চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী সরকার
- আপলোড সময় : ৩০-০৯-২০২৪ ১১:৫৫:১৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৯-২০২৪ ১১:৫৫:১৩ অপরাহ্ন
চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অফিস কক্ষে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে, যা সামনের দিনে আরও উন্নত হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই থাকুক বাংলাদেশ ও চীন সম্পর্ক অটুট থাকবে। নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম পাঠানোয় চীনের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং পুনর্গঠন। বিপ্লবের পর চীন যেভাবে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। কারণ, সম্প্রতি বাংলাদেশও বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংস্কারকাজে চীনের পরামর্শ এবং সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন বিশ্বাস করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারবে। তিনি উপদেষ্টাকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান। উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। সাক্ষাৎকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, দূতাবাসের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক কাউন্সিলর সং ইয়াং এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব চুই ইফেং উপস্থিত ছিলেন।
গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে মানদণ্ড ধরে গণমাধ্যম কমিশন হবে: পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য যেসব নিবর্তনমূলক আইন আছে সব সমস্যা এক জায়গায় এনে সমাধান করার জন্য সংস্কার কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। গত রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ‘দ্য বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলারস ইন নর্থ আমেরিকা’ আয়োজিত নতুন বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও যোগাযোগ নীতির সংস্কার বিষয়ক ভার্চুয়ালে সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপকে পরস্পরবিরোধী অভিহিত করে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম যখন কমিশনের কথা আমরা আলোচনা করছি। অনেকে এই কমিশনের পক্ষে মত দিচ্ছেন, আবার অনেকে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। যে মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে যে সমস্যাগুলো আছে, যে বাধাগুলো আছে সেটার জন্য কমিশন দরকার আছে কি না। অনেকে ভাবছেন, কমিশন আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আনবে কি না। আরও বেশি বাধার কারণ হবে কি না। অনেকের ভেতর সেই ভয় বা আতঙ্ক আছে। আবার অনেকে বলছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন হওয়া দরকার। সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একসঙ্গে মিলে বসে একটা জায়গায় এনে আমরা হয়তো একটা রূপরেখা তৈরি করতে পারবো। সার্বিকভাবে গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে মানদণ্ড ধরে অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যম কমিশন গঠন করতে চায় বলেও জানান তথ্য উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আইনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, বরং গাইডলাইন আকারে দেখতে চায় সরকার। সেমিনারে তথ্য উপদেষ্টা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষক এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নেন। নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির সাংবাদিকতার সঙ্গে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকটি আলোচনা করেন। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ এখনো তৈরি হয়নি। নতুন বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার একটা সম্ভাবনার পথে রয়েছে। একটা সুযোগ বহু বছর পর আবার এসেছে একটা গণতন্ত্রপরায়ণ ছাত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। একটা নতুন আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের যেসব অগণতান্ত্রিক আইন ও নিয়মকানুন আছে, তার সংস্কার করে গণমাধ্যমের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও বর্তমানে বার্ড কলেজের ফ্যাকাল্টি ফাহমিদুল হক বলেন, যোগাযোগ নীতি যেন মিডিয়া খাতকে নিয়ন্ত্রণ নয়, সহায়তা করার জন্য প্রবর্তিত হয়। বিগত সরকার মিডিয়া খাতের জন্য অনেকগুলো নীতি ও আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু সবই করেছেন নিয়ন্ত্রণের আকাক্সক্ষা থেকে। তাই বিদ্যমান সব নীতি/আইন থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা যথাসম্ভব পরিমার্জনা করা দরকার, যাতে মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিকানা সংকট, প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সংকট ও সাংবাদিকতার মানদণ্ড ধরে রাখার মতো প্রধান ৩ সংকটের কথা উল্লেখ করেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আনিস রহমান। এ সময় তিনি সুপারিশ করেন, নতুন কমিশন হলে তা যেন যথাসম্ভব ইনক্লুসিভ হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদ বলেন, যে কোনো সময় যে কোনো টেলিভিশন সরকার বন্ধ করে দিতে পারে এই ভীতি নিয়ন্ত্রণের এক বড় হাতিয়ার। উন্নত দেশগুলোতে গণমাধ্যম কমিশন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এমন একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম কমিশন তৈরি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপালের উদাহরণ দিয়ে সেন্ট মেরি’স কলেজের ফ্যাকাল্টি ড. মোহাম্মদ আলা-উদ্দিন বলেন, সেখানে স্কুল পর্যায়েও সাংবাদিকতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। মুক্ত গণমাধ্যম কীভাবে কাজ করে তা শেখানো হয়। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরমতসহিঞ্চু সমাজ নির্মাণ করতে গণমাধ্যমে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকের নিয়মিত বেতন ও পেশাগত সুরক্ষার মাধ্যমে টেকসই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্যও নীতিমালায় দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। এ সময় মিডিয়া নীতিমালা ও নৈতিকতার নানা দিক তুলে ধরেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মীর আশফাকুজ্জামান। তিনি পেশাগত লড়াই ও চ্যালেঞ্জের দিকটি বোঝার জন্য কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের ওপর জোরারোপ করেন। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক আল আমিন রাকিব তনয় বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য কমিটি গঠন করার মতো যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছে না সার্চ কমিটি। এ সময় ফাহমিদুল হক বেশ কিছু নাম প্রস্তাব করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিসিএসএনএ প্ল্যাটফর্মের পরিচয় ও নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট ওসওয়েগোর ফ্যাকাল্টি ড. খায়রুল ইসলাম। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কর্নেল ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি ড. জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ায় যে কোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বিসিএসএনএ।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ