সরকার পতনের পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরেছে। সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত ২০ জন কাউন্সিলর এলাকায় নেই। এ অবস্থায় নগর ভবনের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে দলাদলি। অনেক কর্মচারী ইচ্ছামাফিক অফিসে আসছেন এবং যাচ্ছেন। ফলে একধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনটি পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে শিশুদের টিকাদান ও মশকনিধন কার্যক্রম। একই সাথে বিভিন্ন সনদ পাওয়াসহ নগরীর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও থমকে আছে। বুধবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর বরিশালে আওয়ামী লীগের বিভিন্নপর্যায়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা এলাকা ছেড়েছেন। মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ গত ৩ আগস্টের পর আর তার কার্যালয়ে আসেননি। তিনি কোথায় আছেন জানেন না করপোরেশনের কর্মকর্তারা। নগরীর ২০টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররাও গা ঢাকা দিয়েছেন। নগর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের পরই বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা করপোরেশনের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছেন। আর আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতোদিন প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন তারা বর্তমানে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পরেছেন। সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন বলেন, মেয়র অনুপস্থিত থাকলেও তাদের রুটিন কাজকর্ম চলছে। কোনো সমস্য নেই। বন্ধ ইপিআই ও মশকনিধন কার্যক্রম ॥ করপোরেশনে শিশুদের টিকাদান (ইপিআই) ও মশকনিধন কর্মসূচি এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের আগুনে করপোরেশনের চারতলার অ্যানেক্স ভবন পুড়ে যায়। ওইভবনে রাখা ইপিআই কর্মসূচি ও মশকনিধন কর্মসূচির সব সরঞ্জাম, নথিপত্র ও ওষুধপত্র পুড়ে গেছে। এই বিভাগে অন্তত ১০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হতো। ১৫৪টি পয়েন্টের জন্য আইস বক্স, ফ্রিজ ও প্রায় এক লাখ ভাওয়েল ওষুধ ছিল। সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে শিশুদের জন্মের পর পাঁচটি টিকাসহ অন্যান্য টিকা ও ভিটামিন খাওয়ানো কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পল্লবী সুলতানা বলেন, সিটি এলাকার টিকা শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতাল থেকে নেওয়া যাবে। করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ার আগে দুর্বৃত্তরা লুটপাট করে ১২টি ফগার মেশিন নিয়ে যায়। তারা এসব ফগার মেশিনের মধ্যে চারটি উদ্ধার করতে পেরেছেন। এখন তা দিয়েই মশকনিধন কার্যক্রম চলবে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন। স্থবির উন্নয়ন কাজ ॥ ২০২৩ সালের শেষের দিকে নগরীর রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে আটশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। গত ৬ মে পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের প্রথমধাপে নগরীর ৪০টি সড়ক ও নালা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত এক সপ্তাহ এসব কাজ বন্ধ রয়েছে। নগরীর কালুশাহ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের মোড়ে পাথরের বিশাল স্তুপ। সড়কজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেতন বন্ধ ॥ করপোরেশনে স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন ৫৩৭ জন। আর অস্থায়ী আছেন ১২শ’ জন। মেয়র অনুপস্থিত থাকায় এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জুলাই মাসের বেতন-ভাতা পাননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশনের বেতন-ভাতা ও আর্থিক বিষয়গুলো মেয়রের অনুমোদন প্রয়োজন। তার স্বাক্ষর ছাড়া কোনো অর্থ ছাড় হয়না। কিন্তু মেয়রের অনুপস্থিতির কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় হচ্ছে না। ফলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিপাকে পরেছেন। বিশেষ করে অস্থায়ী কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় চরম দুর্দশায় পরেছেন। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, আসলে মেয়র অনুপস্থিত এতে কিছুটাতো সমস্যা হচ্ছেই। তবে আমরা নিয়মিত কার্যক্রমগুলো ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির
- আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৪ ১২:৩৩:০২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৪ ১২:৩৩:০২ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ