পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ডুপ্লেক্স বাড়িটি গতকাল শনিবার বিকেলে ২৪ কাঠা জমির ওপর ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়িটি জব্দ করতে অভিযান শুরু করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে বাড়িটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে বাড়ির গেটে একটি ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্ত’ টাঙিয়ে দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম, দুদকের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রউশনী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল, সহকারী কমিশনার ভূমি সিমন সরকার প্রমুখ। জানা গেছে, রূপগঞ্জের দক্ষিণবাগ এলাকায় আনন্দ হাউজিং সোসাইটিতে একটি কৃত্রিম লেকের পাশে অবস্থিত লাল রঙের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িটি। বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা বিপুল পরিমাণ ‘অবৈধ সম্পদ’ জব্দ করেছে দুদক। গোপালগঞ্জে বিশাল এলাকাজুড়ে রিসোর্ট, রাজধানীর গুলশানে ১০ হাজার বর্গফুটের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট (চারটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে), বান্দরবানে ২৫ একর বাগানবাড়িতে রিসিভার নিয়োগ দিয়ে তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়েছে। এবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত ২৪ কাঠা জমির ওপর বেনজীরের দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটিও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয়েছে। গতকাল দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, শনিবার দুপুরে রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিং সোসাইটি এলাকার এ বাড়িতে আদালতের নির্দেশে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হবে। এ সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও দুদকের কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালের দিকে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বেনজীর আহমেদ দেশে থাকলে মাঝেমধ্যেই এ বাড়িতে আসতেন, রাত্রিযাপনও করতেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বাংলোবাড়িটিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কেয়ারটেকারের পাশাপাশি দুটি কুকুরও রাখা হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুন আদালত তৃতীয় দফায় বেনজীরের আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছেন। সে তালিকায় এ বাংলোটিও রয়েছে। এরপর বাড়িটি দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত। বাংলোটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ অনুসন্ধান শুরু হলে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশত্যাগ করেন বেনজীর। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ২০৫টি দলিলে ৭০২ বিঘা জমি (৩৩ শতকে এক বিঘা হিসাবে), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে সন্ধান পায় দুদক। এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে এবং ১২ জুন আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব সম্পত্তি গড়েন বেনজীর। দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ অনুসন্ধান করছে। বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান বেনজির। এরপর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী অবসরে যান তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

রূপগঞ্জে বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়ি সিলগালা
- আপলোড সময় : ০৭-০৭-২০২৪ ০৬:৫৩:৩২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০৭-২০২৪ ০৬:৫৩:৩২ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ