জবি থেকে আইনুল ইসলাম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১টি হল প্রায় চার দশক ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে কিন্তু জানেন না অনেক শিক্ষার্থী। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালালেও হলগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যেকোনো মূল্যে হল উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী, বিলুপ্ত কলেজের (২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়) সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে মুসিহ মুহিত অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ফার্মটি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ১২টি হল ছিল বলে অডিটে উল্লেখ করে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন হল ইস্যুতে নীতি-নির্ধারণী মহলের টনক নড়ে। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক মাসের মধ্যে ১২টি হল ও বেদখল হওয়া অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধারে সুপারিশ করতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। ২০০৯ সালের মার্চে পাঁচটি হল (আনোয়ার শফিক হল, শাহাবুদ্দিন হল, আজমল হোসেন হল, তিব্বত হল ও হাবিবুর রহমান হল) বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
একই বছরের ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঁচটি হলের দীর্ঘমেয়াদি লিজের আবেদন করে। ৯ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আইনগত সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে হলগুলো লিজের পরিবর্তে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে বললেও একাধিক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা ও আইনি জটিলতায় হল উদ্ধার কার্যক্রম থমকে থাকে।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ এর শিক্ষার্থী মো. রাকিব হাসান বলেন, ১১ টি হল থাকার পরেও আমাদের বাসা ভাড়া করে নিয়ে থাকতে হয়। বাসার মালিকরা আমাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না, এবং নানা রকম হয়রানি করে এছাড়াও বাসার মালিকরা কারণ ছাড়াই বাসার ভাড়া বৃদ্ধি করে। যা আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য হয়রানি। আমরা এত দিন নতুন ক্যাম্পাস সম্পর্কে জেনে আসলেও হলের সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতাম না। আশা করি আমাদের এইবার হল উদ্ধার হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, এর আগেও ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে হল উদ্ধারে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন হল উদ্ধারের জন্য ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে তারা। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি শিক্ষার্থীরা। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করা হয়। পরবর্তীতে সরকার জবিকে কেরাণীগঞ্জে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরোও বলেন, আমাদের এই ১১ হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন অবস্থান করেছে। যারা হলগুলো দখল করে নিয়েছে, তারা কোন ডকুমেন্টসের ওপর ভিত্তি করে দখল করেছে সেটি দেখার বিষয় আছে। হল উদ্ধারের জন্য দুটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। একটি হলো, আইনগত বিষয়, আরেকটি আমাদের অধিকারের বিষয়। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য যা করা দরকার করবো।
উল্লেখ যে, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিবলী সাদিক (রাজস্ব) এর রুমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বিষয়ক একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মিটিংএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোতোয়ালি জোনের মেহেরুনেছা এডিসি (রাজস্ব ) নেতৃত্বে এল এ শাখার সার্ভেয়ারদের একটা টিম আজকে ইসলামপুরের শুলশান আরা সিটিতে গিয়ে ৩ (তিন) দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে এসেছেন। যেন তারা নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে মার্কেট খালি করে দিবে। তিব্বত হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কে লিজ দেয়া হয়েছে ১ বছরের জন্য। কাগজপত্র নতুন জেলা প্রশাসক আসলে হস্তান্তর করা হবে। দখলদার হাজী সেলিম স্বইচ্ছায় দখলকৃত জায়গা ছেড়ে না দিলে সেনাবাহিনী মার্কেট খালি করতে সর্বোচ্চ সহয়তা করবে, ছাত্র প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করছেন সেনাবাহিনী।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

* জবি ১১টি হলেই প্রকাশ্য অন্যদের দখলে * হলবিহীন শিক্ষার্থীদের জীবন ‘নুন আন্তে পান্তা ফুরার’ মতো যেন দুর্বিষহ * ২০০৯, ২০১১, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে হল আন্দোলন কয়েক শতাধিক আহত * হল উদ্ধারে নেই কোন প্রশাসনিক সহায়তা * ২০২০ সালে মেয়েদের জন্য নির্মিত হয় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল
জবির ১১ হল থাকলেও সব দখলে


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ