সংকটে দেশের রাবার শিল্প
- আপলোড সময় : ২৩-০৬-২০২৪ ১০:৪৯:২৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৬-২০২৪ ১০:৪৯:২৩ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার
রপ্তানির সুযোগ থাকলেও বিদেশ থেকে বেপরোয়াভাবে রাবার আমদানির ফলে ও ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগান মালিকরা সস্তা দরে শিট বিক্রি করায় দেশে উৎপাদিত পণ্যের বাজার দর কমে যায়, ফলে গত কয়েক বছর ধরে সংকটে ভুগছিল দেশের রাবার শিল্প। এরমধ্যে দেশের রাবার বাগানগুলোর এক তৃতীয়াংশের বেশি গাছের অর্থনৈতিক জীবনচক্র শেষ হয়ে যাওয়ায় সে সংকট আরও ঘনীভূত হতে চলেছে। জানা যায়, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) অধীন রাবার বাগান রয়েছে ১৮টি। বাগানগুলোতে রাবার গাছ রয়েছে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার। একটি গাছের অর্থনৈতিক জীবনচক্র ধরা হয় ৩২ বছর। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ গাছের অর্থনৈতিক জীবনচক্র শেষ। রাবার প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রগুলোও পুরোনো হয়ে গেছে। নতুন বাগান সৃজন ও যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন না করলে উৎপাদন কমে হুমকিতে পড়বে এ শিল্প। বাড়তে থাকবে সরকারের লোকসান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ১৯৮০-৮১ থেকে ১৯৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩২৮ হেক্টর অনুর্বর, পতিত, অন্য খাদ্যশস্য ও ফসল উৎপাদনে অনুপযোগী জমিতে রাবার চাষের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেয়। যার মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমি সরকারি, অবশিষ্ট জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিএফআইডিসি ১৯৮০-৮১ সাল থেকে উচ্চ ফলনশীল রাবার চারা রোপণ শুরু করে এবং ১৯৯৭ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট ও মধুপুরের ১৩ হাজার ২০৭ হেক্টর জমিতে ১৬টি রাবার বাগান সৃজন করে। বর্তমানে বিএফআইডিসির ১৮টি বাগানের ৩৮ লাখ ৭৮ হাজারটি রাবার গাছের মধ্যে ২০ লাখ গাছ উৎপাদনশীল। বিএফআইডিসি তাদের উৎপাদিত রাবার নিলামে বিক্রি করে। রাবার উৎপাদন ও বিপণনে বিএফআইডিসি ছাড়া বাংলাদেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৩ হাজার ৩শ একর ভূমিতে ১১টি রাবার বাগান রয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবানের ৩২ হাজার ৫৫০ একর জমি এক হাজার ৩০২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইজারা দেওয়ার পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা ২০ হাজার ৮শ একর জমিতে রাবার চাষ করেছে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এক হাজারের বেশি বাগান। বর্তমানে রাবার গাছ অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হারানোর প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, অনেক রাবার গাছ অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হারিয়েছে। এ ছাড়া রাবার প্ল্যান্টও অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। ফলে কাঁচামাল ও প্রসেসিং দুদিক দিয়েই সমস্যা। এ সমস্যা চলতে থাকলে শিল্পটি হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন। প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে আমরা পিইসি সভাও করেছি। কিছু কোয়ারি ও কিছু সুপারিশ আছে। এগুলো কমিশনে এলে প্রকল্পটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। করপোরেশনের নিজের টাকা আছে, এ ছাড়া আমরাও প্রকল্পে কিছু টাকা দেবো। বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন জানায়, এটিকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ম্ভর করপোরেট প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণের জন্য ১৮টি রাবার বাগান উন্নয়ন, রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট আধুনিকায়নের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা রাবার উৎপাদন ও বিপণনের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হিসেবে ১০টি আধুনিক রিবড স্মোকড শিট (আরএসএস) রাবার প্রসেসিং কারখানা স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ১০ লাখ নতুন রাবার গাছ প্রতিস্থাপন, আধুনিক রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রাকৃতিক রাবারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচটি রাবার টেস্টিং ল্যাব, পাঁচটি এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন, রাবার সংরক্ষণের জন্য ১০টি ওয়ার হাউজ গোডাউন নির্মাণ, হ্যাভি ডিউটি স্কেল ও ফর্ক লিফট সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কাটা, পুনরায় বাগান সৃজন, গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা রাবার উৎপাদন ও আধুনিকায়ন করা হবে রাবার প্রসেসিং প্ল্যান্ট। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ম্ভর করপোরেট প্রতিষ্ঠানে উন্নীতকরণ এবং দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। সার্বিক বিবেচনায় এ শিল্প রক্ষায় নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কর্তন, পুনর্বাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নতুন চারা রোপণ, উন্নতমানের প্ল্যান্ট স্থাপন, অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কাটা, নতুন বাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন করা হবে। ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি সময় থেকে ২০২৭ মেয়াদে রাবার শিল্প ঢেলে সাজাবে বিএফআইডিসি। প্রকল্পটি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, কক্সবাজারের রামু, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, হবিগঞ্জের মাধবপুর, বাহুবল, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইলের মধুপুর, শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের যেসব স্থানে রাবার চাষ হয় সেসব এলাকা থেকে সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ রাবার উৎপাদনের জেলা চট্টগ্রাম। সেখান থেকেও পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের দাবি রাবার খাত বন্ধ হলে শ্রমিকদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ