেন। একইদিন নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি, বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বোতলাগাড়ীর গ্রামের সোলেমান আলীর ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুল হান্নান শাহ (৪৯), শহরের ইসলামবাগ চিনি মসজিদ এলাকার জাবেদ হোসেনের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী জাহিদ হাসান সানি (২৫), শহরের কয়ানিজ পাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী আরশেদ আলো (৪৫)। এ ছাড়াও, উপজেলার কয়া-গোলাহাট ডাঙ্গাপাড়ার শাহাজ উদ্দিনের ছেলে কৃষকলীগ নেতা শামসুল হক (৪৮), বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সোনাখুলী তহশিলদার পাড়ার জালাল উদ্দীনের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা রবি সরকার (৫৩), একই উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ঠনঠনিয়া পাড়ার আব্দুল গফুরের ছেলে তাঁতি লীগের নেতা রেজাউল করিম (৪৯)। গত ৩ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় ইমন হত্যা মামলায় পল্লবী থানা যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ ওয়াসিমকে আটক করা হয়। বনশ্রীতে হত্যা মামলায় একই দিন বিকালে খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. আজিজুল হক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মো. ওবায়দুল ইসলাম রানা। রাতে ফুলবাড়িয়া থেকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মিলনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। জয়পুরহাটের সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাকির হোসেন মোল্লা ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। বগুড়ায় আটক হন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সাত নেতাকর্মী। একই রাতে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর কুমিল্লার বুড়িচংয়ের ময়নামতি ইউনিয়নের সুন্দুরিয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্রসহ মো. মোতাব্বির হোসেন জনি (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে আটক করে যৌথ বাহিনী। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি এয়ারগান, ১৪টি তলোয়ার, একটি লোহার চাকতি, তিনটি চাকু, পাঁচটি স্টিক। এর আগে বুধবার রাতে ফেনী, সাভার, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নেত্রকোনা, নীলফামারী ও বগুড়ায় ৩২ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে যেমন আছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, তেমনি আছেন কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এমনকি প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের পতনের পর ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলায় মঙ্গলবার গভীর রাতে এবং বুধবার সকালে নিজ নিজ বাসায় গ্রেপ্তার হন কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক মোতাহার, সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন লাকী, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত করিম অমি এবং জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শামসুল ইসলাম মাছুম। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনায় তৃণমূলের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ ও যুব মহিলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মী বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, তারা এখন এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন। আত্মগোপনে থাকা একজন জেলা পর্যায়ের সভাপতি বলেন, তারা মামলায় গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের হামলার শিকার হওয়ার ভয়েও আছেন। তৃণমূলে সম্প্রতি এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য তারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিরাপদ স্থানে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে থানা, সার্কেল, জেলা, রেঞ্জ পর্যায়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করার জন্য। সামনে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পূজামণ্ডপ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর যেকোনো নাশকতা কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এসব কিন্তু এর একটা লক্ষ্য হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, একের পর এক হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা হচ্ছে। যে অভিযোগ অতীতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, একই অভিযোগে বর্তমানেরাও অভিযুক্ত হবেন। এটিও দেশবাসীর ভেবে দেখার বিষয় বলে জানান ওই নেতা।
দুই মাসেও গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাটেনি নেতা-কর্মীদের: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত দুই মাসেও গ্রেফতার আতঙ্ক কাটেনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। তারা এখনো রয়েছেন আত্মগোপনে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপন অবস্থায় অনেকেই দেশ ছাড়েন। এখনো অনেকেই চেষ্টায় আছেন দেশ ছাড়ার। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি হতাশা বাড়ছে। দুই মাস ধরে আত্মগোপনে থাকার পর আরও কত দিন এভাবে থাকতে হবে তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া বেশি দিন লুকিয়ে থাকাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযানও জোরদার হয়েছে। নেতা-কর্মী ও তাদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনাও ঘটে চলেছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ।
গত ১৫ দিনে ব্যাপকহারে বেড়েছে গ্রেপ্তার: আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাস পার হলে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে অনেকেই মনে করেছিলেন পরিস্থিতি হয় তো একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু গত ১৫ দিনে ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার বেড়েছে। এই সময়ে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকশ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকের বাড়ি-ঘরে হামলাও হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। এছাড়া দলটির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেওয়াও অব্যাহত আছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অন্তত ২২২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯০টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। অন্যরা গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে আছেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার: সুনামগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মামলার আওয়ামী লীগের ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের মধ্যে সিআর পরোয়ানাভুক্ত ২ জন, সাজা পরোয়ানাভুক্ত ২ জন, আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুতবিচার) আইনে-৮ জন (সদর-৬, বিশ্বম্ভরপুর-২), বিশেষ ক্ষমতা আইনে-৩ জনসহ মোট ১৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশ। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন। একইদিন আলমডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায়  এক ছাত্রের দায়েরকৃত মামলায় রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিনসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দু’জন হলেন উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও কালিদাসপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াদুদ মুন্সি। গত ৫ অক্টোবর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হত্যা ও হত্যাচেষ্টায় মোট চারটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীসহ দেড় হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার উত্তর দাড়িয়াপুর এলাকার মৃত জমশের আলীর ছেলে ইব্রাহিম খলিল, আটাবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও পশ্চিম খোলাপাড়া এলাকার মৃত মবেদ আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী,একই ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  গোসাত্রা এলাকার হাতেম আলীর ছেলে শাহরিয়ার সুজন, সূত্রাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানসূত্রাপুর এলাকার মৃত বিল্লাল উদ্দিনের ছেলে জলিল হোসাইন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উত্তর হিজলতলী এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাক হোসেন এবং একই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মোস্তাকের ছেলে সম্রাট হোসেন। একইদিন নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি, বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বোতলাগাড়ীর গ্রামের সোলেমান আলীর ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুল হান্নান শাহ (৪৯), শহরের ইসলামবাগ চিনি মসজিদ এলাকার জাবেদ হোসেনের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী জাহিদ হাসান সানি (২৫), শহরের কয়ানিজ পাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী আরশেদ আলো (৪৫)। এ ছাড়াও, উপজেলার কয়া-গোলাহাট ডাঙ্গাপাড়ার শাহাজ উদ্দিনের ছেলে কৃষকলীগ নেতা শামসুল হক (৪৮), বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সোনাখুলী তহশিলদার পাড়ার জালাল উদ্দীনের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা রবি সরকার (৫৩), একই উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ঠনঠনিয়া পাড়ার আব্দুল গফুরের ছেলে তাঁতি লীগের নেতা রেজাউল করিম (৪৯)।
যেসব রুই-কাতলা গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা একের পর এক শীর্ষনেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না দলের তৃণমূল পর্যায়ের ইউনিট-ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক স্বাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, হাজী মো. সেলিম, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ প্রমুখ। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম নেতা এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও গ্রেপ্তার হয়ছেন। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। যাদের নামে মামলা হয়নি তারাও আতঙ্কে আছেন, কখন মামলা হয় বা কোন মামলায় তারা জড়িত হয়ে যান বা গ্রেপ্তার করা হয়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন এখন পর্যন্ত যে সব মামলা হয়েছে বা হচ্ছে তার প্রায় প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামি রয়েছে শত শত। মামলা না থাকলেও গ্রেপ্তার হলেই যে কোনো মালায় আসামি হয়ে যাবেন, এই ভয় তাদের মধ্যে সব সময় কাজ করছে। আবার নতুন করে কোনো মামলায়ও আসামি হতে পারেন। কখন গ্রেপ্তার বা হামলার শিকার হয় এ আতঙ্ক রয়েছে তাদের মধ্যে। এর পাশাপাশি দীর্ঘ দিন আত্মগোপনে থাকতে থাকতে অনেকে হতাশ হয়েও পড়ছেন। এই দীর্ঘ সময় নেতা-কর্মীরাও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। অনেকের সঙ্গেই অনেকের যোগাযোগ নেই। তবে সম্প্রতি দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকসহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার্যক্রম সক্রিয় করা হয়েছে। এর মধ্যমে নেতা-কর্মীরা দলের কিছু তথ্য পাচ্ছেন বলে সূত্রগুলো জানায়।
নির্যাতনের তথ্য চেয়ে বিশেষ বার্তা আ’লীগের: দলের ও সহযোগী সংগঠনের ওপর নির্যাতনের তথ্য চেয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ৬ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বার্তা দেওয়া হয়। দলটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টটিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যে কোনো কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, অন্যায় গ্রেপ্তার, হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ইত্যাদির তথ্য, ছবি, ভিডিও, নিউজ লিঙ্ক প্রেরণ করুন রহভড়@ধষনফ.ড়ৎম অথবা বিনঃবধস@ধষনফ.ড়ৎম ইমেইলে।
তথ্য যে কোনো একটি মেইলে পাঠানোর জন্যও দলটির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স