* পোশাক কারখানাগুলোতে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা * অচেনা শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করেছে পোশাক শিল্পে * অধিকাংশ পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে
শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানাগুলোতে কেটেছে অস্থিরতা। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোতে গতকাল রোববার সকাল থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। গত শনিবার ৩৬টি কারখানা বন্ধ থাকলেও গতকাল রোববার তা কমে ১৮টিতে নেমে এসেছে। এ ছাড়া সকালে কাজে যোগ দিয়ে ৪-৫টি কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলেও পরে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। গত শনিবার সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মালিক-শ্রমিক নেতা, সরকার ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শিল্পপুলিশ জানায়, অল্পসংখ্যক কারখানা ব্যতীত অধিকাংশ পোশাক কারখানা গতকাল রোববার খুলে দেয়া হয়েছে। শ্রমিকরাও শান্তিপূর্ণভাবে কারখানাগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। গত শুক্রবার ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের স্থানীয় নেতা ও কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে গত শনিবার সব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এখনও কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব কারখানা কর্তৃপক্ষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। দু-একদিনের মধ্যে এসব কারখানাও খুলে দেয়া হবে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা গতকাল রোববার থেকে খোলা রয়েছে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু মালিকরা পূর্ণ আস্থা পাননি। তারপরও শিল্প কারখানা খুলেছেন দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। কারখানায় স্বস্তি ফেরা নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা শঙ্কায়। কারণ তাদের কাছে এবারের আন্দোলন নতুন, যা ৩০ বছরে তারা দেখেননি। তাদের ভাষায়, এ আন্দোলনে শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্ব নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট বা যৌক্তিক দাবি। দাবি পূরণের পরও আন্দোলন থামেনি। বরং কাজে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বর্জন করেছে, চালিয়েছে ভাঙচুর।
এমনকি পুলিশের কাছেও নেই প্রকৃত অপরাধীদের তালিকা। কারণ পুলিশ সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য কাজে ফিরতে সময় নিচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন থানায় হামলার কারণে তাদের মনোবল ভেঙে গেছে এবং আস্থায় ফিরতে সময় নিচ্ছে। আন্দোলনের ধরন ও কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেক মালিকের। আর এটাই তাদের জন্য বড় আতঙ্ক।
শিল্প পুলিশ ও বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, ২ সেপ্টেম্বর শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি পোশাক, ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের শতাধিক কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। বিক্ষোভ শুরুর পর আশুলিয়ায় ৪০টি ও গাজীপুরে ৪৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। গাজীপুরের ১১টি তৈরি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। দুটি কারখানায় লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। ৪ সেপ্টেম্বর শ্রমিক বিক্ষোভের ১৬৭টি তৈরি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। অন্তত ২৫টি বড় ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। ৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভের কারণে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার ১২৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল।
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বাবলু বলেন, গত শনিবার ১৪ দিন পর কারখানা খুলেছি। মনটা ভালো। তবে ভালো থাকবে কি না তা নিশ্চিত না। কারখানা কেন বন্ধ হলো আর কেনই বা খোলা হলো জানি না। ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করি। এই প্রথম আন্দোলনের কারণ জানি না। আর এটাই বড় আতঙ্ক। কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। সব দাবি মেনে নিলাম। শ্রমিকরা চলেও গেলো। কিছুক্ষণ পর আবার আন্দোলন, জেনারেল ম্যানেজারের মাথা ফাটাল। তদন্ত করতে হবে কেন ঘটেছে এবং আন্দোলনে কারা জড়িত বলছিলেন বাবলু।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা অতীতে শ্রমিক অসন্তোষ প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এতটা জটিল ছিল না। আমি মনে করি, পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি উসকানি দিচ্ছে। শিল্পের স্বার্থে এটা এখনই শেষ হওয়া উচিত। বিক্ষোভ চলাকালে দেখা যায়, শ্রমিকদের চেয়ে বহিরাগত ও দুর্বৃত্তের সংখ্যাই বেশি। শ্রমিক অসন্তোষ আগের তুলনায় অস্বাভাবিক ছিল। সরকারের উচিত একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এই পরিকল্পিত হামলা ও ভাঙচুরের পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা। বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, এবারের শ্রমিক অসন্তোষ ছিল কঠিন ও অপ্রতিরোধযোগ্য। এর পেছনে একটি অলৌকিক শক্তি ছিল। এ ধরনের স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয় থাকলে এ খাত টিকবে না।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, হঠাৎ মারপিট শুরু হয়ে গেলো-ভাঙচুর শুরু হয়ে গেলো। মালিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেক কারখানায় লুট হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী না থাকলে আরও অনেক পোশাক কারখানা লুট হয়ে যেতো। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং কারখানার মালিকরা সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কারখানা চলবে এমন না, চলমান থাকতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা শ্রম আইন ভঙ্গ করবে তাদেরকে শ্রম আইনের আওতায় বিচার করতে হবে।
শিল্পপুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সারোয়ার আলম বলেন, গতকাল রোববার এই অঞ্চলে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় ১৮টি বন্ধ এবং দুটি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে। এর বাইরে শিল্পাঞ্চলের সকল কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে শিল্পাঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতি। এ ছাড়াও শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অব্যাহত রয়েছে যৌথ বাহিনীর টহল কার্যক্রম।

শিল্পাঞ্চলে কেটেছে অস্থিরতা
- আপলোড সময় : ১৬-০৯-২০২৪ ০১:৩৩:৪১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৯-২০২৪ ০১:৩৩:৪১ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ