শ্রমিক অসন্তোষ : * আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত * সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত
ঢাকার আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কারখানার মালিকরা। গতকাল সোমবার চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা। অথচ গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকার মন্ডল গ্রুপের সামনে বিক্ষোভের জেরে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। এছাড়া চারজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
নিহত ওই শ্রমিকের নাম কাউসার হোসাইন খান (২৭)। তিনি আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। গতকাল দুপুর ২টার দিকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী।
প্রাথমিকভাবে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন-ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান। বাকি আহতদের পরিচয় জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধ দুজন পিএমকে ও দুই জনকে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
শ্রমিকরা জানায়, গতকাল সোমবার সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ত্রিপক্ষীয় মিটিং চলছিল। এসময় সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে অন্যান্য কারখানার শ্রমিক সেখানে জড়ো হতে থাকে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করে। পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি চালায়। এসময় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হলে তাদের স্থানীয় পিএমকে হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এসময় এনাম মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক কাউসার হোসাইন খানকে মৃত ঘোষণা করে।
সাভার এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে আনা হয়। তাদের মধ্যে কাউসার মারা গেছেন। বাকি দুজনের চিকিৎসা চলছে।
ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক সুমন বলেন, গতকাল সকালে কারখানায় সবাই কাজ করছিল। আমাদের কারখানায় কোনো আন্দোলন হয়নি। তবে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে সেখানে যায়। সেখানে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেয়। এসময় লাঠিচার্জ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একপর্যায়ে গুলি ছুড়লে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আমি তাদের দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এছাড়া প্রায় ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল চিকিৎসা নিচ্ছে।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, কাউসার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ চারজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এনামুল হক মিয়া বলেন, একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার তলপেটে গুলি লেগেছিল। এ ছাড়া নয়ন নামে একজনের বুকের ডান পাশে গুলি লেগে বের হয়ে যায় এবং রাসেলের পেটেও গুলি লেগে বের হয়ে গেছে। নয়ন ও রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান ওই চিকিৎসক।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অপরদিকে, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার পরও নাশকতার দায় কার-এমন প্রশ্ন রেখে মালিকরা বলেন, যে কারখানাগুলো মাসের বেশিরভাগ দিন বন্ধ ছিল, সেখানে বেতন পরিশোধ করাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বাইরের সংকটের কারণে ভালো কারখানাগুলোও উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর আশ্বাসের পরও নিরাপত্তার ব্যাপক ঘাটতি আছে উল্লেখ করে মালিকরা জানান, এখনও ঠুনকো কারণে কারখানায় আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত রোববার কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে। লিড সার্টিফাইড কারখানাতেও আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
কারখানা আক্রান্ত হলে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাছে সহায়তা চেয়েও নিরাপত্তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তারা বলেন, শ্রমিকরা ভাঙচুর করবে, অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, আবার তাদের বিচার করা যাবে না, এটা হতে পারে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্পকে সচল রাখা কঠিন হবে। কারখানা মালিকরা দাবি করেন, অনেক ক্রেতা ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। অনেক ক্রেতার কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে এয়ার কার্গোতে পাঠাতে হচ্ছে, যেখানে হাজার হাজার ডলার মাশুল গুনতে হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কারখানা মালিকদের অভিযোগ
পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার
- আপলোড সময় : ০১-১০-২০২৪ ১২:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-১০-২০২৪ ১২:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকায় শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। সেসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যৌথবাহিনীর অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের টঙ্গাবাড়ী এলাকায় মন্ডল গ্রুপের সামনে এই ঘটনা ঘটে
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ