মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। মশার উপদ্রব বাড়লেও বাড়েনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম। এ নিয়ে সিটি করপোরেশন উদাসীন, বলছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে নগরীতে বেড়েছে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ। চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৯ জন মারা গেছেন। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩০ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু মশাবাহিত রোগ। এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। সিটি করপোরেশনকে বাড়াতে হবে মশা নিধন কার্যক্রম। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে চলতি বছর ৭৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩২, আগস্টে ২০২, জুলাইয়ে ১৯৮, জুনে ৪১, মে-তে ১৭, এপ্রিলে ১৮, মার্চে ২৮, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ এবং জানুয়ারিতে ৬৯ জন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ১৪ হাজার ৮৭ জন আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ৪৪৫ জন আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ৪১ জন মারা গেছেন। ২০২১ সালে ২৭১ জন আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছেন পাঁচ জন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে চলতি বছর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পুরুষ দুজন, নারী ছয় জন ও শিশু একজন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ২৯২, নারী ১৮৭ ও শিশু ১৫১ জন। এর মধ্যে মহানগরে আক্রান্ত ৪০৬ জন এবং জেলার ১৫টি উপজেলায় ৩২৪ জন। জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত লোহাগাড়ায়। এই উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৩ জন। এরপরের অবস্থানে আছে সাতাকনিয়ায় ৪৪, সীতাকুণ্ডে ২৩, বোয়ালখালীতে ২০, হাটহাজারীতে ১৪, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ায় ১৩ জন করে, মীরসরাইয়ে ১০ জনসহ অন্যান্য উপজেলায় আক্রান্তরা রয়েছেন। অবশ্য ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে এখনও গত বছরের মতো প্রকট হয়নি। তবে বিপদ দূর হয়নি, কেননা এডিস মশার প্রজননের মূল মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে। চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। গত বছরের বিপর্যয় মাথায় রেখে এখনই মশা নিধন কার্যক্রমে জোর দেওয়া উচিত বলে চিকিৎসকরা মত দিলেও সিটি করপোরেশনের এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে নগরবাসীর মনে আশঙ্কা থাকলেও ইতোমধ্যে মশা বেড়ে গেছে। তবে নগরীতে মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চোখে পড়ছে না কারও। ওষুধ ছিটানোর পর্যাপ্ত জনবল এবং ওষুধ মজুত থাকলেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না বলে দাবি নগরবাসীর। নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ সংগীত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ তালুকদার বলেন, আমার এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। গত এক বছরে আমার এলাকায় কেউ ওষুধ ছিটাতে এসেছে, এ রকম চোখে পড়েনি। হয়তো সিটি করপোরেশনের খাতা-কলমে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলমান আছে। তবে বাস্তবে তা চোখে পড়ছে না কারও। ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। বিকাল নামতেই কয়েল ছাড়া বাসায় বসা যায় না। মশা কমছে না, দিন দিন বাড়ছে। একই কথা বলেছেন বহাদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল হক। তিনি বলেন, মশা নিধনে সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ এব উদাসীন। প্রতি বছর মশা নিধনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। কোনো সুফল মিলছে না। নগরজুড়ে পর্যাপ্ত স্প্রে-ম্যান থাকলেও তারা ঠিকভাবে ওষুধ ছিটাচ্ছে না। চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহিবলেন, মশা নিধনে এবার আমাদের প্রস্তুতি ভালো। চসিকের গুদামে ছয় মাসের ওষুধ মজুত আছে। আমাদের জনবল এবং ওষুধের কোনো স্বল্পতা নেই। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে আগে যেখানে ২৫০ জন স্প্রেম্যান ছিল বর্তমানে বাড়িয়ে ৩৫০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষ স্প্রে টিম। বর্তমানে মশাবাহিত রোগ কিছুটা বাড়ছে। আশা করছি, নভেম্বর নাগাদ আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এণ্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, গেলো বছর দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে। এবার গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম আছে। তবে দিন দিন হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেমন হবে, তা বায়ুর আর্দ্রতাসহ পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে। এডিস মশার ডিম তিন বছর পর্যন্ত জীবন্ত থাকে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে ডিম যদি পানির সংস্পর্শ পায় তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এটি পরিপূর্ণ মশায় পরিণত হয়। যে মশা ডিম পেড়েছিল, সেটির দেহে যদি এডিস বা ডেঙ্গুর ভাইরাস থাকে তাহলে ওই ডিম থেকে যে মশাটি হবে সেটির মধ্যে ওই ভাইরাস থাকবে। ওই মশা কাউকে কামড় দিলে সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমবলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে মশা মারতে হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আবারও সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি। যাতে তারা মশা নিধন কার্যক্রমে গতি বাড়ায়। মশা নিধন হলেই ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশাবাহিত রোগ কমবে। গত বৃহস্পতিবার নতুন করে ১৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন আরও বলেন, জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধও মজুত আছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের যেসব কর্মী কাজ করেন, তাদেরকে বলা হয়েছে যাতে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
* নগরীতে বেড়েছে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ * চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৯ জন মারা গেছেন * চলতি বছরে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩০ জন
ডেঙ্গু আক্রান্ত-মৃত্যু বাড়ছে মশা নিধনে উদাসীন চসিক
- আপলোড সময় : ১৪-০৯-২০২৪ ০১:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৯-২০২৪ ০১:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ