ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নতুন বাজেটে বৈষম্য কমবে সব ক্ষেত্রে সংবিধান পুনর্লিখনে গণপরিষদ-আইনসভা নির্বাচন একই হবে ৬০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা অভিযান ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে ‘যীশু খ্রিস্টের কষ্ট’র সঙ্গে তুলনা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ,প্রতিবাদে চালকদের মিছিল নরসিংদীতে রাতে স্ত্রীর দিনে স্বামীর লাশ উদ্ধার আইন উপদেষ্টার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে শিবির নেতার স্ট্যাটাস বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের নেতা ঢাকায় আত্মগোপনে দিনাজপুরে ৩১৬ চালকলের লাইসেন্স বাতিল জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাভোগী ও সুবিধাবাদী দল নয় - জিএম কাদের এনসিপি’র জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়কের বয়স হবে সর্বনিম্ন ৪০ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ অমানবিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ পাঁচ দাবি বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ভর্তুকি মূল্যে পাটের ব্যাগ দেবে সরকার-পরিবেশ উপদেষ্টা তীব্র সঙ্কটেও দেশে গ্যাসের চুরি ও অপচয় বন্ধ হচ্ছে না গাজায় ইসরায়েলি নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ নড়াইলে সৌদি প্রবাসী হত্যা হামলা-ভাঙচুরের পর পুরুষশূন্য গ্রাম প্রেস সচিবের মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলছে ভারত রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
হ সংস্কার ও অটোমেশন হলে এনবিআরে কর সংক্রান্ত দুর্নীতি কমবে * করদাতা ডোর টু ডোর সেবা পেলে এবং সব কাজ ডিজিটালাইজেশন হলে মূল সংস্কার হবে * কাস্টমস, আয়কর ও মূসক আইন নিয়ে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স হবে * এনবিআরে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প দরকার

কর ফাঁকিবাজদের ধরতে পদক্ষেপ

  • আপলোড সময় : ৩০-০৮-২০২৪ ০৬:৪২:০৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-০৮-২০২৪ ০৬:৪২:০৫ অপরাহ্ন
কর ফাঁকিবাজদের ধরতে পদক্ষেপ
সম্প্রতি ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চেহারা পাল্টানোর চেষ্টা করছে এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটিতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এনবিআরে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ নেয়া হয়েছে। কর ফাঁকি প্রতিরোধে আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলম, বেক্সিমকোসহ ছয়টি বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে সংস্থাটি। কর ফাঁকিবাজদের ধরতে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। নিজ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি বন্ধ করতে কড়াবার্তা দিয়েছেন এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পরও রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য কমিয়ে ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সেখানে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট সব মিলিয়ে আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। এর আগের ১১টি অর্থবছরও গেছে একই ধারায়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও এনবিআরকে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা থাকায় চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম বাংলাদেশে, ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। কর জিডিপির এই হার সোমালিয়া বা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কাছাকাছি। ১০ শতাংশের কম কর-জিডিপির অনুপাত নিয়ে উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণ সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো সেবা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো প্রয়োজন। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কর কাঠামো বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহায়ক করতে হবে। কর প্রশাসনকে শক্তিশালী এবং এনবিআরের কার্যক্রম প্রযুক্তিনির্ভর করাসহ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার প্রয়োজন। তবে বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংস্কার ও অটোমেশন হলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর সংক্রান্ত দুর্নীতি কমবে। কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
এনবিআরের পুরাতন আইনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয় এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তা এতে লাভবান হন জানিয়ে পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ী বলেন, কিছুদিন পর পর পণ্যের হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড পরিবর্তন করে আমাদের বিপদে ফেলা হয়। মনে করেন, একটা পণ্যের ৮ ডিজিটের একটা এইচএস কোড ছিল। সেটাকে পরিবর্তন করা হলো। আমার আইনে আছে, এটাকে দেশের আইনে অনুমতিও দেয়া আছে। কিন্তু যখন এনে ফেলা হয়, তখন বলা হয় এটা আপনার এইচএস কোডে নেই। আমার সফটওয়্যার আছে, পোর্টে সব কিছু দেখা হচ্ছে। আমি যদি অন্যায় করি আমাকে শাস্তি দেন। কিন্তু এইচএস কোডের মাধ্যমে এটাকে জটিল করা হচ্ছে। এগুলো করা হয় ঘুষ খাওয়ার জন্য।
আরেকটি উদাহরণ দিয়ে ফজলে শামীম এহসান বলেন, একজন এআরও বা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা অনেক সময় অ্যাসেসমেন্টের নামে হয়রানি করে। একবার একজন এআরও কাপড় ধরে বলছে এটাতে ২ শতাংশ নয়, ৫ শতাংশ ইলাস্টিসিটি আছে। এটা বলে সে কাপড় আটকে দিলো। আমি তখন বললাম, আমি ২০-২২ বছর ব্যবসা করি। ঈদের দিনও আমি কাপড় পরীক্ষা করি। আমি বলতে পারি না কাপড়ে ইলাস্টিসিটি ২ আছে না ৫! এভাবে পণ্য আটকে আমাদের হয়রানি করে। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বাস্তবসম্মত, ব্যবসাবান্ধব ও আধুনিক রাজস্ব বোর্ড চাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে প্রতিষ্ঠানটিতে ঠিকমতো অটোমেশনই হয়নি। বিদ্যমান নীতিমালার সংশোধন নয়, আমরা আধুনিক নীতিমালা চাই।
কর-জিডিপি ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বরাবরই রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। সেটা অর্জনে এনবিআরের সক্ষমতা আছে কি না তা দেখা হয় না। অন্যদিকে কর-জিডিপি অনুপাত সবসময়ই নিম্ন পর্যায়ের আশপাশেই ঘুরছে। এক্ষেত্রে এনবিআরে পদ্ধতিগত, অবকাঠামোগত ত্রুটি দূর করতে হবে। পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক বলেন, অজ্ঞতা ও হয়রানির আশঙ্কায় অনেকেই রিটার্ন জমা দেন না। অটোমেশনের মাধ্যমে রিটার্ন আদায় বাড়ানো সম্ভব।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, এনবিআরকে জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। সেটা করতে গেলে এনবিআরের কর আদায়ের পদ্ধতির অটোমেশন দরকার। অনেক জায়গায় এনবিআরের বিবেচনামূলক ক্ষমতা আছে, সেগুলো কমানো দরকার। কর আদায়ের প্রক্রিয়াটা সহজ করা হলে ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সবাই কর দিতে আগ্রহী হবে। এর ফলে সরকারের কর রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
তবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে পেপারলেস ও ফেসলেস করা গেলে মানুষের আস্থা ফিরবে। সেবা সহজীকরণ, মানোন্নয়ন, রাজস্ব আহরণের উদ্দেশ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডাটা ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে এই অটোমেশন সম্ভব। করদাতা যদি ডোর টু ডোর সেবা পান, সব কাজ যদি ডিজিটালাইজেশন হয়ে যায়, তাহলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমে যাবে। কর ফাঁকিবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কর ফাঁকিবাজরা পার পেয়ে যায়, এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই মূল সংস্কারটা হবে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি একটি ছাগল কেনাকে কেন্দ্র করে এনবিআরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মতিউরের নাম সামনে আসে। এরপর এনবিআর কর্মকর্তা এনামুল, আবু ফয়সাল ও আরজিনার মতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও এসেছে দুর্নীতির অভিযোগ। গত এক দশকে ঢাকা কাস্টমসের ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি ও এসাইকুডা জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে। এসব অনিয়মে ভাবমূর্তি হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংস্কার করতে হলে এসব ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নতুন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানও প্রতিষ্ঠানটির ইমেজ সংকটের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি বার্তা দিয়েছি। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হবো। কেউ যদি নিয়মনীতি না মানেন তাহলে তাকে এনবিআর ছাড়তে হবে।
গত ১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে আবদুর রহমান খান বলেন, এন্ড টু এন্ড অটোমেশন করতে হবে। এখন আমরা প্রাথমিক কিছু অটোমেশন করবো। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো যতদিন লাগুক না কেন, আমাদের ব্যাপক আকারে অটোমেশন করতে হবে। এটা ইফেকটিভ ও সাসটেইনেবল হতে হবে। কাস্টমস, আয়কর ও মূসক আইন নিয়ে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স করা হবে। রাজস্ব সংক্রান্ত তিনটি আইন আধুনিকায়নে তিনটি টাস্কফোর্স করা হবে। ব্যবসায়ী ও কর কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পলিসি তৈরি করতে হবে। আমরা যদি প্রতি দুই-পাঁচ বছর পর পলিসি পরিবর্তন করি তাহলে বিনিয়োগকারীর পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবো। কর্মকর্তাদের বলেছি, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র গবেষক ড. মাহফুজ কবির বলেন, এখনই সুযোগ পুরো এনবিআরকে অটোমেশন করার। এটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। প্রতিষ্ঠানটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তাদের হাতে থাকা বিবেচনামূলক ক্ষমতা ইচ্ছামতো ব্যবহার করে হয়রানি করেন। এতে রাজস্ব প্রদানে অনেকেই আগ্রহ দেখান না। অটোমেশন হলে এই হয়রানিটা অনেকাংশে কমে যাবে। এই অটোমেশনটা করে ফেললে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাও সম্ভব হবে। ইএফডিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভ্যাট আদায় সম্ভব হবে। মাহফুজ কবির আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ডের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প প্রণয়ন করা প্রয়োজন। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংস্থাটি কী চিন্তা করছে সেটা স্পষ্ট হওয়া দরকার। এনবিআর নিয়ে নানান নেতিবাচক কথা প্রচলিত আছে। এনবিআরে আস্থার সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি স্টেকহোল্ডার ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির যে দূরত্ব রয়েছে সেটা কমিয়ে আনতে হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স