# বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৭৯১ মেগাওয়াট, চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম
# লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প, কল-কারখানার উৎপাদন
# দেশে এত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকার পরেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে
# বর্তমানে নানা সংকটের কভরণে ধুঁকছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো
# গত সাড়ে ১৫ বছরে খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে
রাজধানীসহ সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তবে ঢাকার বাইরে আরও বেশি তাপমাত্রা ছিল। ভাদ্র মাসের তাল পাকা এই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে ভোগান্তির মুখে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, গাজীপুর, টঙ্গী ও কালিয়াকৈর এলাকায় শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৭৯১ মেগাওয়াট, চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম। দেশে এতো বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকার পরেও ঘনঘন লোডশেডিংয়ের পেছনে রয়েছে নানা সংকট। অথচ গত সাড়ে ১৫ বছরে খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। ঢাকা এবং বড় শহরগুলোতে লোডশেডিং তুলনামূলক কম হলেও গ্রামাঞ্চলে এবং ছোট শহরগুলোতে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক, রাইস মিলের শ্রমিকসহ বিভিন্ন খাতের ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের আয় কমেছে। গবাদি পশুর খামারিরাও বড় ধরনের আর্থিক সংকটের আশঙ্কা করছেন লোডশেডিংয়ের কারণে। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদনও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো এলাকায় গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি বেশি হলে রাজধানী ঢাকায়ও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্র বলছে, চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম পাওয়া যাচ্ছে। গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিং ছিল না। আবার কোনো কোনো এলাকায় ৫০ শতাংশের বেশি ঘাটতি রয়েছে। এতে দিনের প্রায় অর্ধেক সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা অঞ্চলে। যদিও দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার ৭৯১ মেগাওয়াট। চাহিদা এখন ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের একটি টার্মিনাল (সামিটের মালিকানাধীন) তিন মাস ধরে বন্ধ। এতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন কমেছে। বিল বকেয়া থাকায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ কমেছে ৫০০ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও সর্বোচ্চ চাহিদায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কারণ, তারাও অনেক টাকা পাবে। তাই ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা। তাদের বিদ্যুৎ বিল পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ডলারের (প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা) বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি ডলার (৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা) পরিশোধের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। বকেয়া বিল পরিশোধে চাপ দিচ্ছে তারা। কেন্দ্রটির কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে উৎপাদন কমিয়ে এক হাজার মেগাওয়াটে আনা হয়েছে।
ব্যাপক লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বেশি হারে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প নেয়া শুরু হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ পাস করা হয়, যা দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত। এ আইনের অধীন দরপত্র ছাড়াই নির্মাণ করা হয় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রথমে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা যুক্ত হলেও পরে আওয়ামী লীগের নেতারা নিতে থাকেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি, উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ গুণ। আর কেন্দ্র ভাড়া বেড়েছে ১৬ গুণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূলত বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে এভাবে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ সময় দেখা গেছে, ৫ হাজার থেকে বেড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট, যা চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। যদিও অর্ধেকের মতো সক্ষমতা অলস পড়ে থাকে। পরিশোধ করতে হচ্ছে সক্ষমতার ভাড়া, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। অথচ বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে কেন্দ্র ভাড়া দিতে গিয়ে সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তাতেও ওঠেনি উৎপাদন খরচ। তখন দিতে হয়েছে বিপুল ভর্তুকি, যা সরকারের আর্থিক সক্ষমতার ওপর চাপ ফেলেছে। চাপে পড়েছে অর্থনীতিও। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে কেন্দ্র ভাড়া ছিল ২ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্র ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। সবশেষ অর্থবছরের (২০২৩-২৪) হিসাব চূড়ান্ত হলে তা ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে পিডিবি সূত্র। দেড় দশক আগে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল গড়ে ২ টাকা ৫৩ পয়সা, এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৩৩ পয়সা। দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। এরপরও প্রতিবছর সরকারি ভর্তুকি বরাদ্দের ওপর চাপ বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা আছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিগুলোই হয়েছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে, যা সংকটে ফেলেছে মানুষকে। নতুন সরকার চুক্তিগুলো পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীকে কমিটির আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর। দরপত্র ছাড়া গত সরকারের করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করবে কমিটি।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবেলায় পর্যাপ্ত জ্বালানির সংস্থান রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হাসিব চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আকস্মিকভাবে গ্রিড বিপর্যয় ঘটলে কিংবা গ্রিড থেকে বড় কোনো সক্ষমতা আউট হয়ে গেলে তা মোকাবিলার জন্য মোটা দাগে দুটি বিষয় প্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণ থাকতে হয়। এর একটি হলো যে সক্ষমতার সরবরাহ গ্রিডে কমছে, তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা। সে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পর্যাপ্ত জ্বালানির সংস্থান রাখা। দ্বিতীয়ত, পাওয়ার প্লান্ট নির্দিষ্ট একটি সময়ে রক্ষণাবেক্ষণে নিতে হয়। ফলে গ্রিড ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবসময়ই হিসাবটাও রাখতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ খাতের দুজন ব্যবসায়ী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে। এটি হয়েছে মূলত জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ হয় জ্বালানির দাম বাবদ। সেই জ্বালানির দাম বেড়েছে ১৬৩ শতাংশ। এটি না হলে বিদ্যুৎ খাতে কোনো ভর্তুকির প্রয়োজন হতো না। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলত না। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিগুলোই হয়েছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে, যা সংকটে ফেলেছে মানুষকে। নতুন সরকার চুক্তিগুলো পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে উত্তরের কয়েক কোটি গ্রাহক। প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। নর্দার্ন ইলেকট্রি সাপ্লাই (নেসকো) বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। এদিকে উত্তরের ১৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কয়েক দিন থেকে প্রচণ্ড তাবদাহ প্রবাহিত হচ্ছে এ অঞ্চলে। এ অবস্থায় ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে গ্রাহকদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। প্রতিটি সমিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ৭০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। কিন্তু চাহিদার অনেক কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে সমিতিগুলো। রংপুরের শঠিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় গ্রাহক ৬ লাখের ওপর। এ সমিতিতে প্রতিদিনের চাহিদা ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ মেগাওয়াট। ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ মেগাওয়াট। প্রায় একই অবস্থা উত্তরাঞ্চলের ১৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। কারখানা মালিকরা বলছেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তারা এ অবস্থা উত্তরণে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক মোল্লা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গতকাল আমাদের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩১৩ মেগাওয়াট, কিন্তু সরবরাহ ছিল মাত্র ১৭০ মেগাওয়াট। এ সমিতির আওতায় শিল্প ও আবাসিক মিলিয়ে পাঁচ লাখেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন।
পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের কোম্পানি সচিব র?্যাক লিটন বলেন, দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে জেনারেটর দিয়ে কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। তিনি আরও বলেন, জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন চালু রাখতে গিয়ে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
চামড়া খাতের সদর ট্যানারির মালিক মাসুদ চৌধুরী বলেন, দিনে ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যেতে হচ্ছে, এতে উৎপাদন ব্যয় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।
সাভারের নামাগেন্ডা এলাকার বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, তার উপর এত লোডশেডিং, বাচ্চাদের লেখাপড়ারও ক্ষতি হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে ২ ঘণ্টার আগে ফিরে আসে না, সারাদিনই এমন চলছে, যোগ করেন তিনি।
আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার বাসিন্দা শামসুজ্জোহা মিঠু বলেন, দিনে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে, এক ঘণ্টা থাকে না। গড়ে দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না, গভীর রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরেই তারা এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান বলেন, ২০২১ সালে চাহিদা হওয়ার কথা ছিল ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বাস্তবেও অনেকটা তাই হয়েছে। ২৫ শতাংশ বাড়তি ধরে উৎপাদন সক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ১৮ হাজার মেগাওয়াট। করা হয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াট (২০২১)।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, গ্যাসের সরবরাহ কম, বকেয়া বিলের চাপ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, দরপত্র ছাড়া খেয়াল-খুশির চুক্তি করে অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এটি করেছে। কেন্দ্র ভাড়া দিতে দিতেই দেউলিয়া হওয়ার দশা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি সংশোধন বা বাতিল করতে হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জ্বালানি নিশ্চিত না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা করে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। কোনো অনিয়ম পেলে কমিটি সুপারিশও করবে। একটু সময় লাগবে। তবে মেয়াদ শেষে কোনো কেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অধিকাংশ সময় অলস বসে থাকে, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না, এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন
- আপলোড সময় : ১১-০৯-২০২৪ ১২:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০৯-২০২৪ ১২:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ