কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন বনানীর সেতু ভবনে হামলা চালায়। হামলায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে সেতু ভবনের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহম্মেদ অসিম, সাইফুল ইসলাম নিরব, রফিকুল ইসলাম মজনুসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আমান ছাড়া ১১ জনের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ১২ জন ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) রামপুরা ভবনে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটনায় ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার হাজার কর্মী দলবদ্ধ হয়ে এ হামলা চালায়। গত ১৮ জুলাই এ হামলার ঘটনায় পরদিন ১৯ জুলাই বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলার এজাহারেই হামলার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা ও প্ররোচনার বিষয়টি উঠে আসে।
গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন বনানীর সেতু ভবনে হামলা চালায়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সেতু ভবনের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন।
এ বিষয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু সাঈদ মিয়া বলেন, সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আমানসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার দায় স্বীকার করেন। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।
সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম নিরবসহ সাতজনের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম মজনু, রশীদুজ্জামান মিল্লাত, সৈয়দ এহসানুল হুদা, মহিউদ্দিন হৃদয় ও তরিকুল ইসলাম। গত বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল হুদা চৌধুরী তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে গত ২২ জুলাই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একই দিন বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহম্মেদ অসিম ও জামায়াত নেতা সামিউল হক ফারুকীর পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া গত ২১ জুলাই ভিপি নুরের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে।
সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ-পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা আমাদের অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচ তলার ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যান্টিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কর্নার, জেনারেটর কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এ সময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সেতু ভবনের ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব, অন্য অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তা কর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পরে আসামিরা নিচতলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে নিচতলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্রসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আসামিদের এরূপ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচতলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল-প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইসারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিলে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) রামপুরা ভবনে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার হাজার কর্মী দলবদ্ধ হয়ে এ হামলা চালায়। গত ১৮ জুলাই এ হামলার ঘটনায় পরদিন ১৯ জুলাই বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলার এজাহারেই হামলার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা ও প্ররোচনার বিষয়টি উঠে আসে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অজ্ঞাতনামা আরও শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও অর্থ জোগানের মাধ্যমে এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এতে বিটিভির ৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মামলাটি দণ্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৫৩/৩৮৪/৪৩৬/৩০৭/১০৯/১১৪/৫০৬ ধারাসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় করা হয়। মামলার অভিযোগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মামলার পর বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়া হয়। সবশেষ বুধবার (২৪ জুলাই) এ মামলায় আমীর খসরুকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার উল্লেখ করেন, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
মামলার এজহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সম্প্রচারকাজে নিয়োজিত পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব সম্প্রচার যন্ত্রপাতি এবং এসব যন্ত্রপাতি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থার প্রভূত ক্ষতিসাধন ও অগ্নিসংযোগ, ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের রিসিভশনে অগ্নিসংযোগ, ট্রান্সপোর্ট ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, ক্যান্টিনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং ভাঙচুর, অডিটোরিয়ামে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, মেকআপ শাখা ভাঙচুর, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ারড্রব ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
বিএনপিপন্থি আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখছি, বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম দিতেই মামলাটি করা হয়েছে। মামলার এজহারে বলা হয়েছে, আসামিদের নাম গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি। কিন্তু গোপন সূত্র কীভাবে জানতে পারলো তার কোনো ভিডিও ফুটেজ বা ভয়েস রেকর্ড নেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বিটিভি ভবনে হামলার নেপথ্যে বিএনপি জামায়াত, ক্ষতি ৫০ কোটি টাকার
সেতু ভবনে হামলায় ৩শ কোটি টাকার ক্ষতি
- আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০২:৪৮:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০২:৪৮:২৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ