নাই শঙ্কা, নাই ভয়, চাই শিক্ষা আনন্দময় সেøাগানটি এখন আর ততটা কাজে আসছে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এবং আবারও হয়রানির ভয়ে অনেকে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। এতে সামনের দিনগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ফাটল ধরার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একাধিক শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
কয়েকজন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গঠন করা হয় অন্তবর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারে এখন উপদেষ্টার সংখ্যা দাঁড়ালো ২১ জন। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পরই দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় প্রধান শিক্ষকদের জোরপূর্বক বের করা ও অপমান-লাঞ্চিত করা। ছাত্রদের হাতে ‘অপমানিত হওয়া’ ঠেকাতে অনেক শিক্ষক নিজ নিজ বিভাগে যাওয়ার সাহস করেননি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের অফিসে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এর সঙ্গে। তিনি জানান, অনেক দিন হলো আমরা ক্লাসে যাই না। শ্রেণিকক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে, বেঞ্চগুলোয় পড়ে গেছে ধুলার স্তর। ভাবতেই একরাশ হতাশা, গ্লানি আর অনিশ্চয়তা গ্রাস করে বসে আমাদের। ছাত্ররা সবাই শ্রেণিকক্ষে ফিরবে। কিন্তু থাকবে না মুগ্ধ, সাঈদ, হৃদয়, ফারাজের মতো তরুণেরা। তাদের রক্তের ওপরে হেঁটে আসা আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠবে, থাকবে একরাশ শূন্যতা। কিন্তু আমরা শঙ্কিত এই ভেবে যে আসলেই কি আর আগের সেই মধুর, ভালোবাসার আর সম্মানের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে আমরা ফিরে যেতে পারব? যে তীব্র অভিমান, ক্ষোভ, হতাশা আর প্রতিবাদের উচ্চারণ নিয়ে এক মাস ধরে যাত্রা আমাদের ছাত্রদের, সেখানে কি আসলেই খুব স্বাভাবিক একটা অবস্থায় রাতারাতি ফিরে যাওয়া যাবে। যখন শিক্ষার্থীদের হত্যা, গুলি, গ্রেফতার চলেছে, তখন দেশের অনেক শিক্ষক চুপ ছিলেন এমন অভিযোগ আমাদের শিক্ষার্থীদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই যদি মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়, তাহলে এই অভিযোগ অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্ররা বিভিন্ন শিক্ষকের পদত্যাগ চাইছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক অনেক শিক্ষককে তারা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। বেশ কিছু শিক্ষককে জোর করা হচ্ছে চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়ার জন্য। এমন অবস্থায় আসলেই কি শিক্ষার আগের পরিবেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করারশর্তে জানান, আমি জানতাম যে, আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। এটাও জানতাম যে, শিক্ষার্থীরা আমার অফিস ঘেরাও করবে এবং তারা আমাকে খোঁজাখুঁজি করছে। ফলে আমি পদত্যাগপত্র সাইন করে অফিসে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু ওরা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা চাচ্ছিল আমি যেন তাদের সামনে গিয়ে পদত্যাগ করি। ওই শিক্ষক জানাচ্ছেন, ছাত্রদের হাতে ‘অপমানিত হওয়া’ ঠেকাতে তিনি বিভাগে যাওয়ার সাহস করেননি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাকে অফিসে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তারা ভিডিও করবে এবং সেখানে গেলে যেকোনো একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি যেতে রাজি হইনি। কিন্তু বিভাগে না গেলেও ওই শিক্ষক খোঁজ পান যে, ছাত্ররা ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বাসভবনের দিকে আসছে। এটা ছিল ভীতিকর। শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে আমার বাসার দিকে আসতে শুরু করে। আমি এবং আমার পরিবার খুবই ভয় পেয়ে যাই। পুরো ভবনেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমি তখন পরিবারসহ আমার বাসা ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যেতে বাধ্য হই। একইসুরে কথা বলেছেন নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও তিনজন শিক্ষক। তাদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের সদস্য এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেননি এসব অভিযোগেই তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। আমি আমার পদত্যাগ মেনে নিয়েছি। তারা আমার অফিস পর্যন্ত গিয়েছে এতে সমস্যা নাই। কিন্তু আমার বাসায় কেন আসবে? আমার পরিবার কেন টার্গেট হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেই শিক্ষক।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি, প্রো-ভিসিসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। এরমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর আসতে থাকে যে, কোনো কোনো শিক্ষক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। শিক্ষকদের ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করা, অপমান-অপদস্থ করা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেবার অভিযোগও আছে। শিক্ষকদের মধ্যে কারা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন এবং আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এমন অভিযোগে চাকরি ছাড়ার হুমকি এবং চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিস্থিতি আসলে কেমন? আর ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কই বা এখন কোন অবস্থায়।
প্রাণভয়ে অনেক শিক্ষক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক চন্দ্রনাথ পোদ্দার। গত ২১ আগস্ট নিজ বিভাগে কাজ শেষে জানতে পারেন নিচে শিক্ষার্থীরা তার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরে বিভাগে এসে শিক্ষার্থীরা নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকেন চন্দ্রনাথ পোদ্দারকে। ছাত্র আন্দোলনে তিনি কেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভূমিকা রাখেননি? কেন তিনি নীল দলের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন? এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। পরে অন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে তাকে জানানো হয় যে, তার ক্লাস বয়কট করা হবে। চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, আমি শুনেছি যে তারা বলেছে, তারা আমার ক্লাস করবে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আমাকে স্থায়ীভাবে অবসর নিতে হবে এমন কথাও আমি শুনেছি। তবে বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনে তিনি অংশ নেননি, এই অভিযোগে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি ছেড়ে দিতে চাপ দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড় এবং নানামুখী প্রশ্নে বিপর্যস্ত এই শিক্ষক এখন আর বিভাগে যাচ্ছেন না। তিনি জানান, এই ঘটনার পর তার পরিবারের মধ্যেও ভয় ঢুকে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা অনেক শিক্ষকই এখন একটা ভালনারেবল সিচুয়েশনে আছি। এগুলো জানতে পেরে পরিবার উদ্বিগ্ন হয়েছে। আমার একটা মেয়ে আছে। সে কান্নাকাটি করেছে। আমার স্ত্রী কখনো চিন্তাও করেনি যে, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আমি এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হবো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেউ কেউ স্ক্রিনশট ছড়িয়েছে যে, আমি টকশোতে গিয়েছি। কিন্তু টকশোতে তো আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি। আমি আন্দোলনের পক্ষে, কোটা সংস্কারের পক্ষে। তারা টকশোটা দেখেনি, কিছু পড়েওনি। সে কারণে আমি নিজেই তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে চেয়েছি। চন্দ্রনাথ পোদ্দার অবশ্য মনে করেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ‘যৌক্তিক’। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অচিরেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কোনো শিক্ষককে যে হেনস্থা করা হচ্ছে এবং জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে সেটা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছিরের পদত্যাগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর। ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে তাদের দাবি অনুযায়ী পদত্যাগের কাগজপত্রে সই করছেন এই শিক্ষক। ঘটনার পর থেকেই আব্দুল বাছির অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একই অবস্থা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের। যদিও অপমান-অপদস্থ হওয়ার ঘটনার কোন ভিডিও বা ছবি নেই। গত সপ্তাহে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হেনস্থার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন এমন একাধিক অধ্যাপক জানিয়েছেন, তার বিভাগের জুনিয়র এক শিক্ষককে ‘হাতজোড় করে মাফ চাইতে বাধ্য করেছে’ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তাৎক্ষণিক বিভাগীয় একটি দায়িত্ব থেকেও পদত্যাগ করিয়েছে, করেছে মানসিক নির্যাতন। কিন্তু ‘নির্যাতন ও হেনস্থার শিকার’ ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এরকম ঘটনার কথা এড়িয়ে যান তিনি। জানান, শিক্ষার্থীরা তাকে কোনো চাপ দেয়নি বরং তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
অপমান-অপদস্থের শিকার শিক্ষকরা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল : অপমান-অপদস্থের শিকার হয়েছেন, অন্য শিক্ষকদের কাছে নিজেই ফোন করে সাহায্য চেয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের হামলার ভয়ে ক্যাম্পাসে থাকছেন না এমন অন্তত তিনজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, অপমানের কারণে আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেল, তখন একদিন আমি ডিপার্টমেন্টে যাই। সেদিন আমাকে কিছু শিক্ষার্থী আমার অফিসে প্রায় অবরুদ্ধ করে ফেলে। আমারই সহকর্মী একজন পুরুষ শিক্ষক প্ল্যান করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছিল। ওরা নানারকম গালিগালাজ করছিল। আমি সরকারেরর সমর্থক এমন কথা বলছিল। একপর্যায়ে আমার সেই পুরুষ সহকর্মী আমাকে মারারও চেষ্টা করে। পরিস্থিতি এতটা অসম্মানজনক ছিল যে, আমি পরে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম, বলছিলেন সে শিক্ষক।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে ফাটল : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, মূলত আওয়ামীপন্থী শিক্ষক এবং যারা সরাসরি আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেননি, অনেক ক্ষেত্রে তারাই হেনস্থার মুখে পড়েছেন। শিক্ষকদের নামে ব্যানার বানিয়ে, তালিকা করে, ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে যেমন টার্গেট করা হয়েছে, তেমনি অনেককে বাসায় গিয়েও হুমকি দেয়া কিংবা খোঁজ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে অবস্থা তাতে করে ‘ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ধ্বংস হওয়ার’ মুখোমুখি বলেই মত রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীনের। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কেউ কেউ এখন ভয়ে, আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বিভিন্ন বিভাগে লিস্ট তৈরি হয়েছে। অনেক শিক্ষক এখন ক্যাম্পাসের বাসায় থাকছেন না। বিশেষ করে যখন থেকে ছাত্ররা মব তৈরি করে বাসায় বাসায় গিয়ে শিক্ষকদের খুঁজতে শুরু করল। তখন শিক্ষকরা অনিরাপদ বোধ করতে শুরু করল। তারা এখন ভাবছে আজকে অমুক শিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছে, কালকে হয়তো আমার বাসায় আসবে। রাস্তায় হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে হবে, বলছিলেন জোবাইদা নাসরীন। সবাই একটা ভয়ের মধ্যে আছে যে, কোন কথায় কী রিঅ্যাকশন হবে। স্টুডেন্টরা আবার তেড়ে আসবে না তো? জোবাইদা নাসরীন মনে করছেন, শিক্ষকদের অপমান-অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন পক্ষ জড়িয়ে পড়ছে। শুধু যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে এসব হচ্ছে তা নয়। এখানে নানা স্বার্থে নানা গ্রুপের সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। এখানে শিক্ষক রাজনীতিরও ভূমিকা আছে। কিন্তু এতে করে যা হচ্ছে সেটা হলো ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে একটা বিশাল ফাটল তৈরি হয়েছে। তার মতে, ভয়-দ্বিধা কাটিয়ে শিক্ষকরা কীভাবে ক্লাসে ফিরবেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আবার শিক্ষার্থীরাও কীভাবে তাদের গ্রহণ করবেন সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেকে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন হলে সেটা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেননি। তবে শিক্ষার্থীরা যেটা করতে পারতো যে, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলে অপেক্ষা করতে পারত। প্রশাসনিক নিয়োগগুলো হয়ে গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি তুলে ধরতে পারত বলেও জানান জোবাইদা নাসরীন। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই নতুন ভিসি নিয়োগ না পাওয়ায় সেগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা আছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভূক্তভোগী শিক্ষকরা কার কাছে যাবেন, কীভাবে নিরাপদ থাকবেন সেটাও নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কোনো কোনো অংশের ভূমিকা নিয়েও আছে প্রশ্ন। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মুজমদার বলছেন, তাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা আছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার আছে-আমরা এটাও মনে করি। কিন্তু হেনস্থা করার মতো ঘটনা এসব কাম্য নয় বলে জানান বাকের মজুমদার। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এর পরও এমন ঘটনা থেমে নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ। এমনকি ভিসি ও অন্যান্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যকারিতাও তৈরি করতে পারেনি সরকার। যদিও এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন নতুন ভাইস-চ্যান্সেলর। মনে করা হচ্ছে, এভাবে পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হলে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। কিন্তু এর মধ্যেই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে যে ‘ভীতি এবং আস্থাহীনতা’ তৈরি হয়েছে সেটা সহজে কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগে চাপ ও হেনস্তা
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে ফাটল ধরার শঙ্কা
- আপলোড সময় : ৩১-০৮-২০২৪ ১১:০৬:১৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-০৮-২০২৪ ১১:০৬:১৩ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ