* বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন * কোটা নয়, মেধার ভিত্তিতে চাকরি * কোটা সংস্কার না করে ঘরে না ফেরার ঘোষণা * আন্দোলনে যেতে হলে হলে ছাত্রলীগের বাধার অভিযোগ * বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ * শাহবাগে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান, রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট * পৌনে দুই ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা অবরোধের পর নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ মোড় থেকে সরে গেছেন কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। আমরা আজ শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করব এবং এই কর্মসূচি সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এরপর আগামিকাল শনিবার বেলা ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। রোববার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের যুদ্ধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, কুলীনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। চাষার ছেলে চাষা থেকে যাবে, মজুরের ছেলে মজুর থেকে যাবে, রাজমিস্ত্রির ছেলে রাজমিস্ত্রি থেকে যাবে, তাদের সারাজীবন শোষণ করবে ধনীক শ্রেণি! এজন্য একাত্তর (১৯৭১) সাল থেকেই তারা আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করে আসছে। আমাদের যারা পূর্বপুরুষ তারা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। শাহবাগ অবরোধের কর্মসূচি শেষ করে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে যান। এর আগে এদিন বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহবাগে যান এবং শাহবাগ মোড় ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত দেশের শিক্ষাঙ্গন। গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানি ‘নট টুডে’ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর কোটা নিয়ে নিয়মিত আপিল করার নির্দেশও দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাজধানীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে আন্দোলনে যোগ দেন। এই আন্দোলনের ফলে শাহবাগের যানচলাচল বন্ধ থাকে এবং এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। বিশেষভাবে শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, হাতিরপুল, সেন্ট্রাল রোডে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে শাহবাগ মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বাংলামটর ও কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যানজট পৌঁছায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়, তবে বিকেল ৫টার পর যানজট তীব্র হয়ে ওঠে। রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে যানজট শুরু হয় বাটা সিগন্যাল পার হয়ে তা পৌঁছায় নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকায়। অন্যদিকে যানজটের প্রভাব পড়ে হাতিরপুল ও সেন্ট্রাল রোড এলাকায়ও। এসব এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে যানবাহন আটকে থাকে এবং যানবাহনের লম্বা লাইন সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবসে অফিস করে বের হওয়া যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শাহবাগ মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পার হয়ে বাংলামটর ও কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যানজট পৌঁছে যায়। অন্যদিকে শাহবাগ মোড় থেকে মৎস্য ভবনমুখী রাস্তায়ও যান চলাচল স্থবির ছিল।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শাহবাগে চলমান আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট যানজট কমাতে কাঁটাবন এলাকায়, মৎস্যভবন এলাকায় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ডাইভার্শন করে দেয়া হয়। যাতে করে শাহবাগ বন্ধ থাকার কারণে অন্যান্য এলাকায় যানজট ছড়িয়ে না পড়ে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সোহেল রানা বলেন, আন্দোলনের যানজট কমাতে আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি এবং শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া তিন রাস্তায় ডাইভারশন করে দেয়া হয়েছে। তবে রাস্তায় গাড়ির চাপ রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ চলছে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে পৌনে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গতকাল বেলা ৩টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের অবরোধ থেকে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন মুক্ত হলে এই রুটে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। এর আগে এদিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে বাকৃবি জব্বারের মোড় সংলগ্ন রেললাইনে এই ট্রেন অবরোধ করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা ক?্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে রেললাইনে অবস্থান নেন। এতে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে আটকেপড়া যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এ ঘটনার খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. আজাহারুল ইসলাম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা জাতীয় ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানাই।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক খান জানান, শিক্ষার্থীরা জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আটকে রাখে। পরে বেলা ৩টা থেকে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সব চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
গতকাল ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে এবং ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন করতে দেখা যায়। অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। সে জন্য মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে হবে। কোটা দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ করা সম্ভব নয়। এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যের বিরুদ্ধেই লড়তেই এ দেশের মুক্তিযোদ্ধা সূর্যসন্তানরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমরা মনে করি স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে চলমান এই কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। কোটা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করা হচ্ছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রেখে সরকারকে বলতে চাইÑ তাদের যত ইচ্ছা সুযোগ-সুবিধা দেন তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এর বিপরীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে ঘোষণা দিয়েছিলেন বিসিএসসহ সরকারি সব প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা থাকবে না। আমরা তার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। আমরা বলতে চাই ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সেই পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। একই সঙ্গে শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে নয়; বরং দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও অযৌক্তিক সব কোটা বাতিল করতে হবে।
আরিফুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ ও সমতা তৈরি করে দেয়ার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। যা সংবিধানেও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এমন ব্যবস্থা চলতে থাকলে একসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় পর্যায়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সে জন্যই আমরা এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট নীতিমালা প্রত্যাশা করছি। কোটা পুনর্বহাল নয়; বরং বাতিলের আদেশই বলবৎ রাখতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এমনটিই চাইছেন। ২০১৮ সালের পরিপত্র করা না হলে আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
হাইকোর্টের দেয়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে মহাসড়কের উভয় লেনে অন্তত ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভে কুবি শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকারি চাকরিতে কোটার ওপর হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না বলে হুঁশিয়ারি করে তারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবেন। এদিকে আন্দোলনের কারণে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বিপাকে পড়েন মহাসড়কের যাত্রীরা। মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে পশ্চিমে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত এ যানজট লাগে। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবরে মহাসড়কে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তারা সরে গেলে যানজট কমবে। আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করছি।
দুপুর ১টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে মহাসড়ক অবরোধ কারণে হাটহাজারী-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। পরে দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানান এবং আগামীকাল বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বৃষ্টির মধ্যেও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সকাল থেকেই হল ও মেস থেকে প্যারিস রোডে অবস্থান নিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল বের করে রাবির মূল ফটকের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান শেষে মিছিল বের করে কাজলা গেট হয়ে প্যারিস রোডে এসে শেষ করে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা ব্যবস্থার সংস্কার না করা হলে আমরা সরকারকে বলতে চাই আরেকটি আঠারো আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের দেশটা যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছেন সাংবিধানিকভাবেই তাদেরকে সেটার প্রতিদান দেয়া হয়েছে এবং সেটার ফল তাদের বর্তমান প্রজন্মও এখন অবধি ভোগ করছে। কিন্তু সেই প্রতিদানের পরিমাণই বা কতটুকু হওয়া দরকার ছিল। তারা সংখ্যায় দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম এবং তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। যেটা একেবারেই অযৌক্তিক। রেলওয়েতে তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ শতাংশ। যেটা বলা যায়, সম্পূর্ণ কোটার দখলেই। আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই।
তারা আরো বলেন, আমাদের পূর্বসূরিরাও এই কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। তারপর সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আবারো সেটি প্রবর্তন করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই কৃষক শ্রমিকের সন্তান। এছাড়া বাকি যারা আসে তারা সবাই প্রায় প্রতিষ্ঠিত পরিবার থেকেই আসে। দেখা যায়, কোটার সুবিধা কিন্তু তারাই পেয়ে থাকে।
এ সময় তারা চারটি দাবি আদায় নিয়ে কথা বলেন। দাবিগুলো হলোÑ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে; কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটা দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে; ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে। উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আন্দোলনরত লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইউসুফ শরিফ বলেন, আজকে আমরা কোটার বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় অবস্থান করছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সমাজ ব্যবস্থায় বাতিল করা হোক। বৈষম্যমূলক নিয়োগ ব্যবস্থা বাতিল করা হোক। সাধারণ শিক্ষার্থী, মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পাক। ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধু সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিল চাকরির ক্ষেত্রে কিন্তু বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল রয়েছে। যার ফলে বাকি মাত্র ৪৪ শতাংশ কোটা রাখা আছে। যা সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করা হয়। যেখানে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। যারা কম মেধাবী তারা কোটা নিয়ে ভালো চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই কোটামূলক বৈষম্য দূর করা হোক। সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা মুক্ত করা হোক।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুল বলেন, আমরা কোটা পদ্ধতি এ বাংলার জমিনে চাই না। কোটা পদ্ধতির ফলে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয় না। মেধার মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হোক। আমাদের এ আন্দোলন শুধু আমাদের জন্য, এ আন্দোলন আমাদের পরবর্তী সব শিক্ষার্থীর জন্য। সারা দেশে কোটা পদ্ধতি বাতিল নিয়ে আন্দোলন হলেও সরকার নিশ্চুপ কেন তা আমি জানি না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

শুনানি হয়নি পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আপিলের নির্দেশ আদালতের
ছাত্র ধর্মঘটের ডাক
- আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৪ ০৩:২০:০৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৪ ০৩:২০:০৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ