দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎপরতায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরা ধীরে ধীরে দুর্নীতির জালে আটকা পড়ছেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার হয়েছে। অনেকেই এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন, তবে দুদকের সজাগ দৃষ্টি এড়াতে পারেননি। ফলে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
জানা গেছে, দুদক ইতোমধ্যে সাবেক ৮ মন্ত্রী ও ৬ সাবেক সংসদ সদস্যসহ আরও ২৭ জন মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করেছে। এরই মধ্যে ২৪ জনকে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। বাকিদের আদালতের অনুমোদনক্রমে শিগগিরই কার্যকর হবে। দুদক তিনটি আলাদা টিম গঠন করে দুর্নীতি অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে। বিদেশে পালানোর চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে এসব নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। আদালতের অনুমোদনক্রমে বাকিদের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তও নেয়া হবে। প্রথম ধাপে ১৪ মন্ত্রী-এমপিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর আরও ২৭ জন মন্ত্রী ও এমপি এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ অন্তত ৬০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। পৃথক পৃথক তিনটি আবেদনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে যা আদালতের অনুমোদনক্রমে বাস্তবায়ন হবে।
মামলার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের সম্পর্ক নেই: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য (এমপি), রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হচ্ছে। এসব মামলার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ সমন্বয়ক। এ সময় তিনি জানান, দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করবে। এর আগে, দুপুর পৌনে ১টার দিকে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলাপ শেষে দুপুর দেড়টার দিকে তারা বেরিয়ে যান। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের নাম ব্যবহার করে অনেক জায়গায় চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। স্বাক্ষর নকল করে মামলা দেয়া হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা খবর পাচ্ছি আমাদের নাম ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই, কাউকে সুবিধা দেয়ার বা নিজেরা সুবিধার নেয়ার।
ক্ষমতাচ্যুত ৪১ মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৩টি পৃথক টিম গঠন: দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একই দিনই সাবেক ৪১ মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তিনটি পৃথক টিম গঠন করে কমিশন। তিনজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত ওই টিম ইতোমধ্যে নথিপত্র তলব করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দরে চিঠি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন হেভিয়েট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ভিআইপিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে কারণেই তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী-এমপিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। তবে গ্রেফতার হোক বা না হোক, আমাদের লক্ষ্য যাতে কেউই দেশত্যাগ করতে না পারে। সে কারণে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। কমিশন অনুমোদন দিলেই তালিকা আদালতে পাঠানো হবে। আদালতের আদেশ দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে পাঠানো হবে।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা: দুদক উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম ১৩ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে। ওই টিম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীন, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক, জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত সপ্তাহে কমিশনে আবেদন করেছে।
ক্ষমতাচ্যুত ১৩ মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছে দুদক: দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে অপর একটি অনুসন্ধান টিম আরও ১৩ ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে কাজ করছে। এই টিম যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছে তারা হলেন- সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ধর্মবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ নেতা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ, যশোর-৩ আসনের সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি মহিববুর রহমান এবং নাটোর-১ আসনের সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মিদাস্সির খান ও মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানসহ ১০ জনের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাশ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন ও মন্ত্রণালয়ের সাবেক ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম। গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। আবেদনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তার পরিবারের সদস্য এবং যাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তারা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তাই তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। দুদক আদালতকে জানায়, তারা সবাই অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জন করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত চলছে। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিচারক আদেশের একটি অনুলিপি ইমিগ্রেশন পুলিশের পুলিশ সুপারের কাছে পাঠান। এর আগে ২৯ আগস্ট দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ থেকে ১৪ সাবেক মন্ত্রী ও এমপির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ওই ১৪ জন ভিআইপির দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে দুদকের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের টিম কাজ করছে। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া মন্ত্রীরা হলেন-সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান ও সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম। নিষেধাজ্ঞা দেয়া সংসদ সদস্যরা হলেন-সাবেক সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম, মামুনুর রশিদ কিরণ, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, কাজিম উদ্দিন, নুর-ই-আলম চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান। আদালতে দেয়া আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার এমপিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পালাতে পারেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।
ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির যত অভিযোগ: গত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কারো আয় বেড়েছে, কারো বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ গুণ থেকে কয়েক হাজার গুণ। কারও ক্ষেত্রে সম্পদ ও আয় বেড়েছে লাখ গুণ পর্যন্ত। নির্বাচনী হলফনামার তথ্য নিয়ে টিআইবির করা এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই ৪১ সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ দুর্নীতি, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ লোপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগ যুক্ত হতে থাকে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা আদায় করা অভিযোগ রয়েছে। তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্য ছিলেন যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন। টাকা আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কামাল-হারুন সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে- জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিতো এই চক্র। এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিতো এই সিন্ডিকেট।
ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন যারা: সর্বশেষ তথ্যানুসারে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬২৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। তারা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জান গেছে।
রিমান্ডে টুকু, জয়, সোহাইল, আহমদ ও সৈকত: কোটা সংস্কার আন্দোলনের পৃথক হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের। গত রোববার সকাল ৭টার দিকে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম।
এদিন সকাল ৬টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় তাদেরকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। আদালতের অফিস সহায়ক তৌফিকুল ইসলাম জানান, রিমান্ড আবেদন পাঠ করে শোনান আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। আর আসামিদের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন চান। প্রায় ১৫ মিনিটের শুনানি শেষে বিচারক আদেশ দেন। আইডিয়াল কলেজের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে ছিলেন শামসুল হক টুকু, আরিফ খান জয় ও মোহাম্মদ সোহাইল। একই মামলায় তাদের আরো ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত রোববার ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই আক্কাস মিয়া। রিমান্ড শুনানি নিয়ে আসামিদের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম। তবে খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে একইদিন আহমদ হোসেন ও তানভীর হাসান সৈকতকে আদালতে নেয়া হলে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এ দুজনকে আদাবর থানার রিংরোডে পোশাক শ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক।
যা বললেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: কোনোভাবেই যেন নির্দোষ কেউ হয়রানির মুখোমুখি না হয়, সেটা অর্ন্তবর্তী সরকার অবশ্যই নিশ্চিতের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গত রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের হেনস্তার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনাগুলোকে কোনোভাবেই এনডোর্স (স্বীকৃতি) করে না। বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি মামলা করে আমরা তো সেই ব্যক্তিকে আটকাতে পারব না। সে কার বিরুদ্ধে মামলা করবে সেটা তার এখতিয়ার। কিন্তু কোনোভাবেই যেন নির্দোষ কেউ হয়রানির মুখোমুখি না হয়, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই নিশ্চিতের চেষ্টা করবে।
দুর্নীতিবাজ এমপি-মন্ত্রীদের গ্রেফতারের দাবি: দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এসব কালোটাকা ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ এমন অভিযোগ তুলেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, আজিজ, বেনজীরের মতো দুর্নীতিবাজ অফিসার ও দুর্নীতিবাজ আমলাদের আটক করতে হবে। তাদেরসহ সব এমপি-মন্ত্রীর অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে হবে। দুর্নীতিবাজ লুটেরা এমপি-মন্ত্রী ও দুর্বৃত্ত আমলাদের গ্রেফতার করতে হবে। গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন নুরুল হক। এর আগে শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নাইটিংগেল মোড় ঘুরে বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে এসে শেষ হয়। নুরুল হক বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এই সরকারকে সময় দেয়া হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এক-এগারোর মতো কোনো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়। তিনি বলেছেন, এই সরকারের দায়িত্ব হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা। জুলাই ও আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার দায়ে শেখ হাসিনাকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
প্রাণভয়ে দূতাবাসে আশ্রয় চাচ্ছেন অনেকে: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভয়াবহ বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা। অনেকে সুযোগ বুঝে দেশ ছাড়তে পারলেও আটকে পড়া অনেক এমপি-মন্ত্রী ও অসংখ্য নেতাকর্মী এখনো প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের অনেকের মুঠোফোন এখনো বন্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ আরও অনেকেই দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
৬০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা * দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ * ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তদন্তের আওতায় * ২৪ মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর * তিনটি আলাদা টিম গঠন করে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক * বিদেশে পালানোর চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা
ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ
- আপলোড সময় : ০১-০৯-২০২৪ ১০:৩২:০০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৯-২০২৪ ১২:০৩:৫১ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ