ঢাকা , সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই অধিকাংশ কৃষকের রঙিন ফুলকপি চাষে নারী উদ্যোক্তার বাজিমাত রামপালে মন্দিরসহ জমি ফিরে পেতে বৃদ্ধের আকুতি বিপিজেএর সভাপতি মহসীন সম্পাদক বাবুল ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা সরকারি কলেজের সম্পত্তি দখল পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ ‘মাছের প্রজনন বাড়াতে কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে’ বোতল দিয়ে ঘর তৈরি করে বাবার স্বপ্নপূরণ আগুনে পুড়ে নিঃস্ব বিকাশ ত্রিপুরার পরিবার ডিআইজিসহ পুলিশের ৪ কর্মকর্তা আটক অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু ৮ম দিনে এসেছে ১০২ নতুন বই শিক্ষাখাতে বিশৃঙ্খলা দিশেহারা সরকার শিক্ষাখাতে বিশৃঙ্খলা দিশেহারা সরকার বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়ার ৮ মামলা বাতিলের রায় প্রকাশ ধানমন্ডি-৩২ সহ দেশব্যাপী ভাঙচুর ও সহিংসতায় উদ্বেগ টিআইবির প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরবে বিএনপি বাজারে চাল ও তেল নিয়ে অস্থিরতা কাটছে না
* প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে কয়েকটি চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই হবে * গত ৬ বছরে সিংহভাগ ঋণ এসেছে চীন থেকে * পদ্মা সেতু রেল লিংক, কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্ল্যান্টের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে চীনের অর্থায়নে

উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে বাড়ছে চীনের অংশগ্রহণ

  • আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৪ ০৩:২২:৫৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৪ ০৩:২২:৫৭ অপরাহ্ন
উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে বাড়ছে চীনের অংশগ্রহণ
বিগত এক দশকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে চীনের ঋণপ্রবাহপদ্মা সেতু রেল লিংক, কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্ল্যান্টের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে চীনের অর্থায়নেআরও কয়েকটি বড় প্রকল্প চলমান
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, যেখানে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছিল দেশটি, সেখানে গত ১২ বছরে দিয়েছে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারএই সময়ে প্রতিশ্রুত ঋণ ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারঋণ দেয়া উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে চীনএখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক থেকে, যা মোট ঋণের ৩১ শতাংশএর পরই রয়েছে এডিবি ২৩ শতাংশ এবং মোট ঋণের ১৭ শতাংশ জাপানের কাছ থেকে নেয়াএর পরই রাশিয়া ১০ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৯ শতাংশ নেয়া চীনের কাছ থেকে
গত এক দশকে চীনের প্রতিশ্রুত ঋণ ও ঋণছাড় দুটোই বেড়েছে২০১৩ সালে চীনের ঋণ দেয়ার অঙ্গীকার ছিল ৩৫ দশমিক ৯৮ কোটি ডলারছাড় করে ৭ দশমিক ৭ কোটি ডলার২০১৪ সালের প্রতিশ্রুতি ছিল ৫ কোটি ডলার, ঋণছাড় করে ৪৭ দশমিক ২৭ কোটি ডলারমূলত ২০১৪ সাল থেকে চীনা ঋণের প্রবাহ ও ছাড় বাড়তে থাকে২০১৫ সালে চীন কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি না দিলেও ১২ দশমিক ১২ কোটি ডলার ছাড় করে২০১৬ সালের প্রতিশ্রুত ঋণ ১৯ দশমিক ৫ কোটি ডলার, ছাড় ১১ দশমিক ৫৭ কোটি ডলার২০১৭ সালে ১২৪ দশমিক ৪৭ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটিওই বছর ছাড় হয় ৬ দশমিক ৩৮ কোটি ডলার
২০১৮ সালে প্রতিশ্রুত ঋণ ছিল প্রায় ৩৬২ দশমিক ৪৫ কোটি ডলার, যা এখন পর্যন্ত সর্বাধিকওই বছরে ছাড় হয় ৯৭ দশমিক ৮৪ কোটি ডলার বা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার২০১৯ সালে প্রতিশ্রুত ঋণ ৭ দশমিক ২৫ কোটি ডলার হলেও ছাড় হয় ৫১ দশমিক ৫০ কোটি ডলার২০২০ সালে চীন ২৪২ দশমিক ৭৪ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ছাড় করে ৬৯ দশমিক ৫৪ কোটি ডলার২০২১ সালে কোনো প্রতিশ্রুতি না থাকলেও ৮৮ দশমিক ৭৯ কোটি ডলার ছাড় করে দেশটি২০২২ সালে প্রতিশ্রুত ঋণ ১১২ দশমিক ৬৯ কোটি ডলার, ছাড় ৯৮ দশমিক ৯৫ কোটি ডলার২০২৩ সালে ২৭ দশমিক ৬২ কোটি ডলার প্রতিশ্রুত ঋণের বিপরীতে ছাড় ১১৩ দশমিক ২৭ কোটি ডলারবাংলাদেশকে এ যাবত মোট ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীনছাড় হয়েছে ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারছাড় হওয়ার মধ্যে ১০ কোটি ডলার শুধু অনুদান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেনওই সফরে বেশ কিছু যুগান্তকারী বাণিজ্যিক চুক্তি হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদচীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানশাওয়ের সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করছি, যা দুই দেশের সম্পর্কের মাইলফলক হতে পারে
জানা যায়, এবারের সফরের বিশেষ দিকটি হবে বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণএর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে দেশটিপাশাপাশি ভারতের সঙ্গে যেভাবে টাকা রুপিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা ইউয়ানে লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারেএ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে
৭ বিলিয়ন ডলার চীনা অর্থায়ন চাওয়া প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, সঠিক ফিগার এখনো ঠিক হয়নি, যা কিছু রিপোর্ট হচ্ছে সবই প্রাথমিক বা ধারণাভিত্তিকপ্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমন্বয় সভা হবেসভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার পর চূড়ান্ত হবেএর আগে কোনো কিছুই ফাইনাল না বা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে নামেট্রোরেল ও চার লেনে চীনা ঋণের বিষয়ে আলোচনা চলছে ঘটনা সত্য, তবে চূড়ান্ত নয়
মেট্রোরেল ও ভাঙ্গা-কুয়াকাটা রেলপথ এজেন্ডায় আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ঘটনা সবই সত্যএগুলো এজেন্ডায় আছেএছাড়া আরও অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছেতবে কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নিআমরা চূড়ান্ত করারও কেউ নাচূড়ান্ত হবে তখনই যখন চীনে চুক্তি সই হবেতার আগে এলে কিছু বলাটা সমীচীন হবে না
যে প্রকল্পের রিটার্ন তাড়াতাড়ি মিলবে এমন প্রকল্পে চীনা ঋণ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা যেন ডিফল্টার না হইদ্রুত রিটার্ন ভালো হবে এমন প্রকল্পে চীনের ঋণ নিতে হবেকারণ চীন বড় গ্রেস পিরিয়ড দেবে নাসুদ ও আসল পরিশোধ করার একটা তাড়া থাকেসামনে বিপদ আসছে, সবাইকে সাবধান হতে হবেকর্ণফুলী টানেল ও পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পে সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হবেযে প্রকল্পে রিটার্ন কম সেই প্রকল্প না নেয়াই ভালোতিনি আরও বলেন, এমন প্রকল্প আছে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে চলমান অথচ কাজ অর্ধেকও হয়নিতাহলে এ প্রকল্পে কীভাবে সুফল মিলবেউল্টো সুদ ও আসল পরিশোধের সময় চলে আসবেআমাদের সব কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে সুচিন্তিতভাবে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে চীন বাংলাদেশকে যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার ৯৫ শতাংশই এসেছে গত ১২ বছরেশেষ ছয় বছরে এসেছে ৮৫ শতাংশ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে দেশটির ঋণছাড়অর্থাৎ, ২০১৩ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই (এক অঞ্চল, এক পথ) চালুর পর থেকেই বড় আকারে ঋণ দেয়া শুরু করে
জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৭টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়এসব প্রকল্পে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটিযার মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চুক্তি হয়েছেতিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির অপেক্ষায়বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত অর্থছাড়ও বাড়ে
ইআরডির তথ্যমতে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে বাংলাদেশের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৬২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারএর মধ্যে চীনের অংশ ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৬২ শতাংশবাংলাদেশের ঋণের স্থিতিতে চীনের অবস্থান চতুর্থচীন সরকার সাধারণত দুই ধরনের ঋণ দেয়, এর একটি হলো মার্কিন ডলারে প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং অপরটি চীনের নিজস্ব মুদ্রায় গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) বা সরকারিভাবে দেয়া রেয়াতি ঋণ
অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনা, তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশন পর্যন্ত রেললাইনকে মিটারগেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি স্থাপন এবং পৌরসভাগুলোর জন্য পানি সরবরাহ প্রকল্প১১ প্রকল্পে চীন থেকে ৫০২ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছেযদিও এর একটিরও কাজ এখনো শুরু হয়নিতবে তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ভারতও বিনিয়োগ করতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়
চীনা ঋণে চলমান ছয় প্রকল্প হচ্ছে চট্টগ্রামের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পিজিসিবির আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্পকক্সবাজারের মহেশখালীতে সাগরের তলদেশ দিয়ে তেল সরবরাহের জন্য নির্মিত পাইপলাইন এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়এটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম প্রকল্প নামে পরিচিতএর আগে গত বছরে জুলাইয়ে রাজধানীর আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দিতে চালু হয় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়ঃশোধনাগারের কার্যক্রমঋণের বাইরে অনুদানের টাকায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আটটি মৈত্রী সেতু নির্মাণ করেছে চীন
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স