ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গাজায় ইসরায়েলি নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ নড়াইলে সৌদি প্রবাসী হত্যা হামলা-ভাঙচুরের পর পুরুষশূন্য গ্রাম প্রেস সচিবের মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলছে ভারত রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘কাফন মিছিল’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা অনৈক্যের সুর রাজনীতিতে বাড়ছে অবিশ্বাস দলিতদের পরিবর্তনে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ- আনু মুহাম্মদ মালয়েশিয়ায় অভিযানে ১৬৫ বাংলাদেশি আটক জাবির থিসিসের ফলাফল বিপর্যয়ের অভিযোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি চীনের অর্থায়নে পঞ্চগড়ে হাসপাতাল নির্মাণের দাবি যশোরে আগুনে পুড়লো ফার্মের ৪৪ হাজার মুরগি ঈদের পর থেকে বাজারে সবজির দাম বাড়তি চার মাসের সন্তানকে বিক্রি করে মোবাইল কেনেন মা! মানহীন কিন্ডারগার্টেনে ধ্বংস শিশুর ভবিষ্যৎ টিসিবির জন্য কেনা হবে ৫৪২ কোটি টাকার তেল সৌদি আরব-মরক্কো থেকে ৪৬৬ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৫ জন দুদকের হাতে গ্রেফতার টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার প্রতিবাদ করায় ইলিয়াস আলী গুম হন- রিজভী কনটেইনারবাহী জাহাজ চলবে দুই বন্দরে
এমপি আনার হত্যা

এবার অনেকের ভাগ্য ঝুলছে পুকুরে ফেলা মোবাইলে

  • আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৪ ১০:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-০৬-২০২৪ ১০:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
এবার অনেকের ভাগ্য ঝুলছে পুকুরে ফেলা মোবাইলে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে ‘গ্যাস বাবু’র পুকুরে ফেলে দেওয়া মোবাইল উদ্ধারে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি দল ঝিনাইদহে যায়। শহরের পায়রা চত্বরের একটি পুকুরে জেলে নামিয়ে জাল ফেলে মোবাইল ফোন উদ্ধারে তল্লাশি চালানো হয়। এরপর শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় অরেকটি পুকুরে তল্লাশি চালানো হয়। তবে তিনটি মোবাইল ফোনের একটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছে তিনটি মোবাইল ফোন। হত্যাকাণ্ডের পর অন্যতম অভিযুক্ত শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয় এসব মোবাইলে। তিনটি মোবাইল ফোনই পুকুরে ফেলেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ডিবির জালে গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নির্দেশে মোবাইল তিনটি দুটি পুকুরে ফেলে দেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি। মোবাইলগুলো উদ্ধার করা গেলে ফরেনসিক রিপোর্টে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক তথ্য। যাতে ফেঁসে যেতে পারেন মিন্টুসহ অনেকে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, যদি মোবাইল তিনটি উদ্ধার করা যায় তবে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোবাইলে অনেক ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ মিলবে। আনার হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মোবাইল তিনটিতে গ্যাস বাবু যাদের সঙ্গে মেসেজ আদান-প্রদান কিংবা কথোপকথন করেছেন সেগুলো ফরেনসিকের মাধ্যমে জানা সম্ভব হবে। আর এসব তথ্য-প্রমাণে ফেঁসে যেতে পারেন সাইদুল করিম মিন্টুসহ আরও একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা। আর যদি মোবাইল উদ্ধার না করা যায় তবে অনেক তথ্য-প্রমাণ মিলবে না। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি আনারকে ১৩ মে হত্যার পর কিলার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া দেশে ফিরে আসেন ১৫ মে। ১৬ মে রাতে গ্যাস বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিমুল। এক পর্যায়ে তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মিটিং করেন। তাদের মধ্যে এমপি আনার হত্যার ছবি আদান-প্রদান করা হয়। ১৭ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্যাস বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ ও মেসেজ আদান-প্রদান হয়। আনার হত্যা ও পরবর্তীসময়ে টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়েও আলাপ হয় মোবাইলে।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস বাবুকে গ্রেফতারের পর শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ছবি আদান-প্রদানসহ ও অন্যান্য বিষয় স্বীকার করেছেন বাবু। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো কোথায়? শুরুতে জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু জানান, তার মোবাইলগুলো ঝিনাইদহ শহরের টিকেসি কলেজের সামনে রাস্তার মোড় থেকে পায়রা চত্বর রাস্তার মোড়ে যাতায়াতের সময় হারিয়ে গেছে। এরপর তিনি জিডি করেন। পরবর্তীসময়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, তার তিনটি মোবাইল ফোন শহরের দুটি পুকুরে ফেলা হয়েছে। আর এ কাজটি করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।
তদন্ত সূত্র জানায়, গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইলের মধ্যে দুটি ফেলা হয়েছে পায়রা চত্বর সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের পেছনের একটি পুকুরে, আরেকটি ফেলা হয়েছে স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি পুকুরে। মোবাইলগুলো উদ্ধারে ডিবির টিম বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহে যাবে। ওই মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযানের জন্য ১০ কার্যদিবস সময় দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার মোবাইল উদ্ধারে ডিবির টিম ঝিনাইদহে যেতে পারেন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান ফেলে দেয়া তিনটি মোবাইলের খোঁজে অভিযান চালানোর জন্য গ্যাস বাবুর পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুও রিমান্ডের জোর দাবি জানান। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত বাবুর রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে হত্যাকাণ্ডে যোগাযোগ কাজে তার ব্যবহার করা তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দেন আদালত। বিচারক বলেন, আসামি বাবুকে ঝিনাইদহ জেলা কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মোবাইল ফোন তথা আলামত উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি হত্যাকাণ্ডে বের হয়ে আসতে পারে আরও অনেকের নাম। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্যাস বাবুর সঙ্গে আর কারা জড়িত ছিল তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বের হতে পারে। হত্যার পর আনারের ছবি তিনি কাকে কাকে পাঠিয়েছিলেন সেটাও জানা যাবে। এতে অনেকে ফেঁসে যেতে পারেন তদন্তের জালে। এজন্য মোবাইল ফোন তিনটি খুঁজে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গত ৯ জুন আসামি আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর ১৪ জুন তিনি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এদিন জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া এ মামলায় গত ৩ জুন সিলিস্তি রহমান ও ৪ জুন ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার এই তিন আসামিকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এছাড়া ১৩ জুন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এখন তারা সবাই কারাগারে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজীম। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আলামত উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালানো হবে। পানি থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদের কাজে লাগানো হবে। মোবাইলগুলো কেউ যেন সরিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন। এছাড়া অসংখ্য মেসেজ তারা তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে। না হলে গ্যাস বাবু মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন। মোবাইলগুলো পেলে মামলার তদন্তে অনেক সহায়তা হবে। সেজন্য মোবাইল উদ্ধার করা অনেক জরুরি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স