ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইউজিসির বিপুল আমদানিতেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল মুক্তিযোদ্ধা তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে অনিয়ম এ সরকারও কুমিল্লা থেকে খুনের ইতিহাস শুরু করেছে-শামসুজ্জামান দুদু যুব সমাজ দেশে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-জিএম কাদের ট্রাম্পের শুল্কনীতির অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে পাচার অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ২৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ বছরেও ফেরেনি রিজার্ভ চুরির অর্থ কারাগার থেকে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয় ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি না-মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ
বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বাড়ছে পানি ডুবছে জনপদ

  • আপলোড সময় : ০২-০৭-২০২৪ ০৯:২০:১৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৭-২০২৪ ১০:২২:২৫ অপরাহ্ন
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বাড়ছে পানি ডুবছে জনপদ
তৃতীয় দফায় বন্যার কারণে আতঙ্কে নিম্নাঞ্চলের মানুষ
* নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষ শঙ্কায়
* আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা

ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের অধিকাংশ নদ-নদীতে বাড়ছে পানিটানা বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছেতলিয়ে গেছে অনেক অঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকাএরমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছেএদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বেসামরিক প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেনতিনি এ সময় বলেন, আগস্ট মাসে সারাদেশে বন্যার আশঙ্কা রয়েছেওই সময় থেকে দেশে টানা বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার প্রবণতা রয়েছেবন্যার প্রভাব ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে হবেসাম্প্রতিক বন্যায় এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই ধেয়ে আসা তৃতীয় দফার বন্যার কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেনএছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের মানুষকারণ বর্ষা এলেই উত্তরের জনপদ রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষের শঙ্কা বাড়েবিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওসব নদ-নদীর দুইপাড়সহ চরাঞ্চলের বসিন্দারাশুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এবারো বর্ষা ঘনিয়ে আসায় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তাদেরউত্তরাঞ্চলের জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারপ্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও ফসল হারাতে হয় এসব নদ-নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদেরআগামী ২৪ ঘণ্টায় অতিবৃষ্টি এবং উজানের ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র
প্রায় এক মাস সময়ের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেটটানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছেটানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরেরও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছেটানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে অনেক অভ্যন্তরীণ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেপানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষনতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্কপার্বত্য জেলা বান্দরবান ও মধ্যাঞ্চল শেরপুরের বিভিন্ন নদীতেও পানি বাড়ছেঅন্যদিকে পার্বত্য জেলাগুলোর কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কার কথা জানানো হয়েছেগতকাল মঙ্গলবার ভোরে খাগড়াছড়ির আলুটিলার সাপমারায় পাহাড় ধসে ঢাকা-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে
সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটে জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও অনেক উপজেলা থেকে পানি নেমে গেছেনদনদীর ১০ পয়েন্টের মধ্যে কেবল কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ছাড়া অন্যগুলোতে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যায়কিন্তু গত রোববার রাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছেবিশেষ করে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টেও পানি আবার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছেএছাড়াও সুরমার সিলেট পয়েন্টে, কুশিয়ারার অমলশীদ, শেওলা ও শেরপুর এবং লোভা, সারি, ডাউকি ও গোয়াইনসারি নদীর পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি পানি প্রবাহিত হচ্ছেগতকাল মঙ্গলবার সিলেটের বিভিন্ন নদীর ১০ পয়েন্টের মধ্যে চারটির পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছেসুরমা নদীর গোলাপগঞ্জ এলাকা, জৈন্তাপুরের বড়গাঁঙ নদী, পিয়ান ও সারি নদীর বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়ে লোকালয়ে ঢুকতে দেখা গেছেদুদিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছেসিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার নদ-নদীতেও পানি বাড়ছেদুই জেলার নদী ছাড়াও আবার পানি বাড়ছে গ্রামীণ এলাকায়সকালে অনেক গ্রামীণ রাস্তা আবার তলিয়ে গেছে, পানি উঠছে বাড়িঘরেএতে আবার বন্যার মুখে পড়েছেন এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ
সিলেটে এর আগে ২৭ মে আগাম বন্যা দেখা দেয়দুই সপ্তাহ স্থায়ী ওই বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষপ্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন ফের বন্যা দেখা দেয় সিলেটেবিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোর থেকে ভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকাএই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়েএতে সিলেটের সব উপজেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েতবে গত সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানিএবার দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগেই গত সোমবার থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছেইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা তলিয়ে গেছেটানা তিন দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারাতলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিঅনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে পাঁচটি নদীর পানি ছয়টি স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছেএরমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছেচেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছেসেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছেতিনি বলেন, আগে থেকেই সিলেটের নদ-নদী ও হাওর পানিতে ভরাট হয়ে আছেফলে নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ঢলের পানি নামতে পারছে নাএ কারণে দ্রুত লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে
কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছেফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জনপদ ফের তলিয়ে গেছেতৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা, দরবস্ত ও ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারাএসব এলাকায় অনেকেই নতুন করে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেনজৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, তৃতীয় দফায় ভারি বর্ষণে জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আগের আকার ধারণ করেছেউপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছেযেসব ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবেসিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছিলতবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছেসিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বৃষ্টির পানি যাতে না জমে সে জন্য কাজ করছেন
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২৫ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছেবৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারেতবে শুধু সিলেট সুনামগঞ্জেই নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছেরংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু কিছু এলাকায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছেআজ বুধবার থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবেসব মিলিয়ে সামনের এক সপ্তাহ দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে নাভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছেগতকাল কাউনিয়ার তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়গত দুদিনের বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে গাইবান্ধার প্রধান ৪টি নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছেসেখানকার তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছেতবে ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছেটানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার প্রধান নদী উব্ধাখালী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছেএছাড়া সোমেশ্বরী ও কংশের পানিও বেড়ে চলেছে
এছাড়া আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য উল্লেখ করে আরও জানানো হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছেআগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারেসতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতলও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারেএছাড়া গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারেআগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারেআগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারেএদিকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের মানুষকারণ বর্ষা এলেই উত্তরের জনপদ রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষের শঙ্কা বাড়েবিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওসব নদ-নদীর দুইপাড়সহ চরাঞ্চলের বসিন্দারাশুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এবারো বর্ষা ঘনিয়ে আসায় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নিয়ে তাদের দিন কাটছে তাদেরউত্তরাঞ্চলের জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারপ্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও ফসল হারাতে হয় এসব নদ-নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের
তবে চারটি প্রধান নদ-নদীর মধ্যে শুধু ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারে ভাঙনরোধে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চলমানকিন্তু তিস্তায় প্রকল্প নেয়া হয়নিযে কারণে এ বছর তিস্তা পারের বাসিন্দারা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছেপানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতি বছর বন্যায় প্রথম আক্রান্ত হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী, গঙ্গাচড়া সদর এবং গজঘণ্টা ইউনিয়নএর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গার্নারপাড়, বিনবিনার চর, শঙ্করদহ, পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলি, বাঘেরহাট, চর ঈশ্বরপুর, জয়রাম মৌজা, মর্নেয়া, রমাকান্ত এবং সারাইএছাড়া প্রতি বছর তিস্তা নদীর পানিতে কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, নিচপাড়া, তালুকশাহবাজ, ঢুসমারা এবং হরিশ্বর গোপিভাংগা; টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগনাই, হযরত খাঁ; হারাগাছ ইউনিয়নে চর নজিরদহ শহীদবাগ এবং চর নজিরদহ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।  অথচ বর্ষা পুরোপুরি শুরুর আগে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মেরামত করলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কম হতোসূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষায় অনেক আগে স্থায়ীভাবে একটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছেবর্তমানে চলমান রয়েছে বাম তীর রক্ষাকাজওব্রহ্মপুত্রের শুধু ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় তীর রক্ষার কাজ করা হলেও পর্যায়ক্রমে নদের দুই তীর রক্ষা করার পরিকল্পনা করেছে পাউবোতাছাড়া গত বছর থেকে চলমান ধরলা নদীর তীর রক্ষার কাজওএরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজফলে ধরলা নদীর ভাঙন প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে বলে আশাবাদী পাউবোএকইভাবে দুধকুমারেও চলমান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজকয়েকটি গ্রুপ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করা হচ্ছেদুধকুমারেও শেষ হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজতবে এসব নদ-নদীর দুই পাড় ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ব্রহ্মপুত্রের মাঝে ছোট ছোট চর ও দ্বীপগুলো রক্ষায় কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নিতিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনার কারণে শুধু তিস্তার তীর রক্ষায় কোনো প্রকল্প নেয়নি সরকারএ কারণে গত বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের ভাঙন কমে গেলেও ভেঙেছে তিস্তাতবে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছিল পাউবোবর্তমানে তিস্তা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী, সিন্দুর্ণা, ডাউয়াবাড়ী, পাটিকাপাড়া, সিঙ্গিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার, ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, পঞ্চগ্রাম ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডকিছুকিছু এলাকায় বালির বাঁধ ও ব্লক দেয়া হলেও পুরোপুরি নদী শাসন না থাকায় প্রতি বছর বন্যায় নদীগর্ভে চলে যায় ফসলি জমি ও বসতভিটাভাঙন রোধে পাউবোর আগাম কোনো প্রস্তুতি না থাকায় নদীপারের বাসিন্দারা শঙ্কায় রয়েছেনতাছাড়া তিস্তা নদীতে পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর কমবেশি ভাঙন অব্যাহত রয়েছেএদিকে এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের স্থায়ী তীর রক্ষায় প্রকল্প চলমান থাকলেও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশায় তিস্তায় কোনো স্থায়ী প্রকল্প নেয়া হয়নিএ কারণে বিগত বছরের মতো এবারো ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কথা রয়েছেতবে আগামীতে অন্যান্য নদ-নদীর মতো তিস্তায়ও স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছেপ্রকল্প পাস হলে কাজ শুরু করা হবে
অন্যদিকে রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলামও স্বীকার করেন তিস্তার ডানতীর রক্ষা বাঁধের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণএরমধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার গার্নারপাড় এবং মর্নেয়ায় বাঁধের কিছু পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণএছাড়া কাউনিয়া উপজেলার গদাই ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তা নদীসংলগ্ন তীরে ভাঙন রয়েছে
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স