চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের মোহাম্মদিয়া ও রিজওয়ান কমপ্লেক্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও কয়েকজন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৪০ মিনিটে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নুরুল আলম আশিক। আগুনে নিহতরা হলেন সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম গাড়িয়ান টাঙ্গা এ ও সিয়া ইউনিয়নের শামসুল আলমের ছেলে মো. রিদুয়ান (৪৫) ও সাতকানিয়া উপজেলার কুতুবপাড়া মিজ্জারকিল বাংলাবাজার এলাকার বেঠা মিয়ার ছেলে মো. শাহেদ (১৮)। অপরজনের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। লামার বাজার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. আলীবলেন, আগ্রাবাদ, লামারবাজার, নন্দনকানন ও চন্দনপুরাসহ চারটি স্টেশনের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ভোর সাড়ে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নুরুল আলম আশিকবলেন, কোতোয়ালি থানাধীন রিয়াজুদ্দিন বাজার রিজওয়ান কমপ্লেক্স ও মোহাম্মদিয়া প্লাজায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে মার্কেটের পাঁচতলার বাসা থেকে আগুনের ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে না পারায় অজ্ঞান হওয়া পাঁচ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বাকি দুজন নারীকে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল কুতুবপাড়া এলাকায় মো. শাহেদ ও মো. ইকবাল দুই বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে চলাফেরা তাদের। শাহেদ চলে আসেন শহরে। বন্ধুত্বের টানে ইকবালও চলে আসেন। শাহেদ চাকরি নেন রিয়াজুদ্দিন বাজারের আজওয়ার টেলিকমে। ইকবালের চাকরি শহরের অন্য জায়গায়। গতকাল শুক্রবার মার্কেট বন্ধ হলে গত বৃহস্পতিবার রাতেই দুই বন্ধু একত্র হন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাদের মৃত্যুও হলো একসঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রিয়াজুদ্দিন বাজারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুন মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মোহাম্মদীয়া মার্কেট। এ সময় কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে শাহেদ ফোন করেন দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়াকে। তখন সময় রাত পৌরে ২টা। ফোন পেয়েই দোকান মালিক শাহেদকে নির্দেশনা দেন- সে যেন সিঁড়ি বেয়ে ছাদের উপরে উঠে যায়। কিন্তু ধোঁয়ায় চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যায় শাহেদের। সবদিকে অন্ধকার। পরে আবারও ফোন দেন শাহেদ। তখন সাজ্জাদ পরামর্শ দেন-চোখে মুখে কাপড় মুড়িয়ে হলেও যেন ছাদে দৌড়ে চলে যায়। কিন্তু নিরুপায় শাহেদ। নিজেকে বাঁচাতে হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজে নেন টয়লেট। সেখান থেকে মালিককে ফোন দিয়ে জানান- ‘আমি টয়লেটে। আমার জন্য দোয়া করবেন’। কালেমা পড়তে পড়তে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন শাহেদ। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় চলে গিয়েছিলেন দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়া। আগুন লাগার খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে ছুটে আসেন রিয়াজুদ্দিন বাজারে। ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ধোঁয়ার কারণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি সাজ্জাদ মিয়া। অন্য ভবনের ২য় তলা দিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করেন তিনি। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখেন- টয়লেটে পড়ে আছে শাহেদের নিথর দেহ। সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়া বলেন, যখন আমি তার ফোন পেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে আমার নির্দেশনা ছিল- সে যেন ছাদে চলে আসে। দোকানের সব গলিই তার মুখস্থ। চোখ বন্ধ করেও সে ছাদে চলে আসতে পারবে- এমন ধারণা ছিল আমার। কিন্তু পরে আমি সাতকানিয়া থেকে ছুটে এসে দেখলাম, ধোঁয়ার কারণে হাঁটাচলা তো দূরের কথা চোখের জ¦ালা যন্ত্রণায় টিকে থাকাটায় দায় হয়ে গেছে। চোখেমুখে কাপড় মুড়িয়ে দোকানের ভেতরে গিয়ে দেখি, সে টয়লেটের মধ্যে পড়ে আছে। সর্বশেষ যখন আমার সঙ্গে কথা হয় তখন সে শুধু কালেমা পড়ছিল। এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার সকালে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের সমবেদনা জানান মেয়র। দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ জরুরি ভিত্তিতে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন মেয়র এবং চিকিৎসারতদের যাতে কোন অসুবিধা মোকাবিলা করতে না হয় সেজন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। মেয়র নিহতদের জন্য শোক জানান এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata