ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বিএসএফ মহাপরিচালকের ব্যাখ্যায় দ্বিমত বিজিবির ডিজির ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন মৎস্য ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শিশু ধর্ষণ আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ সিলেটে পুকুর থেকে সাদাপাথর উদ্ধার ভোলাগঞ্জের পাথর লুট করে ১৫০০-২০০০ ব্যক্তি বাংলাভাষী লোকজনকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করতে দেব না- মমতা রোডম্যাপকে স্বাগত জানাই-জোনায়েদ সাকি ইসির রোডম্যাপে খুশি বিএনপি-মির্জা ফখরুল ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা মেসির জোড়া গোলে ফাইনালে ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে গ্রিমসবির কাছে হেরে বিদায় নিলো ম্যানইউ নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন হামজা ‘মুসলিম হওয়ার কারণে অনেকে আমাকে টার্গেট করেন’ ভারতের ২৬ বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ দেখছেন না শ্রীকান্ত নতুন ক্যাটাগোরিতে বেতন কত কমল বাবর-রিজওয়ানের? বড় ব্যবধানে হারলো সাকিবের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না: স্কট এডওয়ার্ডস রাকসু নির্বাচনের তফসিল ৩য় বারের মতো পুনর্বিন্যস্ত পিছিয়েছে ভোট জকসু নির্বাচনে বয়সসীমা থাকছে না

থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ

  • আপলোড সময় : ০৯-০৯-২০২৪ ১০:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৯-২০২৪ ১০:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন
থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ

আশুলিয়ায় সোমবার আরও ৯০ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা * শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক শিল্পের ক্ষতি ৫ হাজার কোটি টাকা * আশুলিয়ায় সোমবার আরও ৯০ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা * শ্রমিক অসন্তোষে পোশাক শিল্পের ক্ষতি ৫ হাজার কোটি টাকা


নানামুখী উদ্যোগেও সাভার ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে থামছে না পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ। দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে সরকার, মালিকপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির পরও শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও হামলা চালিয়ে কারখানা ভাংচুর করেছে। আশুলিয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গতকাল সোমবার হঠাৎ ৯০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই অসন্তোষের কারণে গাজীপুরেও অনেক কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু কারখানা সচল হলেও উৎপাদনের মাত্রা কমে গেছে। যার ফলে অনেক কারখানার মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)এর মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, গত এক মাসে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা দাবি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষে শতাধিক শিল্প-কারখানায় ভাংচুর করা হয়। একই সঙ্গে আগুন দেয়া হয়। এ সময়ে দুই শতাধিক কারখানার উৎপাদন ও বিপণনপ্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এইসব শিল্পের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।
জানা গেছে, গত রোববারের পর গতকাল সোমবারও অস্থিরতা বিরাজ করে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে। পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে গতকাল সোমবার আশুলিয়ার অন্তত ৯০টি কারখানার বন্ধ করে দেয়া হয়। বাকি কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সোমবার সকালে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সকালে বেশ কয়েকটি পোশাককারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে গতকাল সোমবার বন্ধ রয়েছে অন্তত ৯০টি কারখানা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নাশকতা ঠেকাতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে, ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) পুরাতন জোনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে লেনি ফ্যাশন নামের একটি পোশাককারখানার সাবেক শ্রমিকরা। বকেয়া পাওনার দাবিতে এ বিক্ষোভ করেন তারা। শ্রমিকদের অভিযোগ, চার বছর আগে কারখানাটি বন্ধ করে দিলেও এখনো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি তাদের পাওনা। যতক্ষণ না তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে কর্যক্রম শুরু না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, বিক্ষোভের মুখে শিল্পাঞ্চলটিতে সোমবার বন্ধ রয়েছে ৯০টি কারখানা। অন্যান্য কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে গত রোববার আশুলিয়ায় আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যাপক হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের অনেকে মুখোশ পরিহিত ছিল। দুপুরে আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকার আলিফ ভিলেজ লিমিটেডের আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড ও লাম মিম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ছাড়া গত রোববার সন্ধ্যায় আশুলিয়ার শিমুলতলীতে ইউফোরিয়া নামে একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। কারখানার কয়েকজন কর্মীকে তারা মারধর করেন। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর র?্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল চন্দ্র।
শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে গত কয়েক দিন নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কারখানার মালিক, শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েও হয় সমন্বয় সভা। পুরো আশুলিয়ায় নেয়া হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পরও আশুলিয়া শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ থামানো যাচ্ছে না।
অন্যান্য দিনের মতো গত রোববার সকালে বেশ কয়েকটি কারখানায় যোগ দিয়ে এক পর্যায়ে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান শ্রমিকরা। কারখানার ভেতর তারা বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, অন্যেয্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা শ্রমিক নয়। কারা আন্দোলন করছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার। মালিকপক্ষ বলছে, যৌথ বাহিনীর বারবার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।
পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের চেয়ে পুরুষ বেশি নিয়োগ দিতে হবে প্রধান এ দাবিসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে ১১ দিন ধরে অসন্তোষ চলছে শিল্পাঞ্চলে। পোশাক কারখানায় পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। তবে গত কয়েক বছরে নারী শ্রমিকের হার অনেক কমেছে। গবেষণা সংস্থা ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) পরিসংখ্যান বলছে, পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার এখন ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একসময় এ হার প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে পোশাক খাতে মজুরি ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হয়নি। এখন মজুরির বাইরে নানা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন প্রমাণ করে, এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। আবার কোনো কোনো কারখানায় কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। তার মতে, গত সাড়ে ১৫ বছর একপক্ষ কারখানা থেকে ঝুট, কাটপিস, স্টকলটসহ নানা দিক থেকে সুবিধা ভোগ করেছে। এখন নতুন পক্ষ তৈরি হয়েছে। দু’পক্ষের স্বার্থের দ্বন্দ্বেও শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব চলছে শ্রমিক আন্দোলনের নামে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করেন। তবে সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকেই কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যান। মূলত, দাবি নিয়ে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। তাই এমন ঘটনা ঘটছে। তবে মালিক পক্ষ দাবি নিয়ে শ্রমিকের সঙ্গে বৈঠক করলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) এর মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেছেন, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা দাবি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শিল্প-কারখানায় ভাংচুর করা হয়। একই সঙ্গে আগুন দেয়া হয়। এ সময়ে দুই শতাধিক কারখানার উৎপাদন ও বিপণনপ্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। আপাতত ধারণা করা হচ্ছে, শিল্পের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগির সরকার শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। আর পদক্ষেপ নিলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স