ইলিশ মাছ পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কম। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ ইলিশ মাছ রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। ইলিশ মাছ স্বাদে যেমন অতুলনীয়, তেমনি পুষ্টি উপাদানেও ভরপুর। ইলিশ একটি চর্বিযুক্ত মাছ। ইলিশ মাছ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। ইলিশে বিদ্যমান ভিটামিন এ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের জন্য উপকারী। ইলিশ রক্ত কোষের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশে রয়েছে ২৫ গ্রাম প্রোটিন, ২০৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩ দশমিক ৩৯ গ্রাম শর্করা, ২ দশমিক ২ গ্রাম খনিজ ও ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম চর্বি। আরও রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। ইলিশ ভিটামিন ডি’র ভালো উৎস। ভিটামিন ‘ডি’ মানবদেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। ইলিশ উৎপাদনে ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পরিসংখ্যান মতে, ৮৬ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এর পেছনে দায়ী নদী দখল-দূষণ, বালি উত্তোলন, নাব্য সংকট, জাটকা নিধন, অবৈধ জালের ব্যবহারসহ নানা কারণ। আশঙ্কা আছে, উল্লিখিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে শূন্যের কোটায়। ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও ইলিশের সংকটে মেঘনাপাড়ের জেলেরা। দিনরাত নদীতে জাল ফেললেও কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মেলে না। আমাদের অতিমাত্রার লোভ, নদীর নাব্য সংকট, শব্দদূষণ, নদীদূষণ, নদীর জল দূষণের ফলে ইলিশ সংকট আজকে অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছেছে। এখনও সময় এবং সুযোগ আছে এই সংকট উত্তরণের। অনেকটা আমাদের সাধ্যের মধ্যে। আমাদের নদীগুলো আজ প্রায় মৃত। দখলদারদের অধীনে অধিকাংশ নদী। নদীদূষণ নদীগুলোকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। যে নদীগুলো ইলিশের চারণভূমি, ইলিশের আঁতুড়ঘর সেই নদীগুলোয় প্রচুর ডুবোচর।
এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর জল দূষণ আজকে অতিরিক্ত মাত্রায় পৌঁছেছে। দেশের অর্থনীতির চাকা উন্নতির পথে ধাবমান রাখতে ইলিশ হতে পারে মোক্ষম পণ্য। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে জেলেদের জীবনে যেমন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, নিরাপত্তা আসবে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকাও সচল থাকবে। ডলার সংকট মোকাবিলায়ও ভূমিকা রাখবে। ইলিশের উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করতে সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সমস্যা সমাধানের পথ সুগম করবে বলে আশা করা যায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata