ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

পর্যটক বেশে আত্মগোপনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা

  • আপলোড সময় : ০৬-০৯-২০২৪ ০২:৩১:০৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৯-২০২৪ ০২:৩১:০৪ অপরাহ্ন
পর্যটক বেশে আত্মগোপনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
* মামলা-হামলা থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগ ছাড়ছেন নেতাকর্মীরা * হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার হচ্ছেন অনেকে * দেশ ছেড়েছেন ঢাকার  কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর *   আপাতত নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন তৃণমূল আ’লীগের কর্মীরা * নেতৃত্বে পরিবর্তন করবে না আওয়ামী লীগ  *  জীবন বাঁচাতে এবং গ্রেফতার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপরই দলটির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি, থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের বাসা-অফিসে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে দুবৃত্তরা। লুটপাটের পাশাপাশি বাড়ীঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়া হয়। হঠাৎ তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে এবং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মামলায় গ্রেফতার-আতঙ্কে পর্যটক বেশে আত্মগোপনে রয়েছেন টানা ১৫ বছর ৮ মাস রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সদ্য পতন হওয়া সরকারের মন্ত্রীরা। বাদ যাচ্ছে না তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তাদের কাছের অনুসারীরাও মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন কর্মীরা। তবে এতকিছুর পরও দলে এখনই নেতৃত্বে পরিবর্তন আনবে না আওয়ামী লীগ এমনটি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলের কেন্দ্রীয়-ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিন ও থানা-ওয়ার্ড এবং ইউনিট নেতাকর্মীদের অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকের বাসা-বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন আওয়ামী সমর্থিত কয়েকজন। এমন অবস্থায় চরম আতঙ্কে আছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের রক্ষা করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘পর্যটক-বেশে’ আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। শুধু তাই নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। যদিও এরই মধ্যে দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ নেতাই এখনও লাপাত্তা। তারা দেশে আছেন কিনা তাও জানা যায়নি। গত বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কমপক্ষে ৫৫ জনের নম্বরে এ প্রতিবেদক কল দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবার নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। দু-একজনের হোয়াটসঅ্যাপ খোলা থাকলেও তারা রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি হতে পারে, সেটা তিন-চার বছর ধরেই বুঝতে ছিলাম। কিন্তু আমরা তো দলীয় সভাপতির কাছে যেতে পারিনি। ওনাকে একটি মহল নানা পরামর্শ দিয়ে এ পথে নিয়ে গেছে। এখন তারা কোথায় আছে জানি না। দলটির আরেক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, এখন আপাতত আত্মগোপনে আছি। এমন করে কয় দিন থাকতে পারব জানি না। তবে এ দুই নেতা দেশেই আত্মগোপনে আছেন।
হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার হচ্ছেন নেতারা : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক এমপিরা এবং পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আত্মগোপনে রয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে, তাদের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের চার নেতা ও সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশে সাবেক আইজিপিসহ গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং প্রশাসনের প্রতাপশালী সাবেক কর্মকর্তাদের অন্তত ৫০ জনকে নিরাপত্তার কারণে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গত জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় আসামি হিসেবে তাদের অনেকে রয়েছেন। মামলা হলে নজরদারিতে থাকা ওই ব্যক্তিদের একেক করে গ্রেফতার দেখানো হবে। এরআগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, দলীয় এমপি ও নেতারা আত্মগোপন করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও আত্মগোপন করেন। একাধিক সাবেক মন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
যে কারণে আওয়ামী লীগ ছাড়ছেন নেতাকর্মীরা : খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ছিলেন অনেক প্রভাবশালী নেতা। প্রায়ই যাতায়াত করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের বাড়িতে। পকেটে থাকতো লাইসেন্স করা অস্ত্র। ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ৫ আগস্ট  চলে যান আত্মগোপনে। পরে গত ২১ আগস্ট দলীয় পদ ছাড়ার পাশাপাশি জীবনে আর কোনোদিন রাজনীতি না করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পাইকগাছা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনৈতিক মাঠ থেকে তিনিও সটকে পড়েন। এ অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট দলের সভাপতিসহ সাধারণ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন জ্যেষ্ঠ এ নেতা। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। শুধু এ দু’জনই নয়, খুলনায় তাদের মতো আরও বেশ কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে দল ছেড়েছেন। আত্মগোপনে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরও অনেকেই। সরকার পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো নেতাকেই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এলাকায় ফিরলে হামলা কিংবা গ্রেফতার হতে পারে এ শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস গত ৯ আগস্ট পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দল ছেড়েছেন। একইভাবে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দল ছাড়েন নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জামিরুল হুদা জহর ও পাইকগাছা পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল হক মিন্টু গত ৬ আগস্ট তার ফেসবুকের দেয়ালে আর কোনোদিন রাজনীতি না করার ঘোষণা দেন। পরে অবশ্য তা মুছে দেন তিনি। তবে ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। পদত্যাগ করেছেন পাইকগাছার চাঁদখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুনছুর আলী গাজী। পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছি না। সেজন্য পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বুলু বিশ্বাস বলেন, আমি জীবনে আর কোনোদিন রাজনীতি করব না। রাজনীতি থেকে চিরদিনের জন্য অবসর নিয়েছি। আমাদের পরিবার ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমাদের পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাইরে আমি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা অন্যায় কাজ করেনি। সরকার পতনের পর আতঙ্কে সবাই আত্মগোপন করেছে। আপাতত এলাকায় ফিরে আসার মতো পরিস্থিতি নেই। সে কারণে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়ার চিন্তাভাবনা করছি।
আপাতত নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন তৃণমূল আ’লীগের কর্মীরা : আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সেনা হেফাজতে নয়, বাইরেই আছেন। তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে  আত্মগোপনে রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, কারও খোঁজ-খবর খুব ভালো পাচ্ছি না। আমরা আসলে অন্যদের খোঁজ-খবর সেভাবে নিতে পারছি না। নিজেদের নিয়েই চিন্তায় আছি। এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছি। একই অবস্থা তৃণমূলেও। আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের একটি থানার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমরা দূরত্ব বজায় রাখছি। আপাতত নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছি। আমার বিরুদ্ধে দুইটা মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। স্বাভাবিকভাবেই আমাকে নিরাপদে থাকতে হবে। থানার নেতাদের পাশাপাশি ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতারাও এখন রয়েছেন আত্মগোপনে। ৫ আগস্ট এলাকা ছাড়ার পর আর কাউকেই নিজ নিজ এলাকায় দেখা যায়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের পদে নেই, কিন্তু সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হচ্ছে। গত সোমবার রাতে এমনই এক মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সলিমুল্লাহ সলু। এতে আরও নড়েচড়ে বসেছেন অন্যান্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দেশ ছেড়েছেন ঢাকার দুই সিটির বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর : রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। যারা দেশে রয়েছেন, তাদের কেউ কেউ ঢাকার অভিজাত এলাকায় অবস্থান করছেন। আর তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভ্রমণের নামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজার, কূয়াকাটা, সিলেটসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। কারও খোঁজ-খবর খুব ভালো পাচ্ছি না। আমরা আসলে অন্যদের খোঁজ-খবর সেভাবে নিতে পারছি না। নিজেদের নিয়েই চিন্তায় আছি। এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরই নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের অনেকেই ছুটে যান কক্সবাজারে। দেশের সবচেয়ে বড় এই পর্যটন এলাকার এমন কোনো হোটেল নেই যেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান নেই। এছাড়া পর্যটক হিসেবে কুয়াকাটায় লুকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। তৃণমূলের সঙ্গে আছেন বিভিন্ন মহানগর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতারাও। নিজেদের নিরাপদ রাখতে নেতাকর্মীদের অনেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবানেও পর্যটক-বেশে গা ঢাকা দিয়েছেন। পর্যটক হিসেবে গা ঢাকা দিয়ে আছে এমন একটি দলের সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। দলটি জানিয়েছে, ৫ আগস্ট বিকেলেই হামলার আতঙ্কে তারা নিজ নিজ এলাকা ছাড়েন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ নিজ ঠিকানায় ফিরতে চাচ্ছেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর মামলা নিয়ে এখন তাদের মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক কাজ করছে।
দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনছে না আওয়ামী লীগ : ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এখনই কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক করারও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব প্রচার করা হচ্ছে তা সত্য নয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হচ্ছে এমন আলোচনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন বা কাউকে সাংগঠনিক কোনো দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত দেননি। তারা বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের জন্য যে খারাপ পরিস্থিতি এসেছে, তা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। দলের কঠিন সময়ে কোন নেতাদের সংগঠন গোছানোর কাজে লাগাবেন সেসব নিয়েও আলোচনা করছেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সভাপতি পদে থাকবেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানায়। তবে যেহেতু তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন সে কারণে দেশে একজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নম্বর সদস্য মোশাররফ হোসেন বা দুই নম্বরে থাকা মতিয়া চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পদেও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এর কোনোটিই চূড়ান্ত হয়নি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স