ঢাকা , রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বরযাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নারী নিহত, আহত ৪০ নিয়ম ভেঙে আগের রূপে গোলাপি বাস বিদেশ থেকে টনকে টন চাল আসলেও প্রভাব নেই দামে জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন- প্রেস সচিব শিগগিরই সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক-আলী রিয়াজ সরকারের দ্বিতীয় পর্বেও সংঘাতের আশঙ্কা ড. ইউনূসের শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে- প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীতে ফের বেপরোয়া কিশোর গ্যাং পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্মত হলেও মূল্যছাড় দেবে না আদানি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে শুরু প্রাধান্য পাচ্ছে যে বিষয়গুলো অপারেশন ডেভিল হান্টে ষষ্ঠ দিনে গ্রেফতার ৫০৯ বিপুলসংখ্যক কারখানা বন্ধে দিশেহারা হাজার হাজার শ্রমিক পোশাক রপ্তানির বিপুল টাকা বিদেশেই থেকে যাচ্ছে আশুলিয়ায় ১২শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার আটক ৩ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড রামগঞ্জে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা সরিষার বাম্পার ফলন কৃষক খুশি গাজি কালুর জীবন ও দর্শন নিয়ে শোকমেলা অনুষ্ঠিত গাজীপুরে চার সাংবাদিকের ওপর হামলা, আটক এক চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজদের গ্রেফতারে নেই অভিযান

নয়নজুলি খাল দখলদারদের কবলে

  • আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৪ ১২:৪০:১৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৪ ১২:৪০:১৫ পূর্বাহ্ন
নয়নজুলি খাল দখলদারদের কবলে
ঢাকার আশুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাল নয়নজুলি। খালটি কালের আবর্তে আর একশ্রেণির দখলদারদের কবলে পড়ে হারিয়েছে তার নাব্যতা, পানিপ্রবাহ ও আকৃতি। বর্তমানে খালটির চিহ্ন পর্যন্ত নেই। দখলদাররা বহুতল ভবন, আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে বহালতবিয়তে রয়েছেন। এদিকে খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় ইয়ারপুর ও আশুলিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ গ্রামের মানুষ বর্ষা মওসুমে পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে খালটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না, যার ফলে দখলদাররা অতি উৎসাহী হয়ে খালটি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডমের একটু উত্তরে কয়েকটি ছোট জলপ্রবাহ একত্রিত হয়ে আশুলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশ পর্যন্ত একসময় বয়ে চলত এই খাল। প্রায় ৩০ ফুট চওড়া এই খাল। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। পানির প্রবাহ ছিল প্রায় সব সময়। নয়নজুলির পানির প্রবাহ স্বচ্ছ থাকায় স্থানীয় মানুষরা তাতে দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাত। এই খাল দিয়ে নৌকায় করে নিজেরা যাতায়াতের সাথে সাথে পন্যও পরিবহন করত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। আশপাশে দুই পাড়ে ফসলি জমিতে পানি সেচের মাধ্যমে চাষাবাদে উপকৃত হলেও এখন তার উল্টো চিত্র।
ভূমি নকশার আরএস এবং এসএ ম্যাপে খালের অস্তিত্ব থাকলেও পরবর্তী ম্যাপে তার অস্তিত্ব নেই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে কয়েকজন প্রভাবশালী নয়নজুলি খালটি দখল করেছে। অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে একটু আধটুকু দখল করলেও, ব্যাপকভাবে দখলের শুরুটা করেছে ফ্যান্টান্সি কিংডম। ফ্যান্টাসি কিংডমের ভেতরে এই খালের ৩০ ফুটের প্রবাহ হয়ে গেছে ছোট একটি ড্রেন। ফ্যান্টাসি কিংডম একটি আনুমানিক ৩ ফুটের ড্রেনের ভিতর দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে নয়নজুলি খালের উল্লেখযোগ্য অংশের প্রবাহকে অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে। এই বিষয়ে ফ্যান্টাসি কিংডম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে প্রোজেক্ট ম্যানেজার বক্তব্য না দিয়ে দায় এড়িয়ে যান। তিনি জানান, ফোন নম্বর রেখে দেয়া হলো, তাদের কর্মকর্তারা বক্তব্য নিতে চাওয়ায় ফোন করে বক্তব্য দেবেন। এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ফেন্টাসি কিংডমের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। মূলত ফ্যান্টাসি কিংডম এই এলাকায় অনেক সম্পত্তি বৈধ এবং অবৈধভাবে দখলে নিতে গিয়ে, পেশী শক্তি ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে। পার্শ্ববর্তী একজন নাম প্রকাশ করার শর্তে জানান। ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশের যাদের জায়গা তারা সবসময় আতংকে থাকেন কখন তাদের জায়গা ফ্যান্টাসি কিংডম সম্প্রাসারণে দরকার হয়ে পরে, তা হলে আর রক্ষা নেই। হয় বিক্রি কর, নইলে মামলার বোঝা টানো। 
বর্তমানে ফ্যান্টাসি কিংডমের ওয়াটার প্লের উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেম এবং ওয়াটার প্লেতে যাওয়া দর্শনার্থীদের হৈচৈয়ে এলাকায় বসবাসরতদের মধ্যে শব্দদূষণের প্রভাব পরছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছে। খাল দখলের ব্যাপারে অন্য একজন দখলদারের বক্তব্য চাইলে সে ফ্যান্টাসি কিংডমের দিকে ইঙ্গিত করেন এবং তাদের বক্তব্য আগে নিতে বলেন। মূলত ফ্যান্টাসি কিংডমের দেখাদেখি দুই পাশের বেশকিছু অসৎ মানুষেরা দ্রুত খালটিকে অস্তিত্বহীন করে ফেলেছে। অন্যদিকে আশপাশে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানা তাদের ক্ষতিকর রঙ এবং কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি নয়নজুলি খালের সাথে সংযুক্ত করেছে। সাথে দুই পাড়ে জনবসতির পায় : প্রণালী উপযুক্ত না থাকায় তার সংযোগ করা হয়েছে খালের সাথে। যার ফলে পানিবাহিত রোগ জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
মো. রফিক নামের একজন এলাকাবাসী জানান, এই খালের দূষিত পানি ব্যবহারে তাদের এলাকায় অধিকাংশ শিশু-কিশোরের সাথে বয়স্করাও পেটের পীড়া, ক্যান্সার এবং চর্মরোগে ভুগছে। খালটি উদ্ধারের দাবিতে বেশ কয়েকবার স্থানীয়রা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দেয় বলে জানা গেছে। এতসব প্রতিবাদের পরও দখলদাররা ক্ষমতাশালী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
তবে নয়নজুলি খাল উদ্ধারের জন্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রধান আলহাজ আবু শহীদ ভূঁইয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, বর্ষা মওসুমে জামগড়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বর্তমানে এ এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে খালটি উদ্ধারের জন্য তারা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এমনকি জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এর আলোকে নির্দেশনা এসেছে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে। তিনি আশুলিয়া সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ৩০ ফুট প্রশস্ত খালটি উদ্ধারের জন্য অভিযান চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পরও রহস্যজনক কারণে খালটি উদ্ধারের জন্য কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়েছিল। উপরন্তু খালটির ওপর নির্মিত নরসিংহপুর-চিত্রশাইল সড়কের ব্রিজের মুখ বন্ধ করে দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। অবিলম্বে খালটি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এলাকার সাধারণ মানুষ তা উদ্ধারের জন্য শিগগিরই নেমে পড়বেন বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। তিনি আরো বলেন, খালটি আশুলিয়ার তুরাগ নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে খালটির ওপর বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হয়েছে। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের স্বার্থে অবিলম্বে খালটি উদ্ধার করে এর পানি প্রবাহ অবাধ রাখা।
বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ মো. যুবায়ের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। আপনার কাছে শুনলাম, আমি সরেজমিনে দেখতে যাব। বর্তমানে এলাকাবাসীর দাবি খালটি উদ্ধার করতে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। তাহলে উপকৃত হবে এলাকাবাসী।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য