ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গাজায় ইসরায়েলি নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ নড়াইলে সৌদি প্রবাসী হত্যা হামলা-ভাঙচুরের পর পুরুষশূন্য গ্রাম প্রেস সচিবের মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলছে ভারত রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘কাফন মিছিল’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা অনৈক্যের সুর রাজনীতিতে বাড়ছে অবিশ্বাস দলিতদের পরিবর্তনে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ- আনু মুহাম্মদ মালয়েশিয়ায় অভিযানে ১৬৫ বাংলাদেশি আটক জাবির থিসিসের ফলাফল বিপর্যয়ের অভিযোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি চীনের অর্থায়নে পঞ্চগড়ে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি যশোরে আগুনে পুড়লো ফার্মের ৪৪ হাজার মুরগি ঈদের পর থেকে বাজারে সবজির দাম বাড়তি চার মাসের সন্তানকে বিক্রি করে মোবাইল কেনেন মা! মানহীন কিন্ডারগার্টেনে ধ্বংস শিশুর ভবিষ্যৎ টিসিবির জন্য কেনা হবে ৫৪২ কোটি টাকার তেল সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৫ জন দুদকের হাতে গ্রেফতার টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আলী গুম হন- রিজভী কনটেইনারবাহী জাহাজ চলবে দুই বন্দরে

চোখে অস্ত্রোপচার ২৭৮ জনের চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন

  • আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০২:৪৭:১৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০২:৪৭:১৫ অপরাহ্ন
চোখে অস্ত্রোপচার ২৭৮ জনের চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলিতে চোখে আঘাত পেয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জনএর মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ২৭৮ জনেরঅস্ত্রোপচার করা বেশির ভাগ রোগীর চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিলঅপরদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪২০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ২০ জনের মতো আহতের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধকারও লেগেছে একটি গুলি, কারও লেগেছে দুটি গুলিঅনেকগুলো ছররা গুলির ক্ষত নিয়েও ভর্তি কেউ কেউআহতরা হাসপাতালে ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালে গত বুধবার থেকে গত শনিবার (১৭ থেকে ২২ জুলাই) পর্যন্ত ৬ দিনে ওইসব রোগীরা হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে যানএর মধ্যে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত ৩১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলতবে মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের অধিকাংশই চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেনঅনেকেই এখনো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করছেনপ্রয়োজন অনুযায়ী কারও কারও চোখে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছেচোখের আলো ফিরবে কি না এমন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা
গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষের পাশেই পর্যবেক্ষণ কক্ষের একটি বিছানায় শুয়ে ছিলেন হাবিবুর রহমানতার চোখে কালো চশমা ও মাথায় ব্যান্ডেজচশমা সরাতেই চোখের ক্ষত স্পষ্ট দেখা গেলচোখের কালো ও সাদা অংশও পুরোটাই গাঢ় লাল হয়ে আছেগত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মাঝরাতে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হাবিবুরকে ভর্তি করানো হয়
হাবিবুর রহমান ডেমরা এলাকার বাসিন্দাতিনি ডেমরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীতার ডান চোখে ও মাথায় ছররা গুলি লেগেছেএতে হাবিবুরের চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়এখন চোখের দৃষ্টি ফিরে পাবেন কি না, সে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনিহাবিবুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে তিনি যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজারের সামনের সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল করছিলেনসঙ্গে তার সহপাঠী ও বন্ধুরা ছিলেনহঠাৎ পেছন দিক থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে কিছু লোক এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়তখনই তিনি মাথায় ও চোখে গুলিবিদ্ধ হনহাসপাতালে হাবিবুরের সঙ্গে ছিলেন তার মা মর্জিনা আক্তারতিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলখবর পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে যাইছেলের মাথায় ছররা গুলি লেগেছিলতাই ঢাকা মেডিকেল থেকে ছেলেকে মালিবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়ওই হাসপাতালে মাথায় অস্ত্রোপচারের পর চোখের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে পাঠানো হয়মর্জিনা আক্তার আরও বলেন, এখানে শনিবার ছেলের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছেতবে চোখে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছেএ কারণে চিকিৎসকরা মঙ্গলবার বিকেলে আরেকটি অস্ত্রোপচার করবেন বলে জানিয়েছেনএখন সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি
দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় হাসপাতালটির চতুর্থ তলায় ৪৫১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশাল সদরের নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল আহসানতিনি বিএম কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীমঙ্গলবার নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় রাকিবুলসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেনবিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর একদল লোক হামলা চালায়সেখানেই ডান চোখে গুলি লাগে রাকিবুলেররাকিবুল আহসান জানান, বুধবার পর্যন্ত বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেনবৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানে ভর্তি করা হয়পরদিন চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়রাকিবুল আহসান আরও বলেন, ডান চোখে এখনো ঝাপসা দেখিমঙ্গলবার সকালে বড় ডাক্তাররা ভিজিটে এসেছিলেনতারা আরও তিনটি পরীক্ষা করতে দিয়েছেনচিকিৎসকরা বলেছেন, আমার চোখে আলো ফেরার অর্ধেক-অর্ধেক সম্ভাবনা রয়েছেআন্দোলনকারী ছাড়াও পথচারী, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষসহ অনেকেই গত কয়েক দিনের বিক্ষোভ-সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ছররা গুলিতে কিংবা ইটপাটকেলে চোখে আঘাত পেয়েছেনতাদের একজন মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা জিহাদ মাহমুদকর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় সহিংসতার মধ্যে তার চোখে ও শরীরে ছররা গুলি লাগে বলে জানান তিনিএকটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থী জিহাদ হাসপাতালের ৪১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন
জিহাদ মাহমুদ জানান, মিরপুর-২ নম্বরে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে তিনি বিক্রয়কর্মীর কাজ করেনগত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দোকানে ক্রেতা একেবারেই ছিল নাতাই তাদেরও বিকেলের মধ্যে ছুটি হয়ে যায়বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দারুস সালাম থানা এলাকা দিয়ে বাসায় ফিরছিলেনগণ্ডগোল দেখে তিনি একটি বাসের পেছনে গিয়ে লুকানতখনই তার শরীরে ও চোখে ছররা গুলি লাগে
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক গোলাম মোস্তাফা মুঠোফোনে বলেন, চোখে বিভিন্ন ধরনের আঘাত নিয়ে যারা এসেছিলেন, তাদের বেশির ভাগই ছররা গুলিতে আহততাদের প্রাথমিক অস্ত্রোপচার যেটা প্রয়োজন, সেটা দেয়া হয়েছেঅনেকে অস্ত্রোপচারের পর ছাড়পত্র নিয়ে চলেও গেছেনওই রোগীরা প্রতি সপ্তাহে ফলোআপের জন্য আসবেনতবে আস্তে আস্তে বোঝা যাবে দৃষ্টি কতটুকু ফিরছে
অপরদিকে, হাসপাতালটিতে গত মঙ্গলবার গিয়ে আহতদের মধ্যে দেখা গেল একটি কিশোরকেতার দুই পায়ে দুটি গুলি লেগেছেপা দুটো ব্যান্ডেজ করাপাশে বসা তার মামাগিয়ে কথা বলতে চাইলে মামা সবকিছুই বললেনতবে অনুরোধ জানালেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় যেন প্রকাশ করা না হয়আহত ব্যক্তির মামার দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মিরপুরে সংঘর্ষের সময় বাসায় ফিরতে গিয়ে ১৯ জুলাই (শুক্রবার) গুলিবিদ্ধ হয় তার ভাগনেঘটনাস্থল মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনআহত কিশোরটি স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীআহতের মামা আরও বলেন, তার ভাগনের দুই পায়ে যে দুটি গুলি লেগেছে, তা রাবার বুলেট বা ছররা গুলি নয়
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীটির ততটা ঝুঁকি নেইতবে কারও কারও পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছেতাদের একজন জাকির শিকদারতিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে ভর্তিবয়স ২৭ বছরসংঘর্ষের মধ্যে ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ঢাকার মধ্যবাড্ডা এলাকায় তার বাঁ পায়ে গুলি লাগেপাটি ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরাজাকির নিজেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী বলে উল্লেখ করেনগত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘শরীরের ব্যথা তো কিছু না ভাইআমি তো পঙ্গু হয়ে গেলাম! পরিবারের বোঝা হয়ে গেলামতিনি দাবি করেন, কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে তার পায়ে গুলি লাগে
জাকিরের বাড়ি মাদারীপুর সদরেতার বাবা শাহজাহান শিকদার ২০০৭ সালে মারা যানচার ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়ছোট ভাই ও মাকে নিয়ে তিনি মধ্যবাড্ডায় ভাড়া থাকেনপঙ্গু হাসপাতালে যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তার মা হনুফা বেগম পাশে বসে চোখ মুছছিলেনতিনি শুধু বলছিলেন, ‘আমার ছেলে (জাকির) সবাইকে দেখে রেখেছিল, এখন আমার ছেলেকে কে দেখবে?’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৫ জুলাই থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়পরে সংঘাত আরও বাড়ে১৬, ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই সংঘাতে এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত ২০১ মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়এর মধ্যে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, তরুণ ও প্রবীণ নাগরিক এবং তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্য রয়েছেনআহত বহু মানুষতাদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ রোগীদের পাশাপাশি ১২ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালটিতে আনা হয়েছিলতিনি আরও বলেন, কয়েক দিন পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিলরোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স