ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গাজায় ইসরায়েলি নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ নড়াইলে সৌদি প্রবাসী হত্যা হামলা-ভাঙচুরের পর পুরুষশূন্য গ্রাম প্রেস সচিবের মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলছে ভারত রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘কাফন মিছিল’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা অনৈক্যের সুর রাজনীতিতে বাড়ছে অবিশ্বাস দলিতদের পরিবর্তনে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ- আনু মুহাম্মদ মালয়েশিয়ায় অভিযানে ১৬৫ বাংলাদেশি আটক জাবির থিসিসের ফলাফল বিপর্যয়ের অভিযোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি চীনের অর্থায়নে পঞ্চগড়ে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি যশোরে আগুনে পুড়লো ফার্মের ৪৪ হাজার মুরগি ঈদের পর থেকে বাজারে সবজির দাম বাড়তি চার মাসের সন্তানকে বিক্রি করে মোবাইল কেনেন মা! মানহীন কিন্ডারগার্টেনে ধ্বংস শিশুর ভবিষ্যৎ টিসিবির জন্য কেনা হবে ৫৪২ কোটি টাকার তেল সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৫ জন দুদকের হাতে গ্রেফতার টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আলী গুম হন- রিজভী কনটেইনারবাহী জাহাজ চলবে দুই বন্দরে

গুজবে সাপের মতো নিধন হচ্ছে শামুক

  • আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৪ ১২:২৭:৫৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৪ ১২:২৮:৫৯ পূর্বাহ্ন
গুজবে সাপের মতো নিধন হচ্ছে শামুক
সম্প্রতি জনমনে বসে গিয়েছিল রাসেল ভাইপার নামের সাপ আতঙ্কএরপরই শুরু হয় সাপ মারার প্রতিযোগিতাএবার কিশোরগঞ্জে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এক ধরনের স্থলচর শামুককৃষি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর-এমন গুজব ছড়িয়ে নির্বিচারে মারা হচ্ছে আফ্রিকান জায়ান্ট নামে পরিচিত এই শামুকএমনকি কৃষি বিভাগও পরামর্শ দিচ্ছে শামুকটি মেরে ফেলারঅন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথাতারা বলছেন, আফ্রিকান জায়ান্ট শামুকের খারাপের চেয়ে ভালো গুণ অনেক বেশিজীব-বৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি মূল্যবান এ শামুককে ঘিরে রয়েছে বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনাতাই তারা সবার কাছে এটি ধ্বংস না করার আহ্বান জানিয়েছেনজানা গেছে, জেলার তাড়াইল ও হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় শামুকগুলো বেশি দেখা যাচ্ছেবাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে এগুলোতাড়াইল সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে- এ প্রতিষ্ঠানের পেছনের দেয়াল স্যাঁতসেঁতে ও বিভিন্ন গাছপালাতে ঝুলে আছে ঢাউস সাইজের বড় বড় শামুকবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের জানান, দিনের বেলায় দেয়ালে, ঘরের টিনে, গাছে ও নানা জায়গায় দলবেঁধে লুকিয়ে থাকে এগুলোবের হয় রাতের বেলায়হানা দেয় বাসাবাড়ি, দালানকোঠা, বাগান ও ক্ষেতখামারেস্থানীয় কৃষক আলিউর রহমান বাড়ির আশপাশ, সবজি ক্ষেত থেকে এসব শামুক অপসারণের কাজ করছেনতিনি একটি বালতিতে শামুকগুলো একসাথে জড়ো করছেন, পরে মেরে ফেলবেনতার দাবি, এসব শামুক পরিবেশ, ফসল, ঘরের আসবাবপত্র এবং দেয়ালেরও ক্ষতি করছেতাড়াইল বাজারের পাটপট্টি, খাদ্যগুদাম ও মাখনাপাড়া এলাকায় দেখা যায়, সেখানকার নারীরাও এসব শামুক ধরে লবণপানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে মেরে ফেলছেখাদ্যগুদাম এলাকার গৃহিনী শ্যামলী রানী দাস জানালেন, শামুকে তার একটি সবজি বাগানের যে কয়টা গাছ ছিল সবগুলো পাতা খেয়ে ফেলেছেস্কুলের বেঞ্চ, টেবিল, দেয়াল বসে থাকেশিশুরা ভয় পায়শুধু তাই নয়, বইপত্র এমনকি কাগজপত্র খেয়ে ফেলেপাটপট্টি এলাকার কৃষক রহমত ব্যাপারী জানান, তিন মাসে তার ৩০টি পেঁপে ও ২৫টি আমের চারা খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে এই শামুকতাই এগুলো চোখে পড়লেই ধ্বংস করে দিচ্ছেন তিনিকিভাবে এত এত শামুক এখানে আসলো, তিনি বলতে পারছেন নাএদিকে এসব শামুকে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২৩ জুন স্থানীয় কৃষি অফিসে লিখিত আবেদন করে অরণ্যনামে একটি পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এগুলো আফ্রিকান জায়ান্ট শামুকতাদের দাবি-এসব শামুক পরিবেশ, জীব-বৈচিত্র্য ও কৃষির জন্য খুবই ক্ষতিকরএই শামুক ছড়িয়ে পড়লে হুমকির মুখে পড়বে গোটা কৃষি ব্যবস্থাএ বিষয়ে তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শ চেয়েছেতাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহাও শামুকটি আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক বলে শনাক্ত করেছেনতিনি এ শামুকটি ক্ষতিকর দাবি করে বলেন, এ শামুকের উপদ্রব নিয়ে তারা উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করেছেনএটি যেন ছড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করছেতবে কৃষি বিভাগ ও সাধারণ মানুষ আফ্রিকান জায়ান্ট শামুককে কৃষি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বললেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথাতারা বলছেন, এ শামুক মোটেও ক্ষতিকর নয় বরং জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশের পক্ষে সহায়কজানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকান শামুকটিএ সময়ে শামুকটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদেরতখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বাগান ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়জানাশোনা ও গবেষণা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও শামুকটিকে ক্ষতিকর আখ্যা দিয়ে ধ্বংসের কথা বলা হয়এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ সালাম জানান, এটি আফ্রিকান জায়ান্ট ল্যান্ড স্নেইলতখন এসব নিয়ে দেশে গবেষণা না থাকায় এটিকে ধ্বংসের কথা বলা হয়েছিলআফ্রিকান শামুকের বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ড. এম এ সালামতিনি বলেন, এ শামুক মোটেও ক্ষতিকর নয়বরং পরিবেশ, জীব-বৈচিত্র্যের জন্য সহায়কএ শামুকের মাংস খুবই মূল্যবান, মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারীবিশ্বের অনেক দেশে এর লালা থেকে তৈরি পাউডার উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়আফ্রিকায় এ শামুকের খামার রয়েছেআমাদের দেশে এটি হতে পারে লাভজনক বাণিজ্য খাতকাজেই গুজবে কান দিয়ে এগুলো ধ্বংস করা যাবে নাপরিকল্পিতভাবে এগুলোর চাষাবাদ বাড়ানো দরকারএ অবস্থায় আফ্রিকান শামুক ধ্বংস না করেও বাগান কিংবা গাছপালা রক্ষা সম্ভব বলে মনে করেন তিনিতিনি মনে করেন, এ বিষয়ে বন ও কৃষি বিভাগকে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভূমিকা রাখা জরুরি
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স