৬২৮ থানার কার্যক্রম শুরু জিডি ছাড়া কিছুই হচ্ছে না
ডিএমপির তেজগাঁও, হাতিরঝিল ও শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার এজাহার দায়ের করা যাচ্ছে
এইচ এম আজিমুল হক, উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ
পুলিশের ইউনিফর্ম, লোগো সব পরিবর্তন করা হবে। পুলিশের অনেকের মন ভেঙে গেছে। এই ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর কাজ করতে চাইছে না
সাখাওয়াত হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
হাবিবুর রহমান
ছাত্র আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত টানা আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার মুখে এই বাহিনীর পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি পুলিশ পরিচালনায় স্বাধীন একটি কমিশন গঠনেরও সিদ্ধান্ত এসেছে। আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। তীব্র গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়া দেশের পুলিশি ব্যবস্থা গত এক সপ্তাহেও স্বাভাবিক হয়নি। রাজধানীসহ সারাদেশে ৬২৮টি থানায় সীমিত পরিসরে কাজ চললেও, শুধু জিডি ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। তবে কাজ করার ব্যাপারে পুলিশের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে স্বাধীন কমিশন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকায় পুলিশের মধ্যে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়েছে। বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে অতি উৎসাহী একটি অংশ দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ ও বেপরোয়াভাবে গুলি করে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রেও অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের ভূমিকা রয়েছে। যদিও শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়া মাত্র ওই সব কর্মকর্তা দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান। পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামও দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেন, আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাষী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত ও নিগৃহীত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে গিয়েই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় বাহিনী পুনর্গঠন ও সংস্কারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলছেন, এখন জরুরি কাজ হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাঁদের কর্মস্থলে ফেরানো। একই সঙ্গে বাহিনীর শীর্ষ পদগুলোতে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের বসাতে হবে। এ ছাড়া দলীয় পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ও অপেশাদার কর্মকাণ্ডে যুক্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পদোন্নতি ও পদায়নের স্বচ্ছ নীতিমালা তৈরি ও কার্যকর এবং নিচের সারির সদস্যদের ন্যায্য সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন পেশাদার কর্মকর্তাদের অনেকে। তবে তাঁরা মনে করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পদোন্নতি ও পদায়নে নতুন অতি উৎসাহী গোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংস্কারের চিন্তা ও উদ্যোগ হোঁচট খাবে।
গতকাল সোমবার আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সব পুলিশ সদস্য তাদের ডিউটিতে যোগ দেয়ারও সিদ্ধান্ত জানান। বৈঠক সূত্র জানায়, ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ পরিবেশে কর্মস্থলে যাতায়াত, ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন, আন্দোলনে নিহত পুলিশ সদস্যদের ক্ষতিপূরণ, বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ওসিদের পদায়নের দাবি তোলেন।
তবে স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেছেন যেগুলো অতিসত্বর সম্ভব সেগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। বাকিগুলো আইজিপি’র ওখান থেকে পর্যায়ক্রমে হবে। এর আগে গত ৮ অগাস্ট আইজিপি ময়নুল ইসলাম পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে তিনি ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
পরিবর্তন আসছে লোগোতেও
পুলিশের পোশাক বদলাচ্ছে
- আপলোড সময় : ১২-০৮-২০২৪ ১১:৩৬:০৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-০৮-২০২৪ ১১:৩৬:০৩ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ