বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও তার প্রেতাত্মারা এখনো বহালতবিয়তে আছে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে। অবৈধভাবে দখল করে আছে বিভিন্ন বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে এখনো ঝুলে আছে ওই চক্রটির বিজ্ঞাপনী সাইনবোর্ড। আওয়ামী লীগ নেত্রী ও অভিনেত্রী শমী কায়সার, নায়ক মাহফুজুর রহমান ও তানভীর গংদের নেতৃত্বে বিমানবন্দরগুলোতে অবৈধভাবে দখল করে রাখা বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য বন্ধ হয়নি।
জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের পরিত্যক্ত ছাদে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও যাত্রীসেবার লাউঞ্জে নির্মাণ করে চলছে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য। বুয়েট বা কোন দক্ষ ও স্বীকৃত স্থপতি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়াই ছাদের উপর ভবন নির্মাণের ফলে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে ওই স্থান লীজের নামে অবৈধ বাণিজ্য করছে সিভিল এভিয়েশনের একটি চক্র ও আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, দেশের বিমানবন্দরে ১৬টি লাউঞ্জ তৈরী করেছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের জন্য স্পেস ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সিভিল এভিয়েশন পাচ্ছে নামমাত্র অর্থ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে-গোল্ডহিল এলায়েন্স, গ্লোবাল এ্যারো, এ্যারিয়াল ক্রিয়েটিভ স্পেস, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন, ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট ও নকশী কাঁথা। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রী সেবায় লাউঞ্জ তৈরী করে বিজ্ঞাপনের জন্য স্পেস ভাড়া নিয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে ৫টি, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ৩টি, চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৩টি, ওসমানী বিমানবন্দরে ২টি এবং সৈয়দপুরে ১টি লাউঞ্জ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তানভীর আহমেদ জাতীয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনকে জিম্মি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামমাত্র অর্থ পরিশোধ করে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য দখল করে নিয়েছে। একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, একটি বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি এবং একজন প্রভাবশালী সাবেক সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতায় তানভীর আহমেদ বিজ্ঞাপনের জায়গা-জমি, স্থান লীজ নিয়ে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের পুরাতন ভবনের ওপরে পরিত্যক্ত ছাদের ওপর অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরী করে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিয়েছে এবং বিজ্ঞাপনী স্থানে বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দিয়েছে। নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে শাহজালাল, সৈয়দপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে এ ধরনের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করেছে। কোন ধরনের নকশা বা ডিজাইনের কোন অনুমোদন ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামাফিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তৈরী করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তানভীর আহমেদের সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাংবাদিক নামধারী কয়েকজন তার পক্ষে তদবির করছেন-এসব রিপোর্ট প্রকাশ না করতে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিজ্ঞাপনের জন্য স্থান বা জায়গা-জমি লীজ দিয়ে সংস্থা যে টাকা পাচ্ছে তার দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে পুরো বিমানবন্দরের সকল বিজ্ঞাপনের স্থান এখন দখল করেছে তানভীর আহমেদ, অভিনেত্রী শমী কায়সার গং। বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ভবনের ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় এখন কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তানভীর আহমেদ। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দরের বোর্ডিং, ব্রিজ, বিলবোর্ড, প্রান্তিক ভবন, অভ্যন্তরীণ ভবন ও লাইট বক্সসহ অধিকাংশ জায়গা বিজ্ঞাপনের জন্য এককভাবে অনুমোদন করে নিয়েছেন তানভীর আহমেদ ও শমী কায়সার। শুধু তাই নয়, নামমাত্র টাকা পরিশোধ করে এতটুকু জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে ওই চক্রটি।
অভিযোগ রয়েছে, বিজ্ঞাপনের জায়গা ভাড়া বা লীজ দেয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে মূলত অবৈধ কাজ বৈধ করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয় সাবেক চেয়ারম্যান। ওই কমিটি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তানভীর আহমেদের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরের আগমনী ও বহির্গমন টার্মিনালসহ বিভিন্ন লাউঞ্জে কে-মার্ক ও গোল্ডহিল অ্যালায়েন্স নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে বেবিচক বিজ্ঞাপনের জন্য স্থান লীজ দেয়। তারা ইজারার নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্থাপনা তৈরী করেছে। পর্যটন করপোরেশনের নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ডিসপ্লে বোর্ড, এলইডি স্ক্রিনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তানভীর আহমেদ একাই বিভিন্ন নামের প্রতিষ্ঠান তৈরী করে বেবিচকের একটি অসাধু চক্রের সহযোগিতায় এককভাবে বিজ্ঞাপনী বাণিজ্য দখল করেছেন। নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনী জায়গায় বিলও পরিশোধ করছেন না। ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে তানভীর আহমেদ গত ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকার একটি অংশের ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে বেবিচকের ওই অসাধু চক্রের মাঝেও।
এদিকে গোল্ডহিল ও অ্যালায়েন্স নামে তানভীর আহমেদের এ প্রতিষ্ঠানটি শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের ছাদ বা রুফটপ লীজ নিয়েছে। সেখানে যাত্রীসেবা লাউঞ্জ ও ব্যাংকের জন্য ভাড়া দিয়েছেন তানভীর আহমেদ। বেবিচকের সাবেক পরিচালক (এটিএস) মো. মিজানুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ৩ হাজার বর্গফুট জায়গা ইজারা নিয়ে ৬ হাজার বর্গফুট জায়গা ব্যবহার করছেন তানভীর আহমেদ। ওই সব জায়গা ভাড়া দিয়ে ৩০ কোটি টাকা নিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ। অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পুরানো ভবনের পরিত্যক্ত ছাদে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভবন। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অবিলম্বে তা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মানুষ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।
 
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     
                            
                        * বিমানবন্দরগুলোতে বিজ্ঞাপনের স্থান ভাড়া দেয়ার নামে চলছে অবৈধ বাণিজ্য * শাহজালালে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ৩ হাজার বর্গফুট ইজারা নিয়ে ৬ হাজার বর্গফুট দখল * হুমকির মুখে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন, ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা * আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী প্রভাবশালীরা বহালতবিয়তে
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিজ্ঞাপনে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা
- আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৪ ১১:৫৯:৫২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৪ ১১:৫৯:৫২ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                             কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  স্টাফ রিপোর্টার
 স্টাফ রিপোর্টার  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                     
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                