ঢাকা , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা ঝিনাইদহে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত আহত ৪ কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দের ঘটনায় কারখানা মালিক রিমান্ডে মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই আরও ১১ জনকে পুশইন, মোট সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে নয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিমি. বেগে ঝড়ের আভাস সিলেট-মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য

ব্যাংক ঋণের ৭৫ ভাগই প্রভাবশালীদের দখলে

  • আপলোড সময় : ০৫-১০-২০২৪ ১২:২৫:২৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-১০-২০২৪ ১২:২৫:২৯ পূর্বাহ্ন
ব্যাংক ঋণের ৭৫ ভাগই প্রভাবশালীদের দখলে
* গত জুন পর্যন্ত ঋণের ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশই নিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৮০৬ জন গ্রাহক
* নিম্ন আয়ের মানুষ বা লাখ টাকার নিচের ঋণগ্রহীতারা মাত্র ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন
* অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা ১-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া গ্রাহকদের ঋণের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ


বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে সক্ষম যে কেউ  ঋণ পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো চিত্র। যে কারও কাছ থেকে আমানতের জোগান পেতে ব্যাংকগুলোকে আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে দেখা যায়। কিন্তু ঋণ বিতরণের বেলায় থাকে চরম পক্ষপাতিত্ব। বাড়তি সুবিধা নিয়ে ঋণ পাইয়ে দেয়ার ফলে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক ঋণের ৭৫ ভাগই চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে।  বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেশের ঋণ বিতরণ পরিস্থিতির এমন বৈষম্যের চিত্রই ফুটে উঠেছে।
জনগণের থেকে নেয়া বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর কাছে আমানত। ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে ব্যাংকগুলো ওই আমানতের অর্থই বিভিন্ন খাতে ঋণ হিসেবে পুনর্বিনিয়োগ করে। এর জন্য নির্দিষ্ট হারে সুদ ধার্য করার পাশাপাশি তা পরিশোধে বেঁধে দেয়া হয় সময়সীমাও।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে ১৫ কোটির বেশি আমানতকারীর সঞ্চয় জমা পড়েছে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সেই আমানত থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ঋণ গ্রহণকারীর অনুকূলে ১৫ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো, যার ১২ লাখ ২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকাই নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। অর্থাৎ ১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯০ জন কোটিপতিই ভাগিয়েছেন এই বিপুল পরিমাণ ঋণ। যদিও ব্যাংকগুলো কোটিপতি আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ মাত্র ৭ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বা ৪২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এত বিপুল পরিমাণ ঋণ বড়দের পেতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হলেও ছোটদের ছোট ছোট ঋণেও থাকে হাজারো ওজর-আপত্তি। এর বিপরীতে বড় ঋণের সিংহভাগ খেলাপি হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অথচ একজন কৃষক কিংবা ছোট উদ্যোক্তার ৫ হাজার টাকার ঋণের জন্য মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর নজিরও রয়েছে। এই বাস্তবতায় প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের হাজারো উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, স্বাধীনতার এত বছরেও ব্যাংকগুলো গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা তৈরি করতে পারেনি। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে খরচ বেশি হওয়ার অজুহাতে তারা এ খাত থেকে দূরে থাকছে। এতে গ্রামের মানুষ বেশি সুদে এমআরএ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে কৃষক স্বল্প খরচে ঋণ নিতে পারতেন। এতে তাদের উৎপাদন খরচও কমত। এ কথা ঠিক, গ্রামে ঋণ বিতরণে খরচ কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তো সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। গ্রামাঞ্চলে খরচ বেশি হওয়ার অজুহাতে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অনীহা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত হিসাবে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশই দখলে নিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৮০৬ জন গ্রাহক। অথচ নিম্ন আয়ের মানুষ বা লাখ টাকার নিচের ঋণগ্রহীতারা মাত্র ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন। এসব গ্রাহকের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা ১-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া গ্রাহকদের ঋণের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এসব গ্রাহকের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আর নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের প্রয়োজন হয় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব গ্রাহক জুন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে মোট ঋণের ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ ঋণ গ্রহণ করেছেন। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। এর বাইরে মধ্যম আয়ের চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী বা কোটি টাকা পর্যন্ত নেয়া গ্রাহকেরা ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন। তাদের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৮৯ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ঋণ বিতরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তা মেনেই ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। কেবল নিয়মের ব্যত্যয় হলে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেখানে হস্তক্ষেপ করে। তবে কোটিপতিদের ঋণ বেশি কেন, তা বলা মুশকিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাধারণত যাদের ব্যবসা বড়, তারা বেশি ঋণ পেতে পারেন। এ নিয়ে সাধারণীকরণ করা কঠিন।
কোটিপতিদের ঋণ বেশি কেন, তা বলা মুশকিল। সাধারণত যাদের ব্যবসা বড়, তারা বেশি ঋণ পেতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকার বেশি এসব ঋণগ্রহীতার মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১ হাজার ৪৮৩ জন, যাদের কাছে আছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট ঋণের ৪২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল কটেজ ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশের (নাসিব) সাবেক সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব বেশি অনীহা দেখায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ানো উচিত।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স