
দেশে বছরে ২৪০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য নষ্ট
- আপলোড সময় : ২৯-০২-২০২৪ ০৭:৫৩:২৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-০২-২০২৪ ০৭:৫৩:২৭ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে প্রতি বছর উৎপাদিত ফল ও কৃষিপণ্যের ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেগুলো সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায়। এতে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে দেশবাসীকে। আশার খবর হল, এসব পণ্য সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হিমাগার খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং তাদেরকে সুবিধা দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ ভবনে ‘কোল্ড চেইন ইনভেস্টমেন্ট কনফারেন্স ২০২৪’ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। সম্মেলনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় হিমাগার খাতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের সুদহারে ভর্তুকি দেয়ার উপায় খুঁজতে চাইছে সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাগ্রিকালচার এর বাংলাদেশে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্ট (বিটিএফ) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশে সে দেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের একটা বিশেষ সুযোগ তৈরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের সুযোগ নিতে তাদেরকে বিশেষ করে চেইন কোল্ড স্টোরেজ খাতে বিনিয়োগে সুদহারে কীভাবে ভর্তুকি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট বন্ধুদের সঙ্গে বসব। ব্যাংক ঋণের সুদহার এই মুহূর্তে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এই সমস্যা এভাবেই সমাধান করতে হবে। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে তৈরির জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত ও ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ ও ৯ এ বেঁধে দেয়া হয়। তবে গত জুন মাসে সেই সীমা তুলে দেয়া হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কেন হিমাগার খাতে বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধার কথা ভাবা হচ্ছে-সে কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা চেইন হিমাগার তৈরি করে যদি তা রক্ষা করতে পারি তাহলে আমি শতভাগ নিশ্চিত যে আমাদের রফতানি বৈচিত্র্য বাড়বে। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রতি বছর আমাদের বিপুল কৃষি পণ্য নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃষি বিনিয়োগ পরামর্শক সংস্থা লিক্সক্যাপ অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড ক্যাপিটাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইলিয়াম ফেলোস মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ৪৪ শতাংশ ফল ও শাকসবজি নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে আনুমানিক বার্ষিক ২৪০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। কোল্ড চেইন লজিস্টিকসে বিনিয়োগ এই ফসল-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখেযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে এবং বাংলাদেশকে আমদানি করা খাবারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পেঁয়াজ ও আলু আমদানি করতে হয়। অথচ দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ ও আলু সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় বিপুল পণ্য নষ্ট হয়। যদি হিমাগার ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যেত তাহলে বাংলাদেশের পেঁয়াজ এবং আলু আর আমদানির প্রয়োজন হতো না। যথাযথ কোল্ড চেইন স্টোরেজ এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে বিনিয়োগ আমদানি নির্ভরতা এবং ফসল-পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস করবে জানিয়ে ফেলোস বলেন, এটি মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রধান খাদ্যের সরবরাহ সমতলকরণের মাধ্যমে দেশের জন্য একটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব রাখতে পারে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কৃষি সার্ভিস অ্যাটাশে সারাহ গিলেস্কি বলেন, বাংলাদেশে একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয়েছে। এর ফলে এখানে বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। এই বাজার ধরার জন্য এ খাতে বিনিয়োগের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারি সহযোগিতা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে প্রতিযোগী দেশগুলোর মত বা অনেক ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় বেশি সুবিধা দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ খুব দ্রুত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশে এখনো মোট রফতানির ৮৪ শতাংশই পোশাক খাত। দেশের রফতানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে কৃষি খাত বিশাল অবদান রাখতে পারে। কৃষির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গেলে অবশ্যই আমাদের জমি ব্যবহারের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী কৃষি উৎপাদন ও শিল্পায়ন করতে হবে।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ