ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পাদিত চুক্তিগুলির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির গত সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেদিন রাত সাড়ে ৮টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি ভার্চুয়ালি ওই বৈঠক করে। ফখরুল বৈঠকের আলোচ্য বিষয় তুলে ধরে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি তার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। সভায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সেদেশের সঙ্গে দুটি চুক্তি, পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি নথি সই হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় সভায়। মির্জা ফখরুল বলেন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলির পানিবণ্টনের কোনো চুক্তি না করা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ না করা হলেও একতরফাভাবে ভারতকে সব সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ, ভারতের ইনস্পেস এবং বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা ইত্যাদি সমঝোতাগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। ভারতকে সব প্রকার সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং এটা ম্যান্ডেটবিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বহিঃপ্রকাশ। এই অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে। স্থায়ী কমিটি এই চুক্তিগুলিকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। ফখরুল জানান, সভার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত সংবাদ সম্মেলন আগামী ২৮ জুন বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সভায় সম্প্রতি মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জলসীমায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ফলে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগযোগ বন্ধ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, এই অবৈধ সরকারের নতজানু পরারষ্ট্রনীতির কারণেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার হুমকির মুখে পড়ছে। এ বিষয়ে অবৈধ সরকার জনগণকে সুস্পষ্টভাবে কোনো তথ্য সরবরাহ করছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটি অনতিবিলম্বে মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তে গুলিবর্ষণ বিষয়ে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। ফখরুল বলেন, সভায় বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। সভা মনে করে, কিশোরগঞ্জে হাওরের মাঝখানে সড়ক নির্মাণ এবং বেশ কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত না হওয়ার কারণে এই ভয়াবহ দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির তলে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ সীমাহীন দুদর্শার মধ্যে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারের কোনো ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায়নি। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সভায় দাবি জানানো হয়। বিএনপির একটি ত্রাণ টিম অতিদ্রুত সিলেট সফর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান মহাসচিব। তিনি বলেন, সভায় গত ১ মাসে ওষুধের মূল্য ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় এই মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করা হয়। অবিলম্বে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যহ্রাসের জোর দাবি জানানো হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া নিয়ে আইনমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্যই হলো তাকে (খালেদা জিয়া) রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। সে কারণেই তাকে একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। এটি একেবারই মিথ্যা মামলা। এর সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস। তখন ডাক্তাররা বলেছিলেন- লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই, যা বাংলাদেশের সম্ভব নয়। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকারের কোনো কৃতিত্ব নেই জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যা করেছি আমরাই করেছি, পরিবার-দল করেছে। আমরা বিদেশ থেকে ডাক্তার নিয়ে এসেছিলাম। এটি সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান, যেখানে তার সঠিক চিকিৎসা হবে, সেখানে পাঠানো। তিনি বলেন, পরিবারের আবেদনে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা হয়েছিল। ফাইনালি আবেদনটি যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়, প্রধানমন্ত্রী তখন রিজেক্ট করেন। বিভিন্ন মিশনে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তারা চেষ্টা করেছে। তারা বলেছে, স্যরি, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শুনবেন না। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে যা করা প্রয়োজন, বিএনপি তা-ই করবে। একটি কথা পরিষ্কার করে বলি, আমাদের আন্দোলন কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এ সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতের কাছ থেকে দাবি আদায়ে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হচ্ছে। পানির হিস্যা নিয়ে আলোচনা না করেই চুক্তি করে যাচ্ছে। বিএনপি ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে- সরকারি দলের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা বিক্রি হলে তো সরকারেই থাকতাম। সরকারপ্রধান তো আগেই বলেছেন, আমি ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। উজাড় করে দিয়ে তো তিনি রেজাল্ট পাচ্ছেন। এবারও সব উজাড় করে দিয়ে এসেছেন, আবার রেজাল্ট পাবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে : বিএনপি
- আপলোড সময় : ২৫-০৬-২০২৪ ১০:২৭:২৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৬-২০২৪ ০১:৫৬:৩১ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ