ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কাশ্মীরে ভারী বৃষ্টির পর ভূমিধস, নিহত ৩ রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইউক্রেনে হামলা চলছে : জেলেনস্কি জার্মানিতে বন্দুক হামলায় নিহত ২ ইস্টার বার্তায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান পোপ ফ্রান্সিসের নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ৫৬ জন নিহত যুদ্ধবিরতি চলাকালীন দোনেৎস্কে আক্রমণ করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী: রিপোর্ট ৭০তম জন্মদিনে পৃথিবীতে ফিরলেন নাসার প্রবীণতম সক্রিয় নভোচারী মস্কোয় ইস্টার যুদ্ধবিরতি নিয়ে সংশয় প্রথম দিন হতাশায় শেষে হলো টাইগারদের লাহোরের জন্য দোয়া চাইলেন রিশাদ কানাডা টি-১০ লিগে নাম লেখালেন মিরাজ-তামিম শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা দিলো বিসিবি তীরে এসে তরী ডোবালো রাজস্থান অবিশ্বাস্য কামব্যাকে জয় পেলো বার্সা শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় সেরা চারে ম্যানসিটি হেইডেনহেইমের সাথে বায়ার্নের বড়ো জয় নতুন বাজেটে বৈষম্য কমবে সব ক্ষেত্রে সংবিধান পুনর্লিখনে গণপরিষদ-আইনসভা নির্বাচন একই হবে ৬০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা অভিযান ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে ‘যীশু খ্রিস্টের কষ্ট’র সঙ্গে তুলনা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের
আট-লেন মহাসড়ক

নকশায় গুরুত্ব পাচ্ছে বন্যা প্রতিরোধ

  • আপলোড সময় : ১২-০৯-২০২৪ ১২:৪৬:৫০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৯-২০২৪ ১২:৪৬:৫০ পূর্বাহ্ন
নকশায় গুরুত্ব পাচ্ছে বন্যা প্রতিরোধ
*  ভারতের ছেড়ে দেয়া ঢলে কুমিল্লা ও ফেনীর মহাসড়ক রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত
* যাত্রাবাড়ী-চট্টগ্রাম ২৩১ কিলোমিটার মহাসড়ককে অত্যাধুনিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোল বিশিষ্ট ৮ লেনে উন্নীত করা হচ্ছে


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ভবিষ্যতে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। বিশেষ করে ৮-লেনে উন্নীতকরণের মাধ্যমে মহাসড়কটিকে একটি অত্যাধুনিক যোগাযোগ অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, তার নকশায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিষয়টি। একইসঙ্গে পুরো মহাসড়কটিকে লিমিটেড অ্যাক্সেস কন্ট্রোলের আওতায় আনা হবে। গতকাল বুধবার সওজ-এর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ভারতের ছেড়ে দেয়া ঢলের পানির তোড়ে মহাসড়কটি স্থানে স্থানে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। বন্যা চলাকালীন কুমিল্লা ও ফেনীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে মহাসড়কটি। বিশেষ করে ফেনীর লালপুল ও লেমুয়া ব্রিজ এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বন্যার খরস্রোতের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার যানবাহন আটকে পড়ে তৈরি হয় যানজট। দেশের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে। স্বাধীনতার পর থেকেই দফায় দফায় উন্নত হয় এ মহাসড়ক। বৃদ্ধি পায় এর প্রশস্ততাসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত মান। সর্বশেষ দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত এ মহাসড়কটিকে উন্নীত করা হয় ফোর লেনে। তবে দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীত হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সংখ্যক যানবাহন। এ পরিস্থিতিতে এটিকে নতুন করে প্রশস্ত করার মাধ্যমে অত্যাধুনিক একটি সড়ক অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩১ কিলোমিটার মহাসড়ককে একটি অত্যাধুনিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোল বিশিষ্ট ৮ লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। যেখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে মাত্র চার ঘণ্টাতেই। এরই মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রায় শেষ। খুব শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর শুরু হবে ডিটেইল ডিজাইনিং বা চূড়ান্ত নকশার কাজ।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কটি প্রশস্তকরণের এ প্রকল্পে এখনও নকশার কাজ চলমান থাকায় বন্যার কারণ ও গতিপথের বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে নেয়া হচ্ছে। মহাসড়কের যেসব স্থানে বন্যার পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, সে জায়গাগুলোসহ আগামীতে যেসব জায়গায় এ ধরনের বন্যার আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে, মহাসড়কের সে স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে বন্যা প্রতিরোধী ডিজাইন করা হবে। নেয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা, যাতে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল অব্যাহত রাখা যায়। বিষয়টির ওপর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি পুরো মহাসড়কটিকে লিমিটেড অ্যাক্সেস কন্ট্রোলের আওতায় আনা হবে। এটিকে ভবিষ্যতে টোল সড়কে রূপান্তরিত করা হলেও যেন কারিগরি দিক থেকে কোন সমস্যা পোহাতে না হয়, তার অংশ হিসেবেই এ পদক্ষেপ। এছাড়া, সড়কের যে কোন স্থান থেকে চাইলেই হুট করে কোন যানবাহন এ মহাসড়কে উঠতে পারবে না। এজন্য তাদের ব্যবহার করতে হবে অ্যাক্সেস রোড। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে মহাসড়কে উঠতে হবে সব যানবাহনকে। এছাড়া ঠিকাদারদের কাজ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ের জন্য থাকবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট। মহাসড়কটিতে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করতে সেখানে থাকবে না কোন ইন্টারসেকশন। এর বদলে সে স্থানগুলোতে থাকবে ভাঙ্গা কিংবা হাটিকুমরুলের মতো ইন্টারচেঞ্জ। এতে সহজেই যাত্রীবাহী গণপরিবহন মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারবে।
এদিকে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে উন্মোচিত হতে শুরু করে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের নামে নজিরবিহীন লুটপাটের বিষয়টি। পাশাপাশি রিজার্ভে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা না থাকা এবং লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের আর্থিক খাতেরও বর্তমানে বেহাল অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে বিগত সরকারের আমলে হাতে নেয়া বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে এগুচ্ছে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্পটির ব্যাপারে বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেছে সওজ সূত্রে। পাশাপাশি এ প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর মনোভাবও আশাব্যঞ্জক বলে জানিয়েছে সূত্রটি। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, সে অনুযায়ী চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের  ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব’ বা ডিপিপি উপস্থাপন করা হবে। তার আগেই সম্পন্ন হবে ডিটেইল ডিজাইন বা চূড়ান্ত নকশা। বর্তমানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে চূড়ান্ত হওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। ডিপিপি অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত করা হবে প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি। এরই মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে এ প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে আশ্বাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সমীক্ষার কাজে সহযোগিতাও দিচ্ছে এডিবি।
উল্লেখ্য, মাত্র আট বছর আগে ?পুরনো দু-লেনের এ মহাসড়ককে উন্নীত করা হয়েছে চার লেনে। এরই মধ্যে সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করছে এ মহাসড়কে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালেই এ মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক যানবাহন চলার সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৩০ হাজারের ওপর। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে দেশে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকায় দেশের বাকি অংশের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগের মূল সড়ক হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্ব বেড়ে যাবে আরও বেশি। এতে স্বাভাবিকভাবেই এ মহাসড়ক দিয়ে ভারী যানবাহনসহ সব ধরনের যানবাহনের চাপ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে এ মহাসড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। এমনকি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে করার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। যদিও পরে সে পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার। তবে বাস্তবতার নিরিখে নতুন করে পরিকল্পনা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে প্রশস্ত করার। এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী এডিবির সহায়তায় গত বছর শুরু হয় এর সমীক্ষা। মূলত আগামী ২০ বছরের যানবাহন চলাচলের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে করা হচ্ছে বর্তমান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে মহাসড়কটিকে সার্ভিস লেনসহ ছয় থেকে আট-লেনে উন্নীত করা হবে। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য বিবেচনায় নিয়ে মহাসড়কের কোনো অংশ ছয় লেন এবং কোনো অংশ আট লেন হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পাশাপাশি এ মহাসড়কের দুপাশে অবস্থিত ঘনবসতি, স্থাপনা, হাটবাজার ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে মহাসড়কের কোনো অংশে ওভারপাস এবং কোনো অংশে টানেল নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়। এর আগে, এ মহাসড়ক প্রশস্তকরণের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাব্বির হাসান খান সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, লাভজনক ও আকর্ষণীয় প্রকল্প হওয়ায় এখানে বিনিয়োগ করতে সবাই আগ্রহী। এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে এডিবি ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ (এআইআইবি) অন্যান্য বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ আছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স