আজ ১৫ আগস্ট, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী। এতদিন ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালিত এই দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এবার তা থাকছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে উপদেষ্টা পরিষদের সংলাপের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে গত মঙ্গলবার একথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সহিত উপদেষ্টা পরিষদের সংলাপে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করিবার বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে সরকার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্ট এর সাধারণ ছুটি এতদ্বারা বাতিল করিল।’ উল্লেখ্য, কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে জনরোষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরপরই হেলিকপ্টারযোগে প্রথমে ভারতের আগরতলা ও পরে বিমানযোগে দিল্লিতে যান। দলীয় সভাপতির এভাবে চলে যাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যায় দৃশ্যপট। দলের নেতাকর্মীরা চলে যান আত্মগোপনে। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা, লুটপাট, আগুন থেকে রক্ষা পায়নি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরও। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের এই বাড়িতেই সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। ওই দিন তিনি ছাড়াও নিহত হন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এ ছাড়া তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনসহ নিহত হন আরো ১৬ জন। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে ২০০২ সালে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ছয় বছর পর হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ১৫ই অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহাল করে। তখন থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে বিশদ কর্মসূচি থাকলেও এবছর তা নেই। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় গত মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফাইড ফেসবুকে শেখ হাসিনার এই বার্তাটি পোস্ট করেন। বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ভাই ও বোনেরা, ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা, আমার তিন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ছোট ভাই যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার একমাত্র চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সারনিয়াবাদ, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক শহীদ সারনিয়াবাদ, ভাগনে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৫ই আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শহীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমন কি অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সাথে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতি বহনকারী এই জাদুঘরটি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সব ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফল ও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই। শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সাথে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

আজ ভয়াল ১৫ আগস্ট
- আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৪ ১২:৩৪:২৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৪ ১২:৩৪:২৭ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ