ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
‘ঘরো বাজার-সদাই কিচ্ছু নাই। বাজারে আইছিলাম দুইলা তরিতরহারি কিনতাম। তরিতরহারির বাজারো তো আগুন লাগছে। একেকটার দাম হুইন্ন্যা মাথা ঘুরাইতাছে। আমরার মতো গরিব মানুষ কী খাইয়া বাঁচবাম?’ গতকাল সোমবার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার সাপ্তাহিক হাটে বাজার করতে আসা ভ্যানচালক খোকন সাহার সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন। শুধু একজন খোকন সাহা নন, শাক-সবজির আকাশছোঁয়া দাম শুনে থতমত খেয়েছেন পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের সত্তোরোর্ধ্ব বাসিন্দা মো. সত্তর মিয়া। পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। আলাপকালে সত্তর বলেন, ‘মাছ-গোশত খাওয়ন তো মেলা আগেই ভুইল্ল্যা গেছি। অহন তরিতরহারির দাম যেমনে বাড়ছে, আমার মতো গরিব মাইনসের তো না খাইয়া মরণের বাও অইছে।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার সাপ্তাহিক হাট ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিনের ব্যবধানে শাক-সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০, বরবটি ১০০, ঢ্যাঁড়স ৬০, করলা ১২০, টমেটো ২০০, গাজর ২০০, কাঁকরোল ৮০, পেঁপে ৫০, ঝিঙে ৬০, লাউ প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১২০, কাঁচা কলার হালি ৪০ থেকে ৫০, মিষ্টিকুমড়া ৪০, পটল ৬০, শসা ৮০, ছোট আলু ৮০, বড় আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কচু প্রকারভেদে ৬০ থেকে ১২০ টাক দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, রসুন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, আদা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের দামও। প্রতি কেজি পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০, সিলভার কার্প ২৫০ থেকে ৩০০, রুই ৩৫০ থেকে ৪০০, কাতল ৪০০ থেকে ৪৫০, দেশি ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৬০০, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, কই মাছ ২৫০ থেকে ৩০০, মলা মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা হয় । তাদের ভাষ্য, ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে দিনমজুর শ্রেণিসহ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন চরম বেকায়দায় পড়েছে। বাজারে এসে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে পাতে ডিম ভাজি, আলু ভর্তা, ডাল ছাড়া আর কিছু জোটাতে পারছি না।’
এ প্রসঙ্গে পৌর হাটে শাক-সবজি বিক্রেতা মো. ইসলাম, মো. আসহাদুল মিয়া, সামসু মিয়া, আব্দুল মালেক, মো. বাবুল মিয়া, এরশাদুল হকসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, টানা বৃষ্টি এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে কৃষকের উৎপাদিত সব শাক-সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারে স্বাভাবিকের তুলনায় দাম অনেক বেশি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
