অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নতুন কমিটি। এই কমিটি ঘোষনার মধ্য দিয়ে নতুন আঙ্গিকে থানা-ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজাতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ফলে এবার কমিটিতে কোনোভাবেই স্থান পাচ্ছেন না ‘বিতর্কিত’ আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে এবারের কমিটিতে কপাল খুলছে ক্লীন ইমেজের সাবেক ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের। এছাড়াও কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন অন্তত ডিএসসিসি-ডিএনসিসির ৩৫ জন কাউন্সিলর। জানা গেছে, গত ১৬ জুন রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি থানা-ওয়ার্ড কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। প্রস্তাবিত এই কমিটি জমা দেয়ার পর কয়েক দফা যাচাই-বাছাইও করা হয়েছে। এবার চূড়ান্ত অনুমোদনের পালা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে নগর নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্র এ বিষয়ে আবার বসবে কিনা তা চূড়ান্ত নয়। ফলে যে কোনো সময় কমিটি ঘোষণা হতে পারে এমন ধারণা করছেন থানা-ওয়ার্ডে পদ প্রত্যাশীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। তবে এবার ক্লিন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একঝাঁক তরুণ সাবেক ছাত্রনেতাদের সামনে যেমন কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনে পদ লাভের হাতছানি, তেমনি গত ১০ বছরে বিতর্কিত ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যর্থ অনেক কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাই পদ হারানোর ভয়ে এখন আতঙ্কিত। সব মিলিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, সরকারি দলটির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত (উত্তর-দক্ষিণ আ’লীগ) দলটিতে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে মেরুকরণ। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর সবশেষ সম্মেলন হয়। সেদিন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দুই বছর পরেও তা হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীনের ২৬ থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে রয়েছে ২৫ থানা ও ৭৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড। যার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। কোনো কোনো ওয়ার্ড কমিটির বয়স ১০ বছরের বেশি। কমিটিতে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটা তাদের যোগ্যতার কারণে করা হয়েছে, তাদের ইতিবাচক সাংগঠনিক সক্ষমতার কারণে করা হয়েছে। বিতর্কিত কাউকে আমরা রাখিনি। ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া কাউকেও রাখা হয়নি। তবে বিলম্ব হলেও এবার কমিটি নিশ্চিত ঘোষণা হচ্ছে। এই কমিটির মাধ্যমেই দুই মহানগর আরও উজ্জীবিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগর আ’লীগের একাধিক সুত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব করা কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধিভুক্ত থানা কমিটির অন্তত ১৫টিতে ও দক্ষিণে অন্তত ২০জন স্থানীয় কাউন্সিলররা শীর্ষ পদে আসতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন যাবত দলের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের ভূমিকা রয়েছে, সেহেতু প্রায় ১৫টি থানায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রানিং কাউন্সিলররা আসতে পারেন। তবে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন না বজলুর রহমান। তিনি বলেন, এখন পদ পাওয়ার জন্য তারা সবাই খুব সক্রিয়। কিন্তু পদ পাওয়ার পর তাদের সেই সক্রিয়তা থাকবে না। কারণ তারা কাউন্সিলর। সে দিকে তাদের ব্যস্ততা থাকে। একই সঙ্গে ২৬টি সাংগঠনিক থানার প্রায় ১৫টিতেই কাউন্সিলরা শীর্ষ পদে আসার বিষয়টি অনেকটাই চোখে পড়ার মতো বলে মনে করছেন অনেকেই। ঢাকা উত্তরের থানা সাজাতে সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের রাখা হয়েছে বলে জানান শেখ বজলুর রহমান। রয়েছে নতুন ও পুরোনোদের সমন্বয়। তিনি জানান, থানা কমিটি গঠন করতে বিতর্কিত কাউকে জায়গা দেয়া হয়নি।
তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর আগের কমিটিতেও শীর্ষ পদে ছিলেন, আসন্ন থানা কমিটিতে কাউন্সিলরদের জায়গা শক্ত থাকবে এরইমধ্যে আলোচনা উঠেছে। আছে ভূমি-দস্যু-সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরাও। তাদের কমিটিতে শেষ পর্যন্ত জায়গা দেয়া হলে আন্দোলনে নামতে পারেন দলের পদ-পদবী প্রত্যাশী ত্যাগী ও ক্লীন ইমেজের সাবেক-বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতারা। যারা বিগত দিনে থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মোটা দাগের অর্থ ব্যয় করেছেন। এই নেতারা বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী অপপ্রচার-আন্দোলনে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াত থেকে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বনে যাওয়া কাউকে কমিটিতে রাখা হলেও কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে ক্লীণ ইমেজ ও যোগ্যদের জায়গা দেয়া হয়েছে। নতুন ও পুরনোদের সমন্বয়ে থানা কমিটি প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিতর্কিত-হাইব্রীড কাউকে থানা-ওয়ার্ডের কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়নি। কমিটি আমরা আরও অনেক আগেই জমা দিয়েছি। আমাদেরকে পরে আবার এটা নিয়ে বসতে বলা হয়েছিল। আমরা বসেছি। এখন কেন্দ্র থেকে ঘোষণা হবে। তার আগে আমাদের সঙ্গে বসতেও পারে, নাও বসতে পারে। তিনি আরও বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নতুন ও পুরনোদের রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বিতর্কিত কাউকে রাখা হয়নি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কেন্দ্রীয় অনুমোদনের অপেক্ষায় দুই মহানগর আ’লীগের কমিটি
কপাল পুড়ছে বিতর্কিত আ’লীগ নেতাদের
- আপলোড সময় : ২৭-০৬-২০২৪ ১০:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-০৬-২০২৪ ১০:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ