ঢাকা , রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ব্যক্তিগত সাফল্য দিয়ে ডি’অর জেতা সম্ভব নয় : কেইন স্পেনের কাছে পাত্তা পেলোনা জর্জিয়া এস্তেভাওয়ে মুগ্ধ আনচেলত্তি প্রথমবারের মতো আফ্রিকান দেশের বিপক্ষে জয় পেলো ব্রাজিল আরও একটি ক্লোজ ম্যাচ, হেরে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ রুতুরাজই থাকছেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক ভারতকে গুঁড়িয়ে কলকাতায় শেষ হাসি হাসলো প্রোটিয়ারা আবুধাবি টি-টেন লিগে দল পেলেন তাসকিন সরকার জাপাকে হাত-পা বেঁধে সাঁতার প্রতিযোগিতায় নামাতে চায়-কাদের নতুন পোশাকে পুলিশ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কাদিয়ানিদের বিষয়ে সংসদে আলোচনা-সালাহউদ্দিন ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৯২ রোগী ১৪-২৪ এর মতো নির্বাচন হলে জাতির ভাগ্যে চরম দুর্ভোগ-পরওয়ার ১৩৩ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ গণফোরামের বন্ধু জরেজের বাসায় ২৬ টুকরা করা হয় মরদেহ দেশে তীব্র হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানির শঙ্কা নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না-আইজিপি একটা দল বিভেদ সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে-ফখরুল নতুন কুঁড়ির শিশুশিল্পীরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করবে-তথ্য উপদেষ্টা ৩ জনকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের সংবাদটি ভিত্তিহীন-প্রেসসচিব
কাল মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায় ঘোষণা

দেশজুড়ে শঙ্কা-সতর্কতা

  • আপলোড সময় : ১৬-১১-২০২৫ ০৩:৫০:০৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-১১-২০২৫ ০৩:৫০:০৯ অপরাহ্ন
দেশজুড়ে শঙ্কা-সতর্কতা
* আদালত পাড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা * ককটেল ও পেট্রোল বোমা হামলা ও আগুন সন্ত্রাসে উত্তপ্ত ঢাকা * রাজধানীজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের নিñিদ্র নিরাপত্তা * চলছে গোয়েন্দা নজরদারি, মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থানে ছাত্র-জনতা * শেখ হাসিনার রায় ঘিরে বিশৃঙ্খলার কোনো শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আগামীকাল ১৭ নভেম্বর সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। স্পর্শকাতর এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, যা জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গত চার দিনে প্রায় ৩২ যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে। এই অস্থির পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীতে গোয়েন্দাদের চলছে নজরদারী। মোড়ে মোড়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে ছাত্র-জনতা। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু সহিংস ঘটনা এই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন একটি এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যদিও এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন বিস্ফোরণ নগরবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। রায়কে সামনে রেখে রাজধানীতে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে। তল্লাশি চৌকি বাড়ানো হয়েছে এবং জনসমাগমের ওপর কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীতে কারো সন্দেহ হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে তল্লাশি। সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। রায়ের দিনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন উসকানিমূলক কার্যকলাপ বা বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন আদালতের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে শুধু ১২ নভেম্বরই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ৩২টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, পাশাপাশি ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় বহু বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বোমা হামলা ও নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ত বহু কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখায় হামলা এবং ঢাকা রেলস্টেশনে একটি ট্রেনের বগিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। শেখ হাসিনার রায় ঘোষণার দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে। গত বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিতে দেশবাসী একটি আতঙ্কের দিন পার করেছে। বিভিন্ন স্থানে বাস, মহাসড়ক, রেলপথ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগানোর পাশাপাশি গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক-মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ভয়ে বেশির ভাগ যাত্রী পরিবহনে যাতায়াত করেননি। যাত্রীর অভাবে দূরপাল্লার বাস চলাচল দেশের প্রায় ৩০০ রুটেই ছিল একেবারে সীমিত। গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পাঁচটি স্থানে গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষুব্ধ লোকজন লাঠিসোঁটা, রামদা, ঢাল ও সড়কি হাতে নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যান চলাচল বন্ধ থাকে। পদ্মা সেতু এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। দেশের আরো বেশ কিছু স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অঘোষিত ছুটি। বিশেষ করে স্কুলবাসগুলো চলেনি। এ ছাড়া অভিভাবকদের অনেকে আতঙ্কে সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি। অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্লাসের বদলে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়েছে। আশুলিয়ায় পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় বাসে আগুন দিলে চালকের মৃত্যু হয় ও মানিকগঞ্জে বাসে আগুন দেওয়ায় ঘুমন্ত চালক দগ্ধ হয়েছেন। পটুয়াখালী ও বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বরগুনায় একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়। হাসিনার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে । এতে মানুষও স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত। বিশেষ করে যানবাহনে চলাচল, সন্তানকে স্কুলের পাঠানোর ব্যাপারে মানুষ বেশি সতর্ক। ফলে আগামী রবি ও সোমবার ঘিরে মানুষের মনে উদ্বেগ রয়েছে। অফিস, কলকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়তে পারে। দেশে নতুন করে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হয় কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘিরে বিশৃঙ্খলার কোনো শঙ্কা নেই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পাঁচ দিন আগ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে তৎপর থাকবে এবং বড় ধরনের কার্যক্রম চলবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু নির্বাচনমুখী, তাই কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনের আগে বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা করা হবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে ৯ দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নামবে। নির্বাচনের আগে পাঁচ দিন ও নির্বাচনের দিনসহ পরবর্তী আরও তিন দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে। উপদেষ্টা বলেন, ইলেকশনের আগের পাঁচ দিন বড় ধরনের কার্যক্রম চলবে। আমাদের বর্তমানে সেনাবাহিনী মাঠে আছে ৩০ হাজার। ওই সময় ১ লাখের মতো সেনাবাহিনী, ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ, ৩৫ হাজারের মতো বিজিবি, ৫ হাজার নৌবাহিনী, ৪ হাজার কোস্টগার্ড, ৮ হাজার র?্যাব এবং প্রায় সাড়ে ৫ লাখ আনসার মাঠে থাকবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সন্দেহের সুযোগ নেই। নির্বাচন খুবই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার বিচারকাজ চলমান রয়েছে। রায় ঘোষণার দিনটিকে ঘিরে যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স