বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে দুই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে পুলিশের সাবেক দুই মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এই দুই আইজিপি হলেন-শহীদুল হক ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এর মধ্যে শহীদুল হককে সাতদিনের এবং আবদুল্লাহ আল মামুনকে আট দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে তাদের উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতারের পর প্রথমে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয় তাদের। গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে তোলা হয়।
আদালতে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি পুলিশ প্রধান থাকতে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করিনি। পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। আমি যতদিন চাকরি করেছি মানুষের সেবা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনোটাই সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
অপরদিকে আদালতে কোনো কথা বলেননি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আদালতের এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন তিনি। এসময় পুলিশের হেলমেট পরিধেয় অবস্থায় তাকে দেখা যায়।
আদালতে প্রথমে শহীদুল হকের রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির এক পর্যায়ে তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন আদালতকে বলেন, তিনি (শহীদুল হক) ২০১৮ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর সরকারি আর কোনো লাভজনক পদে থাকেননি। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেন এবং জনগণের ভরসার জায়গায় নিয়ে যান। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি একজন বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। এসময় তিনি শহীদুল হকের রিমান্ড নামঞ্জুর ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এরপর আদালত শহীদুল হকের বক্তব্য শোনেন। তিনি আদালতকে বলেন, আমাকে রিমান্ডে চাওয়া হলো কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আমি এ মামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর হাজারীবাগ থানার একটি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপার নিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল কাফির রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তাকে মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারও রিমান্ড নামঞ্জুর ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সবশেষে সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আসামি মামুন চাকরিরত অবস্থায় পদাধিকার বলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশকে কমান্ড করেছেন। তার ব্যক্তিগত কোনো পদক্ষেপ পুলিশের কাছে ন্যস্ত হয়নি। তাকে যদি মামলা দিতেই হয় সেক্ষেত্রে এসব হত্যা মামলা দেয়া অনুচিত। তিনি চাকরি জীবনে কোনো অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হতে পারে। আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তাকে হয়রানি করতেই এই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার পরিবার একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবার। তারা সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেছেন, তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি হার্টের রোগী, চোখে কম দেখেন এবং ডায়াবেটিসের রোগী। এসব বিবেচনায় তার পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড নামঞ্জুর ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। আদালত শুনানি শেষে তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আদেশ শেষে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ডিবির একটি গাড়িতে করে সাবেক দুই আইজিপিকে সিএমএম আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। অপর পুলিশ কর্মকর্তা কাফিকে প্রিজনভ্যানে করে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে দীপু মনির পর এই তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাতকড়া পরানো হয়নি।

নিজেকে নির্দোষ দাবি শহীদুলের চুপ ছিলেন মামুন
সাবেক দুই আইজিপি রিমান্ডে
- আপলোড সময় : ০৫-০৯-২০২৪ ০২:৩৪:২৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৯-২০২৪ ০২:৩৪:২৯ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ