ঢাকা , শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমতলীতে শহিদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকীতে সেচ্ছায় রক্তদান ও আলেচনা সভা মগবাজারে কুপিয়ে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ ২ জুন বাজেট ঘোষণা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত বাংলাদেশের জন্য জাপান গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার : প্রেস সচিব বাড়ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন দেয়া সম্ভব -তারেক রহমান দেশে গণতন্ত্রের নিরাপদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে : খালেদা জিয়া নির্বাচন ইস্যুতে এনসিপির সমালোচনায় ববি হাজ্জাজ আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ উত্তাল নগর ভবনে পা রাখলেন ইশরাক আরও উজ্জীবিত আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ে কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা প্রশাসনে ১০ মাসেও ফেরেনি শৃঙ্খলা ভারী বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা শেখ হাসিনার আমলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে একসঙ্গে কাজ করবে সরকার, ইসি ও জাতিসংঘ মিডিয়ার হেডলাইন দেখে মন্তব্য করা যায় না-ইশরাক ইস্যুতে সিইসি নানামুখী চাপে দেশের অর্থনীতি
জাতিসংঘে ড. ইউনূস

বিশ্বনেতাদের নজর বাংলাদেশে

  • আপলোড সময় : ০১-১০-২০২৪ ১২:৩২:২২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-১০-২০২৪ ১২:৩২:২২ পূর্বাহ্ন
বিশ্বনেতাদের নজর বাংলাদেশে
নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বিশ্বনেতাদের কাছে পরিচিত মুখ, তাই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রথম সফরেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন


হাসিনা সরকারের পতনে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিপক্ষীয় সফর না হলেও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এই সফর করেন তিনি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রথম সফরেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ড. ইউনূস। এবারের সম্মলনে বিশ্বনেতাদের নজর ছিল বাংলাদেশের দিকে। নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নিলেও এবারের প্রেক্ষাপট ছিল অনেকটা ভিন্ন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এটিই ছিল প্রথম বিদেশ সফর। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে থাকেন সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা। ফলে বিশ্বনেতারা সরকারকে কতোটা গ্রহণ করেছে সেটি জানতে অনেকেই চোখ রাখছিলেন এবারের সফরের দিকে। তবে কূটনীতিকরা বলছেন, এবারের সফর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফল হয়েছে। নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বিশ্বনেতাদের কাছে আগে থেকেই পরিচিত মুখ। সেটির অনেকটা প্রতিফলন দেখা গেছে ড. ইউনূসের সফরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা প্রধানও সাক্ষাৎ করেছেন তার সঙ্গে। তারা সবাই সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। যেটি নতুন সরকারের চলার পথে সাহস যোগাবে। জাতিসংঘ ও নিউইয়র্কে একাধিক অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ সবার নজর কেড়েছে। বিভিন্ন আয়োজনে তার সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে। অনেককেই লাইন ধরে তার সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায়। একটি ইভেন্টে ড. ইউনূসের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বলভাবে ছবি তুলতে দেখা গেছে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে যান ড. মুহাম্মদ। সংক্ষিপ্ত সফরে আগে থেকেই বেশ কিছু সূচি নির্ধারিত ছিল ড. ইউনূসের। তবে এর বাইরেও অনেকের আগ্রহের প্রেক্ষিতে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশে থাকার আশ্বাস: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শাহবাজ শরীফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস। বৈঠকে ড. ইউনূসকে বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন করবে যুক্তরাষ্ট্র। ড. ইউনূস যে সংস্কার পরিকল্পনা করেছেন তাকে রূপ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহযোগিতা করবে। বাকি রাষ্ট্রপ্রধানরাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কাজে পাশে থাকাসহ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার কথা জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাস: হাসিনা সরকার পতনের আগে থেকেই দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই নিম্নমুখী। ফলে নতুন সরকারের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনা। এবারের সফরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা জানান তিনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জর্জিয়েভা জানান, বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে পাশে থাকবে আইএমএফ। বর্তমানে একটি মিশন ঋণ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় অবস্থান করছে। প্রতিনিধি দলটি আগামী মাসে আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদের কাছে তাদের প্রতিবেদন দেবে। ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের মঞ্চেও বক্তব্য দিয়েছেন মি. ইউনূস। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিজেও এসময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকসহ অন্যান্য বিশ্বনেতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের সবচেয়ে সফলতম সফর ছিল এবার। সফরকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তিনি উচ্চপর্যায়ের ৪০টি পার্শ্ববৈঠকে অংশ নেন। সকাল ৮টায় শুরু হতো তার বৈঠক। এরপরও প্রায় শতাধিক বৈঠকের আবদার রক্ষা করতে পারেননি। এবারের সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল ইউনূস-বাইডেন বৈঠকটি। যা ছিল ঐতিহাসিক। কারণ জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন তা বিরল। বাইডেন নিজ থেকে বাংলাদেশে কী কী সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি তার সরকারের পূর্ণ সমর্থন বাংলাদেশ পাবে বলেও জানান। দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরল ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম বলেন, ড. ইউনূসের এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের যে সফর এটা আমি বলব খুবই সফল এবং বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের সাফল্য বাংলাদেশের জন্য আর কেউ এর আগে মনে হয় না জাতিসংঘ থেকে বয়ে আনতে পেরেছে। বিষয় হলো যাদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন প্রথমেই বলতে হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, এটা একটা ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যাপার হলো। অনেকবার অনেকে চেষ্টা করেও যেটা হয় না। জাতিসংঘের অধিবেশনের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সচরাচর কারও সঙ্গেই দেখা দেন না, বাংলাদেশেরতো প্রশ্নই আসে না। এটা এবার হয়েছে। সেখানে জো বাইডেনের যে বডি লেঙ্গুয়েজ লক্ষ্য করলাম তাতে আমার মনে হয় তিনি খুবই আনন্দিত, খুবই উৎফুল্ল এবং তিনি আন্তরিকতা নিয়েই দেখা দিয়েছেন। বিশেষ করে তাদের যে আলিঙ্গন, এটা কোনো ফরমালিটি বা লোক দেখানো নয়। এটা আন্তরিকতা ছিল। তিনি বলেন, ড. ইউনূস অন্যান্য দেশের যে রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দেখা করেছেন সেগুলোও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল অনেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে খুবই আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে জানতে চান। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং বাংলাদেশে যে একটা মোড় পরিবর্তন হয়েছে সেটা সম্পর্কে। আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের প্রতি সরকার প্রধানদের আগ্রহ যতটা ছিল তার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল প্রফেসর ইউনূসকে দেখার, তার সঙ্গে কথা বলার এবং তার সান্নিধ্যে আসার। ব্যক্তি প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এই একটি সফরের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কূটনীতিক দিক থেকে বাংলাদেশ খুবই লাভবান হয়েছে তার এই সফরে। অত্যন্ত সফল একটি সফর হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স