চামড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি রানি পণ্য। জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি, রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজনের নিরিখে এটি একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত। তবে দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক গুণগত মানের অভাবে ব্যর্থতার চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছে এ শিল্প খাত। এতে পর্যায়ক্রমে চামড়া রফতানির আয় কমে যাচ্ছে। অথচ চামড়া শিল্পের প্রধান এ কাঁচামাল চামড়ার সহজলভ্যতা থাকলেও এর যথাযথ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এমনকি দেশের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়ার সরবরাহ থাকলেও বাংলাদেশ রফতানি বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। সাত বছর ধরে এই খাতের রফতানি একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিকে দাম না পাওয়ায় প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে চামড়াপণ্য রফতানির জন্য বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ যে চামড়া একসময় দেশের তিনটি প্রধান রফতানি পণ্যের একটি ছিল। আজ বিশ্বব্যাপী রফতানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারানো বা দেশের ক্রমবর্ধমান ভোগের কারণে সেই গৌরব ম্নান হয়ে যাচ্ছে। দক্ষ জনবল ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে চামড়া শিল্প খাত। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য কম দাম পাচ্ছে পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে স্থাপিত ইটিপি এখনও পূর্ণাঙ্গ পরিবেশবান্ধবভাবে কাজ করছে না এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ঠিক হয়নি। এজন্য, বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাম কম পাচ্ছে। চামড়া খাতের বিকাশ এবং স্থায়ীকরণের জন্য ২০০ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে দীর্ঘ ১৭ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এতে পর্যায়ক্রমে চামড়া রফতানির আয় কম হচ্ছে এবং কাঁচা চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে। চামড়া, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। অথচ পরিবেশ দূষণ, অর্থ সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে চামড়া শিল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে তা মেনে নেয়া যায় না। এ শিল্পকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। চামড়া শিল্পের মানোন্নয়নে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে আরও লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন, চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, চামড়া সংরক্ষণে ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আয়ের খাতগুলোর যথাযথ তত্ত্বাবধান জরুরি। সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
![](https://dainikjanata.net/public/ads/65fd544197946.png)