বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
বন্যার পানি নামার সঙ্গে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেগমগঞ্জে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পানিবন্দি এবং জলাবদ্ধতায় এখনো লাখ লাখ মানুষ। বেশির ভাগ বাড়ি এবং বসতঘরে এখনো পানি। উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো জলাবদ্ধ এবং মাঠে পানি। বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে এখন মেঝেতে রেখেও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এর বাইরে গুরুতর নয় এমন ডায়রিয়া রোগীকেও বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাশ বলেন, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১১৯ জন রোগী ভর্তি আছেন, এর মধ্যে ৯৮ জন রোগীই ডায়রিয়া আক্রান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৫১ জন ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ৯৮ জনের মধ্যে কেউ দুই দিন কেউ তিনদিন, কেউ ৫ দিনও ভর্তি আছেন। গড়ে প্রতিদিন একটা ৫০ বেডের এই হাসপাতালে শুধুমাত্র ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন প্রায় ৫০ জন। এর বাইরে অন্যান্য রোগীও আছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর থেকেই হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ও বেড কাভারেজ অনেক আগেই অতিক্রম করেছে। ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ডায়রিয়ার ৫১ রোগীর মধ্যে ৩০ জনই শিশু। সবমিলিয়ে ডায়রিয়া আক্রান্তদের প্রায় ৭০ ভাগই শিশু। চর্মরোগ আর ডায়রিয়ার প্রকোপে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানাতে চাইলে তিনি আরো বলেন, প্রিপারেশন এতোদিন সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে কলেরা স্যালাইন, স্যালাইন সেটসহ তিন চারটা জিনিসের সংকট আছে। সিভিল সার্জন অফিসে কলেরা স্যালাইন আসছে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করি, সংকট হবে না।এছাড়া বন্যার সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন রকমের চর্মরোগ। বিপুল সংখ্যক রোগী বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে এসে সেবা নিচ্ছেন।
বেগমগঞ্জের দরবেশপুর গ্রামের বাসিন্দা জসীম উদ্দিন ও তার স্ত্রী ৩-৪ দিন ধরে চুলকানি জাতীয় চর্মরোগে ভুগছেন। ডাক্তার দেখানোর পর ২ ধরনের ওষুধ হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হয়েছে, আরেকটি ওষুধ কিনতে হবে বাইরে থেকে। আইসিডিডিআরবি’র ফিল্ড এটেন্ডেন্ট মো. শাহাবুদ্দিন হাসপাতালে বলেন, আগে রোগী কম থাকলেও বর্তমানে বেডের বাইরে এখন ফ্লোরেও ভর্তি, সব ডায়রিয়ার রোগী। ৩-৪ দিন ধরে এই সংখ্যা বাড়তির দিকে। এখন ডায়রিয়া চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চিকিৎসকসহ সেবা দিচ্ছে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন এবং সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ ওষুধও সরবরাহ করছেন।
ব্র্যাকের প্রোগ্রাম অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি সমস্যা চর্মরোগ আর ডায়রিয়া। পানি কমে যাওয়ার পর থেকে বিশেষ করে বাচ্চা এবং মহিলাদের চর্মরোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। আমরা ফিল্ডে অনেক ডায়রিয়া রোগী পাচ্ছি। ইমার্জেন্সি সিচ্যুয়েশন হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছি।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, বন্যাদুর্গতের সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে খাদ্য, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ছাড়াও বিভিন্নভাবে এখনো সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বেগমগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক খাল পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করেছেন। তবু পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে লোকজনের কষ্ট যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও। তিনি বলেন, কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি অনেকটা স্থির হয়ে আছে। পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। কিছু এলাকায় পানি কমার কারণে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যাও কিছু কমেছে। তবে বন্যাদুর্গতের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ছাড়াও বিভিন্নভাবে এখনো সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, উপজেলার বেশির ভাগ বাড়ি এবং বসতঘরে এখনো পানি। উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো জলাবদ্ধ এবং মাঠে পানি। এ পরিস্থিতিতে বন্যার পানি নামার যে গতি, তাতে আগামী এক সপ্তাহেও ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বন্যার্ত এলাকার লোকজন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata