ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন
* কৃষি গুচ্ছভুক্ত ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো হয়নি ভর্তি পরীক্ষা * ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি সাধারণ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে * প্রকৌশল গুচ্ছভুক্ত তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো প্রায় ৭০০ আসন ফাঁকা

শিক্ষক আন্দোলন : ক্লাস শুরুর আগেই সেশনজট

  • আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৪ ১২:১৭:০২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৪ ১২:১৮:০২ পূর্বাহ্ন
শিক্ষক আন্দোলন : ক্লাস শুরুর আগেই সেশনজট সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতিতে শিক্ষকরা
বেশ কিছুদিন ধরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কোটাবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও নেই ক্লাসে। সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতিতে শিক্ষকরা। একই দাবিতে আন্দোলনে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এতে অচল দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে এমন আন্দোলনে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। মেধা তালিকায় জায়গা পেলেও ভর্তি হতে পারছেন না অনেকে। আবার কেউ কেউ অপেক্ষমাণ তালিকায় ঝুলে আছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন কি না, তা নিশ্চিত না হওয়ায় অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ভর্তির প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষকদের আন্দোলনে স্থগিত ভর্তি কার্যক্রম। প্রকৌশল গুচ্ছভুক্ত তিনটি প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও চতুর্থ ধাপের ভর্তির কার্যক্রম আটকে আছে। চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা অনিশ্চতায় দিন গুনছেন। অন্যদিকে কৃষি গুচ্ছভুক্ত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভবই হয়নি।
দেশের পুরোনো বড় (শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায়) চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি শেষ হলেও স্থগিত রয়েছে আবাসিক হলে ভর্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। ভর্তি শেষে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগতদের ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরুর আগেই সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। 
ভর্তি কমিটির প্রধানদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন প্রায় ২১ হাজার। এরমধ্যে ভর্তি শেষ হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার আসনে। এখনো সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ঝুলে আছেন। কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রায় চার হাজার। সেখানে এখনো ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় আবেদন করা ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় দিন গুনছেন। এছাড়া প্রকৌশল গুচ্ছভুক্ত তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন হাজার আসনের মধ্যে এখনো প্রায় ৭০০ আসন ফাঁকা। সেখানে ভর্তির জন্য অনেকে অপেক্ষমাণ তালিকায় ঝুলে আছেন।
গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলেন নাজনীন আক্তার। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। বাবা স্থানীয় ব্যবসায়ী। এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- পাওয়া নাজনীন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। তবে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও নির্বাচিত হননি। এখন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার শেষ ভরসা। নাজনীন আরও বলেন, এখানে ভর্তি হতে না পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছাড়া উপায় নেই। বেসরকারিতে পড়তে অনেক খরচ। আমার পরিবারের পক্ষে সেটা দেয়া কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, গুচ্ছে সুযোগ পাবো কিনা, সেটা তো নিশ্চিত হতেও পারছি না। হয়তো বাবাকে বললে ঋণ করে যত কষ্ট হোক বেসরকারিতে ভর্তির জন্য টাকা জোগাড় করে দেবেন। কিন্তু বেসরকারিতে ভর্তির পর যদি আবার গুচ্ছের ভর্তি শুরু হলে চান্স পাই, তখন সেই টাকাগুলো সব নষ্ট হবে। বিষয়টি নিয়ে খুব মানসিক অস্বস্তিতে আছি। নাজনীন এখনো শক্ত থাকলেও ভর্তি প্রক্রিয়া থমকে থাকায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেকে। সাজ্জাদুর রহমান নামে রাজশাহীর এক শিক্ষার্থী সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাকে। তারা বাবা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দেন।
কথা হয় সাজ্জাদুরের বাবা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভার্সিটিতে (বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তির জন্য ছেলেটা খুব টেনশনে আছে। রুয়েটে মোটামুটি ভালো মার্কস এসেছে ওর। কিন্তু ভর্তি কার্যক্রম তো বন্ধ। এজন্য সারাদিন টেনশনে থাকে। খাবার খায় না ঠিকমতো। হঠা সেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রাজশাহী মেডিকেলে নিলে ডাক্তার বলেছেন অতিরিক্ত মানসিক চাপে ছেলেটার অবস্থা। শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন, ক্লাস বন্ধ থাকতে পারে। কিন্তু ভর্তি কেন বন্ধ থাকবে? এটা মেনে নেয়া যায় না। ভর্তির জন্য ঝুলে থাকা আরও অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিবেদক। তারা সবাই চরম বিষণ্নতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসএসসি এইচএসসিতে যত ভালোই রেজাল্ট হোক, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে ক্যারিয়ার থেমে যায়। মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মুখিয়ে থাকেন। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের। রাবেয়া আক্তার নামে ঢাকার এক ভর্তিচ্ছুর মা মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায়। আবেদা পারভীন নামে ওই অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা এটা কেন করছেন? ক্লাস নেবেন না ঠিক আছে, ছেলে-মেয়েদের ভর্তি কেন আটকে রাখছেন? এটা টর্চার। আমার মেয়েটা পাগল হয়ে যাচ্ছে। আমিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখানে ঝুলে থাকায় আমার মেয়ে মনমরা হয়ে পড়েছে।
প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে আন্দোলন চলছে, তাতে পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনেরও। ফলে কর্মসূচি শুরুর আগেই নোটিশ দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন। গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটিতে এবার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক . আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আন্দোলন চলছে, শিক্ষক হিসেবে তাতে আমাদের সমর্থন আছে এটা ঠিক। তবে প্রশাসনিক দিক দিয়ে আমরা সক্রিয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কাদের দিয়ে কাজ করবো? লোকবল তো নেই। তারা তো আন্দোলনে। বাধ্য হয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে। একেবারে শেষ দিকে এসে আন্দোলনের কারণে আটকে গেছে ভর্তি কার্যক্রম। জুলাই থেকে শিক্ষকরা কর্মসূচি পালন শুরু করলেও ২৯ জুন রাবি প্রশাসন ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিতের নোটিশ দেয়।
ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলে সেটা নিয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার তো আমাদের নেই। আমরা পরামর্শ দিতে পারি। এটা মন্ত্রণালয় তথা সরকার পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ইউজিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ইউজিসির চেয়ারম্যান, সদস্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে শিক্ষকরাই দায়িত্বে। তারা পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলনে শিক্ষকদের পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। ফলে নিয়ে টুঁ শব্দও করছেন না তারা।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আমি এটা নিয়ে অনেকবার বলেছি। সর্বজনীন পেনশন সরকারের নির্বাহী বিভাগের একটি আদেশ। এটা সরকার সবার জন্য চালু করছে। শিক্ষকরা সেখানে আসতে চান না বলে আন্দোলন করছেন। যদি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সেটা সরকার নেবে। মন্ত্রী হিসেবে আমার কোনো বক্তব্য নেই। ভর্তি বিভিন্ন সেবা পেতে ভর্তিচ্ছু এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা, প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বতন্ত্র। তারা নিজেদের আইনে চলে। মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে। তাদেরকে কোনো কিছুতে বাধ্য করতে পারে না। তাই নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। সরকার এটা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে কোনো পদক্ষেপ নিতে বললে তখন আমরা কাজ করবো।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স