ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন
* নগরবাসীকে হতে হবে সচেতন * চার বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় * এত টাকা ব্যয়ের কী সুফল পেয়েছে নগরবাসী * ড্রেনেজ সিস্টেম আপগ্রেড করি, তাদের আবার প্রয়োজনে এগুলো খুঁড়তে হয়, ভাঙতে হয়। আবার রিপেয়ার করতে হয়। এসব কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়

জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ দায়িত্বশীলরা

  • আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৪ ১২:২২:৪১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৪ ১২:২২:৪১ পূর্বাহ্ন
জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ দায়িত্বশীলরা রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে ২৮ ঘণ্টায়ও মুক্তি পায়নি কিছু এলাকার মানুষ। ছবিটি বকশীবাজার এলাকা থেকে তোলা
  • মীর খায়রুল আলম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডিএনসিসি
জাদুর শহর ঢাকা। স্বপ্ন পূরণেরও। এই শহরে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঠাঁই মিলেছে কোটি কোটি মানুষের। যে শহর কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার সুযোগ করে দিয়েছে সেই শহরের একজন বাসিন্দা হিসেবে কী দায়িত্ব পালন করছি আমরা? উত্তর কিছুই না। করেছি শুধু দূষণ। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে যে যার ইচ্ছামতো যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে শহরে নিঃশ্বাস বন্ধ করেছি। ফলে স্বপ্নের শহর ধীরে ধীরে বাস অযোগ্য শহরে পরিণত হচ্ছে। এই শহর এখন যেন জলে ভাসা পদ্ম।
এই শহরের একজন বাসিন্দা হিসেবে আমাদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? সব দায়িত্ব কি নগরের দায়িত্বশীলদের? আমরা কবে দায়িত্বশীল হবো? প্রশ্ন আসতে পারে, আমাদের মানে নগরবাসীর আবার কিসের দায়িত্ব? আমরা যদি শুধু নৈতিকতার দিক থেকে মাত্র একটি দায়িত্ব পালন করি তাহলে এই শহরের ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ছুড়ে না ফেলে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে আমরা যদি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেই, তাহলে এই নগরী যেমন সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে তেমনি বাসিন্দাদের ভোগান্তিও কমবে। দেখা যায়, অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতার পেছনে মূল কারণ কী? নগরবিদদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নগরবাসীর অসচেতনতা, প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব এবং নগরের দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতা জলাবদ্ধতার মূল কারণ। নগরের দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতার আলাপে খানিকটা পর আসি। তার আগে জলাবদ্ধতার পেছনে নগরবাসী এবং প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব কতটুকু দায়ী সেই আলোচনা করা যাক।
রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, নগরীর মানুষ যখন কোনও পানীয় পান করে, সেই পানীয়র বোতল রাস্তায় ছুড়ে ফেলে। দিনশেষে সেই বোতলের ঠাঁই হয় ড্রেনে। এরকম নিত্যদিনের খাওয়া সব জিনিসপত্রের প্যাকেট বা খোসারও ঠাঁই মেলে ড্রেনে এবং ম্যানহোলের ঢাকনায়। একসময় মানুষের ফেলা এসব ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে আটকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেও ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যার চিত্র জলাবদ্ধতা হলেই দেখা যায়। নগরীতে যখন জলাবদ্ধতা হয় তখন দেখা যায়, ম্যানহোলের ঢাকনা ভর্তি পলিথিন-প্লাস্টিকে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা তখন ম্যানহোল থেকে পলিথিন উদ্ধার করে, ড্রেনে থেকে টনের পর টন বর্জ্য অপসারণ করে। গত কয়েক দফার বৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখা গেছে। অনেকের গৃহস্থালি এবং দোকানপাটের ময়লা আবর্জনাও পাওয়া যায় ড্রেনে। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এদিকে পানি প্রবাহের জন্য একসময় রাজধানীতে যতগুলো খাল ছিল তার অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। যে কয়টি খাল আছে তার কিনারাও দখল করে ধীরে ধীরে খালের প্রসস্ত সরু করে ফেলেছে দখলদাররা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় এই নগরীতে ৬৯টি খাল আর ৯৭টি পুকুর জলাধার ছিল। চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ওই খালগুলো। নৌকা, স্টিমার চলতো সেসব খালে। সে সময় নৌপথে মালামাল পরিবহণ বাণিজ্যিক প্রসার ঘটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ ছিল তখন ঢাকা। কিন্তু বর্তমানে সর্বসাকুল্যে তার তিন ভাগের দুই ভাগও নেই। দায়িত্বশীলদের অবহেলা গাফিলতিতে দখল-দূষণে বহু খাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার কারণে পানি প্রবাহের যে স্বাভাবিক পথ তা অনেক আগেই বিঘ্ন হয়েছে। ফল স্বরূপ আজকের এই জলাবদ্ধতা।
একসময় শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত খাল ছিল, ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে এর নাম ছিল পরীবাগ খাল। তবে সেখানে এখন খালের চিহ্ন নেই। ঠিক একইভাবে ধোলাইখাল, রায়েরবাজার, আরামবাগ, গোপীবাগ, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান, নারিন্দা, ধানমন্ডি খালেরও কোনও অস্তিত্বই এখন নেই। দখল-দূষণে মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার কাটাসুর রামচন্দ্রপুর খালও হারিয়ে গেছে। শুধু এসব এলাকা নয়, রাজধানী ঢাকার সব খালের চিত্র একইরকম। অনেকগুলো খাল এখন বিলুপ্ত। যেগুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। আগে খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের বেশি। খালের সঙ্গে নদীর যে যোগাযোগ ছিল তা এখন বিচ্ছিন্ন। খালের পানি এখন আর নদীতে গড়ায় না। মূলত খালগুলো হারানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগতভাবে বেড়েছে জলাবদ্ধতা।
নগরবিদরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশনের উচিত নগরকে ঢেলে সাজানো। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-রাজধানীর দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে পুনরায় সেখানে পানি প্রবাহ চালু করা। অতিবৃষ্টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করা। একইসঙ্গে নগরবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে জরিমানা বা শাস্তির বিধানের বিষয়েও জোর দেন নগরবিদরা।
এবার নগরীর দায়িত্বশীল অর্থা দুই সিটি করপোরেশনের পালা। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবছর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে হরহামেশা নানান ধরনের গলাবাজি করতে দেখা যায়। তাদের ভাষ্যমতে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবুও জলাবদ্ধতা নিরসনের কোনও ফল পায়নি নগরবাসী। বলা চলে জলাবদ্ধতার প্রশ্নে দুই সিটি করপোরেশন প্রাপ্ত নম্বর বরাবরের মতো শূন্য।
উদাহরণস্বরূপ ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেক এলাকার অলিগলি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। তন্মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরে মাজার রোড, ফার্মগেট, তেজগাঁও, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়াসহ মহাখালীর অলিগলিতে পানি জমে আছে। এছাড়াও দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, দক্ষিণ কুতুবখালী, কাজলা, শনির আখাড়া, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডেমরা (ডিএনডি এলাকা) রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকার অলিগলি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। দুই সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে গত চার বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। গত চার বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে এত টাকা ব্যয়ের কী সুফল পেয়েছে নগরবাসী তার চিত্র গতকালকের মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে দেখা গেছে। দুই সিটির অন্তত ৩০টি এলাকা ডুবেছে বৃষ্টিতে। চব্বিশ ঘণ্টা পর এখনও অনেক এলাকা জলাবদ্ধ।
দুই সিটির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গত শুক্রবার বৃষ্টি থামার পর থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা জলজট নিরসনে কাজ শুরু করেছে। দুই সিটির প্রায় হাজার কর্মী জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করেছে। সেই কাজ রাত বারোটা পর্যন্তও চলমান ছিল। হট লাইনে যারা ফোন দিয়েছে সেখানেই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ছুটে গিয়েছে।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগর ভবনে গত বছরের জুলাই মাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের বড় দুশ্চিন্তা ছিল জলমগ্নতা এবং জলাবদ্ধতা। তবে আমরা যখন ২০২০ সালে দায়িত্ব নিই তখন খাল, নর্দমাগুলো আমাদের দায়িত্বে ছিল না। তখন অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকা শহরের ৭০ ভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যেত, প্লাবিত হয়ে যেত। মনে হতো যেন বন্যা হয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে এখন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স