বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পণ্য খালাস শুরু হলেও তা স্বাভাবিক গতি পায়নি। আউট পাস পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর প্রভাব পড়েছে শিল্প-কারখানায়। কারখানা চালু হলেও কাঁচামাল আনতে নতুন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন শিল্প-কারখানা মালিকরা। এদিকে কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন শুরু হলেও সেখানে রয়েছে পদে পদে ভোগান্তি। সূত্র জানায়, সার্ভারের ধীরগতির কারণে দ্রুত সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। আবার শুল্কায়ন শেষ হলেও কাঁচামাল আনা যাচ্ছে না চাহিদামতো। পণ্য আনার মতো পরিবহন মিলছে না। ফলে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা মেনে অনেকে কাঁচামাল নিতে পারছেন না কারখানায়। বন্দর কাস্টমসে কাজ শেষ করে কাঁচামাল কারখানায় নিতে কারও কারও লেগে যাচ্ছে দুই থেকে তিন দিন। এ কারণে অনেক কারখানায় কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে এতদিন আউট পাস পাচ্ছিলেন না আমদানিকারকরা। এজন্য গাড়িতে পণ্য বোঝাই করার পরও তা বন্দর জেটি থেকে বের করা যাচ্ছিল না। এ রকম প্রায় তিন হাজার কনটেইনার পণ্য আটকে ছিল বন্দরে। গত মঙ্গলবার থেকে এ সমস্যার সমাধান হলেও এখনও অনেক পণ্যের গেট পাস মেলেনি। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার তারেক হাসান বলেন, ‘শিল্পের কাঁচামাল আমরা দ্রুতগতিতে খালাস করে দিচ্ছি। এটিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’ পোশাক কারখানার বাইরেও চট্টগ্রামে সহস্রাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা ও বিসিক শিল্পনগরীতে রয়েছে বেশ কিছু কারখানা। জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলাতেই ১৫০টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এখানে রয়েছে ১২টি স্টিল রি-রোলিং মিল ও ৮৬টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। অক্সিজেন উৎপাদন কারখানাও আছে এক ডজনের বেশি। শুধু এ উপজেলার শিল্প-কারখানায় প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দেশে ইস্পাত উৎপাদন করা শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই চট্টগ্রামে। এগুলোর একটি জিপিএইচ ইস্পাত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রয়েছে তাদের কারখানা। প্রতিদিন তিন হাজার টন রড উৎপাদনকারী এই কারখানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সচল হয়েছে গত মঙ্গলবার। পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় গত বুধবার সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কারখানা খুলেছি। তবে কারখানা চালু করলেও বন্দর থেকে কাঁচামাল আনতে গিয়ে অনেক বাধা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কারফিউ শিথিল হলেও পণ্য আনার জন্য পরিবহন মিলছে না।’
ইস্পাত উৎপাদনকারী আরেক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে গত মঙ্গলবার কারখানা চালু করেছি। তবে উৎপাদন পুরোদমে শুরু হয়নি। প্রায় এক সপ্তাহের অচলাবস্থায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার কাঁচামাল আনতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বন্দর কাস্টমসে কাজ চলছে অনেক ধীরগতিতে।’ দিনে চার হাজার টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা আবুল খায়ের স্টিলও কাঁচামাল নিয়ে আছে সংকটে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘বন্দর ও কাস্টমসের সার্ভার দ্রুত কাজ করতে পারছে না। যে কাঁচামাল বন্দরে আছে, সেগুলোও আনতে পারছি না।’ শীতলপুর স্টিলের পরিচালক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় দৈনিক ৭০০ টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু কাঁচামাল না থাকায় আমরা সেটি ব্যবহার করতে পারছি না।’ চট্টগ্রামে রয়েছে তিনটি ইপিজেড। এসব ইপিজেডে সহস্রাধিক কারখানা রয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রামে ছোট-বড় গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এরমধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানা ২২০টি এবং বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত ৯৩টি। বাকি কারখানার অনেক সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে।
ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব জানান, তার কারখানায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে তারা কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘কারখানা খোলা নিয়ে সংকট কেটে গেছে। এখন কাঁচামাল আনতে সমস্যা হচ্ছে।’ সিইপিজেডের বড় উদ্যোক্তা প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানবীর বলেন, ‘এখনও সংকট পুরোপুরি কাটেনি। কাঁচামাল আনতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।’ শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. সোলায়মান বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সচল থাকায় অনেক কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। শিল্পের কাঁচামাল আনতে চাইলে প্রয়োজনে বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কারফিউ থাকায় কিছু বিধিনিষেধ মানতে হচ্ছে।’
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata